‘নিকেল অক্সাইডকে প্রাণীদের মতো শেখানো সম্ভব।’ আপনাকে কেউ এই কথাটি বললে আপনি কি বিশ্বাস করবেন? নিকেল অক্সাইড একটি রাসায়নিক উপাদানও প্রাণীর মতো নতুন জিনিস শিখতে পারবে, সেক্ষেত্রে বিশ্বাস করা একটু কঠিনই হবে মনে হয়। তবে অবাক হলেও সত্য, বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এটিই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন!
প্রায় পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে, স্নায়ুবিজ্ঞানীরা প্রাথমিক প্রাণী শিক্ষাকে ভালোভাবে বোঝার জন্য স্লাগ নামক একটি সামুদ্রিক প্রাণী নিয়ে গবেষণা করেছেন। প্রাণীকূলের মাঝে শিক্ষার দুইটি মৌলিক ধারণা হচ্ছে অভ্যাস এবং সংবেদনশীলতা।
‘অভ্যাস’ বলতে আমরা দৈনন্দিন জীবনে যা বুঝি তার থেকে এখানে ধারণাটি একটুখানি ভিন্ন। এখানে অভ্যাসের মানে প্রাণীর কোন একটি স্টিমুলাস এর উত্তরে প্রতিক্রিয়া আস্তে আস্তে কমে যাওয়া। যেমন, একটি সামুদ্রিক স্লাগকে গবেষকেরা যখন ছুঁতে চান, তখন প্রথম প্রথম সে তার ফুলকাগুলো সরিয়ে নেয়। কিন্তু গবেষকেরা তাকে বারবার ছোঁয়ার পর, আস্তে আস্তে সে ব্যাপারটির সাথে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে এবং তার ফুলকাও আর সরায় না। এখানে ছোঁয়া হচ্ছে স্টিমুলাস এবং ফুলকা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে প্রতিক্রিয়া।
আর সংবেদনশীলতা হচ্ছে কোন একটি ক্ষতিকর বা অপ্রত্যাশিত স্টিমুলাস এর বিপরীতে প্রাণীর চরম প্রতিক্রিয়া। গবেষকেরা যদি সামুদ্রিক স্লাগটিকে একটি বৈদ্যুতিক শক দেন, তাহলে সেটি ছোঁয়ার উদাহরণ এর তুলনায় আরো অনেক নাটকীয়ভাবে তার ফুলকাগুলো সরিয়ে নেয়। এটিই সংবেদনশীলতা, এবং তা প্রমাণ করে যে প্রাণীটি জানে যে কোনটি তার জন্য ভালো আর কোনটি খারাপ।
কিন্তু নিকেল অক্সাইড এর ক্ষেত্রে তো ফুলকা পাওয়া সম্ভব না; সেক্ষেত্রে আমরা অভ্যাস এবং সংবেদনশীলতার পরিমাপ করবো কী দিয়ে? বিজ্ঞানীরা ফুলকার বদলে ধরেছেন বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা, আর স্টিমুলাস হিসেবে নিকেল অক্সাইডের চারপাশকে বারবার স্বাভাবিক বাতাস এবং হাইড্রোজেন গ্যাসের মধ্যে পরিবর্তন করেছেন।
নিকেল অক্সাইডের একটি মজার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যখন তাকে হাইড্রোজেন গ্যাসের আশেপাশে আনা হয়, তার স্ফটিক কাঠামোর মধ্যে খানিকটা পরিবর্তন আসে এবং মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা বেড়ে যায়। এর ফলে বৈদ্যুতিক প্রবাহের পরিমাণও বাড়ে। সেই যুক্তি ধরে যখন এ পরীক্ষাটিতে স্বাভাবিক বাতাস এবং শুধুমাত্র-হাইড্রোজেন গ্যাসের পরিমণ্ডলের ভেতর নিকেল অক্সাইড এর অবস্থান বারবার পরিবর্তন করা হয়, তখন প্রত্যাশা করা হয় যে পরিবর্তন অনুযায়ী নিকেল অক্সাইডের বিদ্যুতের পরিমাণ উঠানামা করবে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, ঠিক সামুদ্রিক স্লাগের মতোই, নিকেল অক্সাইডের পরিবাহিতায় পরিবর্তনও আস্তে আস্তে কমে যায়; সেটি আমরা যতবেশি স্টিমুলাসই দেই না কেন। যেনো ওদেরও অভ্যাস হয়ে গেছে।
আবার উপাদানটি যখন খুব আলো বা ওজোন এর সংস্পর্শে আসে, তখন সেটি অতি দ্রুততার সাথে তার পরিবাহিতায় পরিবর্তন আনে। ঠিক সামুদ্রিক স্লাগের সাথে সংবেদনশীলতার উদাহরণটির মতোই।
এ আবিষ্কার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য এক বিরাট সংবাদ। এতো বছর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে উন্নত করার জন্য শুধুমাত্র সফটওয়্যার এর দৃষ্টিকোণই ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এ নতুন আবিষ্কারের ফলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর নতুন দরজা খুলে গেছে উপাদানকে শেখানোর মাধ্যমে উন্নত করা। এখন হার্ডওয়্যারে ব্যবহৃত উপাদানকেও শেখানোর মাধ্যমে এআই (AI) প্রযুক্তিকে আরো উন্নত করা সম্ভব হবে।
তবে কম্পিউটার চিপে এইসব উপাদান ব্যবহার করার আগে কিছু বিষয় আরো ভালোভাবে বুঝতে হবে। উপাদানটির কম্পিউটারে কার্যকর হওয়ার জন্য শিখতে কতখানি সময় প্রয়োজন? আবার এগুলো কি শিক্ষাটুকু ভুলেও যেতে পারে? নিকেল অক্সাইডকে কত বিভিন্ন ধরনের জিনিসই বা শেখানো যেতে পারে?
এসব প্রশ্নের উত্তর গবেষকেরা খুঁজছেন। আশা করা যায়, এই আবিষ্কারের মাধ্যমে এআই (AI) প্রযুক্তি আরো একধাপ এগিয়ে যাবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক/ হাসিনাত রিফা
+1
+1
+1
+1
1
+1
5
+1
+1