পৃথিবী ও মহাবিশ্ব সম্বন্ধে জানার আগ্রহ মানুষের প্রবল। প্রতিনিয়তই মহাজাগতিক জিজ্ঞাসাগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে আর বেরিয়ে আসছে অজানা ও চাঞ্চল্যকর সব তথ্য৷ সম্প্রতি বিশ্ব বিখ্যাত জার্নাল ন্যাচারে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধ থেকে জানা যায় দেড় বিলিয়ন বয়স্ক পৃথিবীর পুরোটাই ছিলো জলভাগ, ছিলো না কোনো স্থলভাগের অস্তিত্ব। যেখানে বর্তমান সাড়ে ৪ বিলিয়ন বয়সের পৃথিবীতে রয়েছে ৭ টা মহাদেশ।
পৃথিবীতে প্রাণির উদ্ভবের আগেই আসবে পানি উদ্ভবের বিষয়টা৷ পৃথিবীর পৃষ্ঠজুড়ে কীভাবে পানি জমা হয়েছে তা নিয়ে পূর্বেও অনেক কাজ হয়েছে এবং বেশ চমকপ্রদ কিছু ব্যাপারও উঠে এসেছে আগের বিভিন্ন গবেষণায়৷ এই যেমন, পৃথিবীতে পানির উদ্ভবের ক্ষেত্রে দুটি ধারণা বেশ প্রবল৷
প্রথমত, শুরুর দিকে পৃথিবীর গলিত ম্যাগমা যখন শীতল হতে থাকে তখন এসবের পাথর ও ধুলিকণার মাধ্যমেই ভূপৃষ্ঠের সৃষ্টি হয়। আর সৌরজগতের জলরাশিগুলো তখন মহাকর্ষীয় বলে আবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি করে মহাসমুদ্রের।
দ্বিতীয় ধারণাটি হলো, পানিসমৃদ্ধ গ্রহাণু অথবা গ্রহাণু বেল্টের বাইরের কোনো ধূমকেতুর পৃথিবীর সাথে প্রবল সংঘর্ষের মাধ্যমে পৃথিবীতে পানি নিয়ে এসে থাকতে পারে। হাইড্রোজেনের আইসোটোপ ডিউটেরিয়ামের উপস্থিতি দ্বিতীয় ধারণাকেই শক্তিশালী করে।
সাধারণের বোঝার সুবিধার্তে বললে, পানি দুইরকম হতে পারে। ভারী পানি ও সাধারণ পানি। সাধারণ পানি নিউট্রনবিহীন হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন যুক্ত হয়ে তৈরি হলেও ভারী পানি ১ টা নিউট্রন সম্বলিত হাইড্রোজেন (ডিউটেরিয়াম) ও অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়। কাজেই, ভারী পানি তুলনামূলক ভারী সাধারণ পানির চেয়ে।
সাধারণ পানি সহজেই বাষ্পায়িত হতে পারবে তাই ভারী পানির অস্তিত্ব মহাশুন্যে বেশি থাকবে। সেই পানিগুলোই মহাকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবীতে এসেছে এমন ধারণা বেশ প্রবল। আবার প্রচলিত আছে, গ্রহাণু ও ধূমকেতুগুলো পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার সময় এই পানি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে যা কিনা অভিকর্ষ বলের প্রভাবে আর বাইরে যেতে পারেনি। এছাড়াও যে আরো কতশতো কথা এই পৃথিবী নিয়ে।
এরপরও অনেক রহস্য থেকে গেছে রহস্য হয়েই। সেদিকে বরং না-ই যাই। প্রশ্ন থাকে, কতোটুকু ছিলো এই পানির পরিমাণ? পৃথিবীর অল্পকিছু জায়গা জুড়ে, নাকি পুরোটা জুড়েই ছিলো কেবল সমুদ্র-মহাসমুদ্রের একচ্ছত্র আধিপত্য? মহাদেশের সূত্রপাত-ই বা কখন থেকে?
সম্প্রতি বেনজামিন ডব্লিউ. জনসন ও বসওয়েল এ. উইল নামের দুজন বিজ্ঞানী ও তার দল উত্তর-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার প্যানোরামা ডিস্ট্রিক্ট থেকে প্রাপ্ত ৩.২৪ বিলিয়ন বছর পুরনো সামুদ্রিক ভূত্বকের উপর গবেষণা চালান এবং বিশ্ব বিখ্যাত জার্নাল ন্যাচারে তাদের গবেষণা-প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা পৃথিবীতে পানির উৎপত্তি সম্বন্ধে খুব একটা ধারণা দেয় না, তবে মহাদেশের উদ্ভব সম্বন্ধে ধারণা দেয়।
৩.২৪ বিলিয়ন বছর পূর্বের সমুদ্রে বর্তমান অক্সিজেন-১৬ এর তুলনায় বরং অক্সিজেন-১৮ এর উপস্থিতি ছিলো বেশি। (অক্সিজেন-১৬ ও অক্সিজেন-১৮ অক্সিজেনের দুটি আইসোটোপ) আর এই দুটি অক্সিজেনের আনুপাতিক ফলাফল বলছে, সেই সময় কোনো মহাদেশ থাকা সম্ভব নয়।
আগেই পৃথিবীতে পানির উৎপত্তি সম্বন্ধে একটা ধারণা পেয়েছি আমরা। কিন্তু পৃথিবী জলে সিক্ত থাকলেও কতোটা সিক্ত ছিলো, সমুদ্রপৃষ্ঠের উপর কোনো মহাদেশীয় ভূত্বক ছিলো কিনা এ-সংক্রান্ত একটা সুস্পষ্ট গবেষণা হতে পারে এটি। যে গবেষণা ৩.২৪ বছর পূর্বে পৃথিবীতে মহাদেশীয় ভূখণ্ডের অনুপস্থিতিকে সমর্থন করে।
অর্থাৎ, বর্তমান পৃথিবীর বয়স ধরা হয় যেখানে ৪.৫ বিলিয়ন বছর। সেখানে, সৃষ্টির প্রায় ১.৫ বিলিয়ন বছরেও পুরোটা জুড়েই ছিলো অথৈ জল। ছিলো না কোনো মহাদেশ। এই গবেষণা সত্যিকার অর্থেই আদি পৃথিবীর চমকপ্রদ একটা ধারণা প্রদান করছে। কতো রহস্যেই না ঘেরা আমাদের এই পৃথিবী, আমাদের এই মহাবিশ্ব। আমরা আদৌ কতোটুকুই বা জানতে পেরেছি?
সূত্র: ন্যাচার, লাইভ সায়েন্স, উইকিপিডিয়া
সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
1
+1
+1
+1
+1
+1
+1