আপনিও কি মৃত? কোটার্ড সিন্ড্রোম! মন খুব বেশি খারাপ থাকলে আমরা মাঝে মাঝে নিজেদেরকে “জীবিত লাশ”-এর সাথে তুলনা করি। কিন্তু আপনি কি জানেন যে কিছু মানুষের বদ্ধমূল ধারণা যে তারা আসলে জীবিত লাশ? ব্যাপারটি আবার কেমন? চলুন জেনে আসা যাক।
কোটার্ড সিন্ড্রোম এক মানসিক ব্যাধি, যাতে আক্রান্ত রোগীদের মনে হয় যে তাদের কোন কোন শারীরিক অঙ্গ বুঝি মারা যাচ্ছে, মৃত, বা কখনো ছিলোই না। সাধারণত ভয়াবহ ডিপ্রেশন, সাইকোটিক ডিসঅর্ডার, বা অন্যান্য নিউরোলজিকাল ডিজঅর্ডারে ভোগা রোগীদের এমন অনুভূতি হয়। এটি ওয়াকিং কর্পস সিন্ড্রোম, কোটার্ড’স সিনড্রম বা নিহিলিস্টিক ডিলুশন নামেও পরিচিত।
কোটার্ড’স সিনড্রমের মূল উপসর্গ হচ্ছে নিহিলিজম বা ধ্বংসবাদ। নাম শুনলেই বোঝা যাচ্ছে, ধ্বংসবাদে বিশ্বাসীদের ধারণা পার্থিব কোনকিছুর কোন মানে বা মূল্য নেই, অথবা সেগুলোর আসলে কোন অস্তিত্বই নেই। সবই মায়াজাল। কোটার্ড ডিলুশনের কোন কোন রোগীদের মনে হয় যে তাদের কোন অঙ্গ পঁচে যাচ্ছে বা নেই, আবার কেউ কেউ নিজের পুরো অস্তিত্বকেই প্রশ্ন করতে থাকেন।
ডিপ্রেশন, হ্যালুসিনেশন, প্রচণ্ড অপরাধবোধ, আত্মহত্যামূলক চিন্তা, ডিমেনশিয়া, মস্তিষ্কে টিউমার, মৃগীরোগ, মাইগ্রেন ও পারকিনসন’স ডিজিজও কোটার্ড রোগীদের সাথে জড়িত। মূলত এসব দেখেই চিকিৎসকেরা কোটার্ড রোগীদের সনাক্ত করেন।
ঠিক কী কারণে যে এ রোগ দেখা দেয়, তা নিয়ে এখনো চলছে গবেষণা। তবে সবকিছুর মতো এখানেও কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর আছে। সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ বয়সের মানুষের ভেতর এটি দেখা যায়। তবে কমবয়সীদের মধ্যেও দেখা যায়। পঁচিশ বছরের কম বয়সী কোটার্ড রোগীদের সাধারণত বাইপোলার ডিসঅর্ডারও থাকে। আবার পুরুষের চেয়ে মহিলাদের কোটার্ডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সাধারণত অন্যান্য রোগের পাশাপাশি হওয়ায় কোটার্ড ডিলুশনের কোন বাঁধাধরা চিকিৎসা নেই। বিভিন্ন ওষুধপত্র বা থেরাপির মাধ্যমে কোটার্ড রোগীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে। সচরাচর এগুলোর সাহায্যেই রোগীরা ভালো হয়, তবে যদি কিছুতেই কাজ না করে তাহলে একটি সর্বশেষ পন্থা আছে- এলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি বা ইসিটি। এ চিকিৎসায় মস্তিষ্কের ভেতর দিয়ে বৈদ্যুতিক প্রবাহ চালানো হয়। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে স্মৃতিভ্রম, বিভ্রান্তি, বমিভাব বা মাংসপেশীতে ব্যাথা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কোটার্ড ডিলুশনে আক্রান্ত রোগীরা একসময় গোসল করা, খাওয়ার মতো দৈনন্দিন কাজও ছেড়ে দেয়, যারফলে কাছের মানুষগুলোর সাথেও তাদের দুরত্ব ক্রমেই বেড়ে যায়। কেউ কেউ তাঁদের বিভ্রান্তিকর এবং যন্ত্রনাদায়ক বাস্তবতা থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে এ রোগীরা একটি মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাদেরকে কটু কথা শোনালে, বা জোরের সাথে স্বাভাবিক বানানোর চেষ্টা করলে বরং হিতে বিপরীত হবে। কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণ মানসিক ও পেশাদার সাহায্য পেলে তাঁরা আমাদেরই মতো হেসেখেলে চলতে পারেন। তাই আমাদের ধৈর্য্যশীল এবং সংবেদনশীল হতে হবে।