পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে প্রাণের দেখা পাবার সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু নাসার প্রধান বিজ্ঞানী বলেছেন, “পৃথিবী প্রস্তুত নয়”
নাসার প্রধান বিজ্ঞানী, ড: জিম গ্রীন বলেছেন, নাসা মঙ্গলগ্রহে জীবনের সন্ধান পাওয়ার কাছাকাছি রয়েছে কিন্তু পৃথিবী এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত নয়।
নাসা ও ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) থেকে দুটি রোভার ২০২১ সালের মার্চে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছানোর কয়েক মাসের মধ্যেই প্রাণের খোঁজ পেতে পারে। তিনি আরো বলেন, “এই আবিষ্কারটি ইতিহাসে নতুনধারা খুলে দিবে।”
এক্সোমার্স রোভার, যা ব্রিটিশ রসায়নবিদ রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিনের স্মরণে “রোজালিন্ড” নামকরণ করা হয়েছে, তা নমুনা সংগ্রহের জন্য মঙ্গল গ্রহের মাটিতে ৬.৫ ফুট গভীর পর্যন্ত গর্ত করবে। তারপর নমুনাগুলোকে গুঁড়ো করে জৈব বস্তু/পদার্থের খোঁজে একটি ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হবে।
ডক্টর গ্রীন এই প্রাথমিক আবিষ্কারকে ষোড়শ শতাব্দীতে জ্যোতির্বিদ নিকোলাস কোপার্নিকাসের দেওয়া “পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে” বিবৃতির সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, “এটি চিন্তা করার নতুন একটি ধারা তৈরি করবে।
আমি মনে করি না আমরা ফলাফলের জন্য প্রস্তুত। আমি এ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন কারণ আমি মনে করি আমরা এর সন্ধান পাওয়া এবং নতুন কিছু ঘোষণা দেবার খুব কাছাকাছি রয়েছি।” নাসার রোভার মার্স ২০২০ (Mars–2020) মঙ্গলের শীলা পরীক্ষার জন্য খনন করবে এবং তা টিউবে করে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে পাঠাবে– যা প্রথমবারের মতো মঙ্গল গ্রহের উপাদান এই গ্রহে নিয়ে আসবে।
ড: গ্রীন বলেন-“এরপর যা ঘটবে তা হলো কিছু সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের সেট। সেখানে জীবন কি আমাদের মতই? কিভাবে আমরা সম্পর্কিত? প্রাণ কি গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যেতে পারে নাকি এমন কোন পদ্ধতি আছে যা উপযুক্ত পরিবেশে প্রাণের উৎপত্তি ঘটায়– আমাদের মতো বা আমাদের মতো নয়, যে পরিবেশে আছে তার বিভিন্নতার উপর নির্ভর করে?”।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে গ্রহগুলোকে পূর্বে জনবসতিহীন বলা হতো, তাতে কোনো না কোনো সময়ে প্রাণের বিকাশ এর উপযুক্ত পরিবেশ থাকতে পারে। এই বছরের শুরুর দিকে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছিলেন মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের নিচে পানি প্রবাহিত হবার একটি বিস্তৃত ও সক্রিয় ব্যবস্থা থাকতে পারে।
নাসা মঙ্গল গ্রহের হিমবাহের দর্শনীয় ছবি প্রকাশ করেছে। সাম্প্রতিক অন্য আরেকটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, শুক্রগ্রহ আজ থেকে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন বছর আগে অবিশ্বাস্যভাবে ঘন এবং উত্তপ্ত হয়ে ওঠার পূর্বে প্রায় ২–৩ বিলিয়ন বছর জুড়ে বাসযোগ্য ছিলো। ড: গ্রীন বলেছিলেন, “অন্য কোথাও সভ্যতা বা প্রাণের বিকাশ ঘটেনি বলে ধারণা করার কোনো কারণ নেই। কারণ আমরা পুরো মহাবিশ্বজুড়ে এক্সোপ্ল্যানেটস (সৌরজগতের বাহিরের গ্রহ) খুঁজে পাচ্ছি।”
প্রযুক্তিবিদ উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক মঙ্গল গ্রহ বা সৌরজগতের অন্য কোনো গ্রহে ক্রু এবং কার্গো পরিবহণের জন্য নকশা করা স্পেসএক্স নভোযানটি উন্মোচন করার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে ডক্টর গ্রীন এ কথাটি বলেছিলেন।
ইলন মাস্ক বলেছেন, “পুনর্ব্যবহারযোগ্য স্পেসশিপকে বিশ্বের সাথে পরিচিত করার পাশাপাশি মহাকাশ ভ্রমণের কার্যকারিতা তুলে ধরার জন্য প্রতিষ্ঠানের এই উদ্যোগটি প্রয়োজনীয় ছিল।” মহাকাশযানটি প্রায় দুই মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো যাত্রা করবে এবং পৃথিবীতে ফিরে আসার পূর্বে 65 হাজার ফুট পর্যন্ত পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।