১৯৭৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক পাঠানো লুনা-২৪ মহাকাশযান সর্বশেষ চাঁদের নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। ওই মিশনটি প্রায় ১৭০ গ্রাম চাঁদের উপাদান সরাসরি চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিল। আবারো চাঁদ এর উপাদান পৃথিবীতে আনতে চলছে চীন। এজন্য চ্যাং ই-৫ নামক মহাকাশযান প্রস্তুত করেছে দেশটি।
যানটির উদ্দেশ্য চাঁদে তৈরি হওয়া অপেক্ষাকৃত নতুন উপাদানগুলো নিয়ে আসা।
২৩ নভেম্বর ২০২০, চীনের হাইয়ান উপকূল থেকে মার্চ-৫ নামক দীর্ঘকায় রকেট উৎক্ষেপিত হয়।রকেটটি ৮.২ টন ওজনের চ্যাঙ-৫ বহন করে নিয়ে যায়।রকেট থেকে আলাদা হবার পর যানটি এর নিজের ধাক্কা বল কাজে লাগিয়ে প্রথম চার দিনের চন্দ্র পরিভ্রমণ চালাবে।চাঁদের কক্ষে প্রবেশ করে এটি একটি ল্যান্ডার ছেড়ে দিবে। ল্যান্ডারটি চাঁদের উত্তর পশ্চিম কোণে Mons Rümker নামক উচু ঢিবির পাশে অবতরণ করবে এবং সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে। সংগৃহীত নমুনা সংরক্ষিত থাকবে প্রতিরক্ষামূলক ক্যাপসুলে।প্রায় সাড়ে চার পাউন্ড নমুনা নিয়ে ল্যান্ডারটি চাঁদের কক্ষপথে ফিরে আসবে। অবশেষে কক্ষপথে থাকা মহাকাশযান এই ক্যাপসুল সংগ্রহ করবে। এভাবেই ২৩ দিনের দূর্গম মিশন শেষে ফিরে আসবে পৃথিবীতে।
চাঁদ এর জন্ম ইতিহাস ধরা হয় ৪ বিলিয়ন বছর পূর্বের। কিন্তু চাঁদে তৈরি হওয়া নতুন পাহাড় Mons Rümker ধারণা করা হয় এর বয়স ১ বিলিয়ন বছর এর কাছাকাছি। এ পর্যন্ত অ্যাপোলো হতে পাওয়া চন্দ্র নমুনা গুলো ৩ বিলিয়নেরও বেশি পুরোনো। চ্যাঙ-৫ এর লক্ষ্য ২ বিলিয়ন এর কম বয়সী নমুন সংগ্রহ করা। Mons Rümker চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৬০০ফুট উচুতে অবস্থিত। ওই অঞ্চলের শিলাগুলোকে অন্যান্য অঞ্চলের থেকে নতুন মনে করা হয়।
চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে উপাদান গুলো দুটি উপায়ে সংরক্ষণ করা হবে।একটি ড্রিল প্রায় ৬ ফুট গর্ত করবে এবং একটি ছাঁচনি পৃষ্ঠ থেকে মাটি ও পাথর সংগ্রহ করবে। অতপর তা যাবে সুরক্ষিত ক্যাপসুলে।
বিজ্ঞানীরা নমুনার খনিজ অংশ পরীক্ষা করে দেখবেন এটি সময়ের সাথে কতটুকু পরিবর্তিত ও কতটুকু অবিকল আছে।
ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় এর জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেমস হেড থ্রি বলেন ‘চ্যাঙ-৫’ এর লক্ষ্য শুধু চাঁদের আগ্নেয়গিরি রহস্য সমাধান নয়। অবতরণ এলাকার সব ধরনের মৌলিক বিষয়বস্তু পরীক্ষা করে দেখা হবে।এছাড়াও আশেপাশের বালি ও পাথর পরীক্ষা করে দেখা হবে কেন এখানে ফসফরাস, পটাশিয়াম সহ শক্তিশালী তেজস্ক্রিয় উপাদান ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম এর অস্বাভাবিক আধিক্য রয়েছে।
চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে আনা নমুনা চীনের বাইরে পাঠানো হবে কি না বিষয়টি এখন পর্যন্ত অস্পষ্ট। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)’র প্রধান কার্ল বার্গফুট বলেন, “ইএসএ এবং চীন জাতীয় স্পেস এজেন্সির মধ্যে অন্য ল্যাবগুলোতে নমুনা পাঠানোর কী আলোচনা হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত নয়।” তবে বার্গফুট নিশ্চিত করেন ইএসআই চ্যাঙ-৫ মিশনে যুক্ত হবে। মিশনের শুরুতে কোন সংকট তৈরি হলে সংস্থাটি থেকে তাদের স্পেস নেটওয়ার্ক এর সহায়তা প্রদান করা হবে।
চীন তাদের এই মিশনকে দীর্ঘ রোবোটিকস চন্দ্র গবেষণার একটি ধাপ হিসেবে বিবেচনা করছে। চ্যাঙ-৫ সফলভাবে মিশন সম্পন্ন করলে চ্যাঙ-৬ নামক আরো একটি মিশন, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। চাঁদ এর দক্ষিণ মেরুতে বিশাল বরফের উপস্থিতি ও সৌর ফাটল পাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এরপর চ্যাঙ-৭ ও চ্যাঙ-৮ মহাকাশযান দক্ষিণ মেরুর মাটি পরীক্ষা করে সেখানকার বিভিন্ন বস্তু যেমনঃ হাইড্রোজেন, পানি ইত্যাদি নিষ্কাশন ও শনাক্তকরণ এর পরিকল্পনা রয়েছে। দীর্ঘ পরিকল্পনায় রয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে একটি চন্দ্র গবেষণা স্টেশন তৈরি করা।
মানুষকে চাঁদে পাঠনোর জন্য চীন ইতোমধ্যে তাদের তৃতীয় স্পেস স্টেশন তৈরির কাজ শুরু করেছে।যা স্থাপিত হবে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে।
এই মিশন শুধু চাঁদ নয় অন্যান্য গ্রহগুলোতেও যাতায়াতের পথ সুগম করবে।
চীনের চন্দ্র অভিযান নিয়ে আরো জানতে পড়ুনঃ চাঁদের টুকরো এনে গবেষণা করবে চীন: চ্যাং’ই-৫ অভিযান
মাসরুল আহসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
এগুলো পড়ুন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করছে অবাস্তব অর্থপূর্ণ শব্দ |
তথ্যসূত্রঃ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
+1
1
+1
3
+1
+1
3
+1
+1
1
+1
1