কিছু কিছু ধাতুর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্ত-ভাবে অবিরত বিশেষ ছেদন শক্তি সম্পন্ন রশ্মি নির্গত হয়। অস্থিত আইসোটোপগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন ধরনের রশ্নি বিকিরণ করে নিজের নিউক্লিয়াসে পরিবর্তন এনে অন্য মৌলের স্থিত আইসোটোপে পরিণত হয়। এই আচরণ বা ধর্মকে তেজস্ক্রিয়তা বলা হয় আর এই ধরনের আইসোটোপগুলোকে বলা হয় তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে যেসব রশ্নি নি:সৃত হয় তাকে তেজস্ক্রিয় রশ্নি বা পারমানবিক বিকিরণ বা Nuclear Radiation বলে।
ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়াম-252 নামক তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে প্রকৌশলীরা “ফাস্ট নিউট্রন” ব্যবহার করে ডেটা স্থানান্তর (তারবিহীন ওয়াইফাই) করেছেন।
বিভিন্ন ধরনের ডেটা গুলোর মধ্যে ছিল একটি শব্দ, বর্ণমালা এবং এলোমেলো ভাবে নির্বাচিত সংখ্যা যা নিউট্রন ক্ষেত্রের মডুলেশনে সিরিয়ালভাবে এনকোড করা হয় এবং একটি ল্যাপটপে আউটপুট ডিকোড করা হয়। পরবর্তীতে দেখা যায় এটি স্ক্রিনে এনকোড করা তথ্য পুনরুদ্ধার করে। সেদিকে একটি ডাবল ব্লাইন্ড টেস্ট ও করা হয়। যেখানে একটি যথেচ্ছ নম্বর জেনারেটর থেকে প্রাপ্ত একটি সংখ্যা আপলোডকারীদের জানা ছাড়াই এনকোড ও প্রেরণ করা হয় এবং পরবর্তীতে ডিকোড করা হয়। গবেষণার সমস্ত ট্রান্সমিশন পরীক্ষা ১০০% সফল প্রমাণিত হয়েছে।
উক্ত গবেষণাটির একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে নিউক্লিয়ার ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যান্ড মেথডস ইন ফিজিক্স রিসার্চ জার্নালে। প্রফেসর ম্যালকম জয়েস, গবেষণার প্রধান লেখক, প্রেস রিলিজে বলেছেন- “যেখানে প্রচলিত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ট্রান্সমিশন সম্ভব নয় বা সহজাতভাবে সীমিত, সেখানে আমরা এই ফাস্ট নিউট্রনের বিকিরণের এপ্লিকেশন গুলো ব্যবহার করে তারবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্ভাবনা দেখতে পাই।“
জয়েস আরো জানান যে “ফাস্ট নিউট্রন” গুলি নিরাপত্তা এবং সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্ভরযোগ্য ডেটা ট্রান্সমিশন প্রদান করতে পারে যেখানে সাবমেরিন বাল্কহেডস, ভল্ট এবং চুল্লি দূষকগুলির মতো জায়গায় ইন্টারনেট ক্যাবলিংয়ের জন্য সহজে সঠিক কাঠামো এবং পথ তৈরি করা সম্ভব নয়।
এই ক্ষেত্রে, নিউট্রনগুলি ওই অবস্থায় তথ্য প্রেরণ করতে সক্ষম হবে। বলা হচ্ছে এটি তথ্য স্থানান্তরের প্রাইভেসি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তায় অবদান রাখতে পারে। যদিও তেজস্ক্রিয় ওয়াইফাই একটি ব্যঙ্গাত্মক প্রযুক্তির মতো শুনাচ্ছে, তবে গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে এটির প্রচুর সম্ভাব্য বাস্তব-জীবনের ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।
জুন্নাতুল মাওয়া/নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ
https://futurism.com/the-byte/cursed-wifi-nuclear-radiation
https://www.lancaster.ac.uk/news/nuclear-radiation-used-to-transmit-digital-data-wirelessly