গত ২২ জুন শনাক্ত হলো আমাদের ভূত্বকের সবচেয়ে বিরলতম নতুন একটি আইসোটোপ, এস্টাটিন-১৯০। যা একটি উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি। ফিনল্যান্ডের “জাইবাস্কিলা বিশ্ববিদ্যালয়” এর এক্সিলারেটর ল্যাবরেটরিতে একটি পরীক্ষায় ৮৫ টি প্রোটন এবং ১০৫ টি নিউট্রন সমন্বিত নতুন বিরল আইসোটোপটি শনাক্ত হয়, যা এস্টানিনের পূর্বে আবিষ্কৃত আইসোটোপগুলোর মধ্যে সব থেকে হাল্কা।
আমরা সবাই মোটামুটি জানি আইসোটোপ আসলে কি। আইসোটোপ বা সমস্থানিক হলো একই মৌলিক পদার্থের ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু, যাদের পারমাণবিক সংখ্যা একই তবে নিউক্লিয়াসে নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন। এসব পরমাণুর প্রোটনের সংখ্যা একই থাকায় এদের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মের অনেকাংশে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
যেমন উদাহরণ হিসেবে কার্বন-১২, কার্বন-১৩, এবং কার্বন-১৪ হলো কার্বনের তিনটি আইসোটোপ। এরা সবাই একই পদার্থ অর্থাৎ, কার্বন থেকে উৎপন্ন। কিন্তু এদের ভরসংখ্যা যথাক্রমে ১২, ১৩, ১৫। যেহেতু সকলেই কার্বন এবং তাদের সবার পারমাণবিক সংখ্যা ৬। সুতরাং, এখান থেকে আমরা সহজে বুঝতে পারি এদের নিউট্রন সংখ্যা অবশ্যই ভিন্ন হবে এবং তা হবে যথাক্রমে ৬, ৭ এবং ৮।
পর্যায় সারণির ৮৫ নম্বর মৌলটি হলো এস্টাটিন (Astatine)। এটি একটি হ্যালোজেন এবং তেজস্ক্রিয় মৌল এবং ভূপৃষ্ঠে অতি বিরল। এটি মূলত একটি অর্ধ ধাতু যেটা কিনা ইউরেনিয়াম এবং থোরিয়ামের ক্ষয় থেকে সৃষ্টি হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এস্টানিন আমাদের কি কাজে লাগে?
পর্যায় সারণির ৮৫ নম্বর এই মৌলটি অস্থিমজ্জায় ক্যান্সারের থেরাপি হিসেবে অথবা বোন মেটাস্ট্যাসিস রোগের থেরাপির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া এডিনোকার্সিনোমাস টিউমার এর প্রতিরোধক হিসেবেও এই মৌলটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এবার আসা যাক সদ্য আবিষ্কৃত এই আইসোটোপ নিয়ে।
পূর্বেই বলা হয়েছে, ফিনল্যান্ডের “জাইবাস্কিলা বিশ্ববিদ্যালয়” এর এক্সিলারেটর ল্যাবরেটরিতে সম্পাদিত একটি পরীক্ষায় গবেষকরা এস্টাটিন-১৯০ নাম নতুন এই আইসোটোপটি আবিষ্কার করেছেন। ৮৫ টি প্রোটন সংখ্যা সমান রেখে ১০৫ টি নিউট্রন নিয়ে গঠিত এই এস্টাটিন-১৯০ হলো এস্টাটিন মৌলের সব থেকে হালকা আইসোটোপ। সিলভার টার্গেট পরমাণুর সাথে 84Sr Beam Particles কে নিক্ষেপ করে নতুন এ আইসোটোপটিকে তৈরি করা হয়েছে। RITU রিকোয়েল বিভাজক থেকে ডিটেক্টর ব্যবহার করে এর মধ্যে আইসোটোপ পাওয়া গিয়েছে।
এস্টাটিন অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় এবং অস্থির প্রকৃতির একটি মৌল। এটি প্রকৃতিতে একধরনের স্টেপিংস্টোন হিসেবে ঘটে। এস্টাটিনের সবচেয়ে স্থিতিশীল আইসোটোপ হলো এস্টাটিন-২১০। যার অর্ধায়ু কেবল ৮ ঘন্টা। এটি ব্যতিত এর বেশিরভাগ আইসোটোপ এর অর্ধায়ু কয়েক সেকেন্ডের চেয়েও কম। তার এই বৈশিষ্ট্যই একে প্রকৃতিতে বিরল করে তুলে। বলা হয়ে থাকে, আমাদের গ্রহে প্রতি মূহুর্তে কেবল এক চা-চামচের বেশি এস্টাটিন উপস্থিত থাকে না।
এ আবিষ্কারটি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ডক্টরাল গবেষক “হেনা কোকোনেন” এর। যিনি সম্প্রতি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
কোকোনেনের ভাষ্যমতে সে সহ বাকি গবেষকরা সিলভার এটমকে লক্ষ্য করে স্ট্রনশিয়াম-৮৪ নিক্ষেপ করে। যার ফলে তারা এস্টাটিন-১৯০ খুঁজতে না গিয়েও এটি পেয়ে যায়। বলা যায় রসায়নের আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফল এটি। এই গবেষণাটি হেনা কোকোনের মাস্টার্স থিসিসের অংশ ছিল এবং এটিকে অস্বাভাবিক বলা হচ্ছে। এটি মাস্টার্স থিসিসের ফলাফল হিসেবে একটি পিয়ার-রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত হয় (Physics Review -C) এবং এটি উল্লেখও করা হয়নি যে এটি একটি নতুন আইসোটোপ।
কোকোনেন পরবর্তীতে বলেন,
” আমার থিসিসে আমি পরীক্ষামুলক ডেটা বিশ্লেষণ করি যার মধ্যে নতুন এই আইসোটোপটি পাওয়া গিয়েছে।”
এর পূর্বে উক্ত মৌলটির সব থেকে নিউট্রন ঘাটতি আইসোটোপ ছিল এস্টাটিন-১৯২। গবেষকরা নতুন আবিষ্কারটি পারমাণবিক ভর মডেলের সাথে তুলনা করছেন। আশা করছেন নব-আবিষ্কৃত এই আইসোটোপটি আমাদের এস্টাটিন সম্পর্কে হয়তো আরো নতুন কিছু বলতে পারবে।
মাহফুজুর রহমান রিদোয়ান / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ সাইন্স অ্যালার্ট, সাইটেকডেইলি, ফিজিক্স.অর্গ
+1
+1
1
+1
3
+1
1
+1
+1
+1