আন্তর্জাতিক একটি রিসার্চ টিম বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আবিষ্কার করেছে যে, প্রাচীন কুমিরগুলোর কয়েকটি প্রজাতি ডাইনোসরদের মতো পেছনের দুই পা দিয়ে হাঁটত এবং দৈর্ঘ্যে তারা প্রায় তিন মিটারের মত লম্বা ছিল।
কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালায়নটোলজিস্ট ড. অ্যান্টনি রোমিলিও বলেছেন, “প্রথমদিকে ভাবা হয়েছিল, এরূপ পায়ের ছাপগুলো হয়তো ভাটার সময়ে কর্দমাক্ত মাটির উপরে হাঁটা বিশালাকার বাইপেডাল ‘টেরোসর’ নামক প্রাণীর হতে পারে। তবে বর্তমানে আমরা আসলেই বুঝতে পেরেছি যে ওগুলো বাইপেডাল কুমিরের পায়ের ছাপ ছিল।
ছাপগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ২৪ সেন্টিমিটারের মত, যা পর্যবেক্ষণ করে বুঝা যায় ঐসকল প্রাণীর পায়ের দৈর্ঘ্য একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের পায়ের দৈর্ঘ্যের প্রায় সমান। এসকল প্রাণী দৈর্ঘ্যে আনুমানিক প্রায় তিন মিটারেরও বেশি লম্বা এবং অবাক করা ব্যাপার তাদের বিচরণভুমিতে সর্বত্রই পায়ের ছাপ বিদ্যমান ছিল, কিন্তু সেখানে কোনো হাতের ছাপ বিদ্যমান ছিল না।”
‘চিঞ্জু ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশন’ -এর অধ্যাপক কিউং সু কিমের নেতৃত্বে গবেষণা দলটি সেখানে কোনো হাতের ছাপ কেন ছিলনা তার সন্ধান খুব দ্রুতই বের করতে পেরেছিল।
“সাধারণ কুমিররা অনেকটা হেলেদুলে চলাফেরা করে থাকে এবং তারা তাদের চারটি পা দিয়ে হাঁটবার সময় এক প্রকার প্রশস্ত গমনপথ তৈরি করে,” প্রফেসর কিম ব্যাখ্যা করেছিলেন।
“কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, আমাদের গবেষণায় প্রাপ্ত গমণপথগুলো খুব সরু দেখাচ্ছিল, অনেকটা চিকন দড়ির উপর প্রাচীন কুমিরগুলো যেন হাঁটার সময় তাদের ব্যালেন্স কন্ট্রোল করছিল। কোনো চারপায়ী প্রাণীর পায়ের ছাপের সাথে তুলনা করলে এ ব্যাপারটি স্পষ্ট বুঝা যায় যে, এই প্রাণীগুলি দুই পা দিয়েই চলছিল।”
তিনি আরো ব্যাক্ত করেন, “তারা যেভাবে চলাফেরা করতো, তা অনেকটাই ডাইনোসরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। যদিও মনে হতে পারে ছাপগুলো হয়তোবা ডাইনোসররাই তৈরি করেছে, কিন্তু আসলেই সেসকল পায়ের ছাপ ডাইনোসর তৈরি করেনি। এর উল্লেখযোগ্য কারণ, সকল প্রজাতির ডাইনোসর সাধারণত তাদের পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে হাঁটত, কিন্তু ঐ কুমিরগুলো মানুষের মতো স্পষ্টভাবে পুরো পায়ের ছাপ রেখে পায়ের পুরো প্রশস্ত অংশের উপর ভর দিয়ে চলাফেরা করতো।”
গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন যে, ১১০-১২০ মিলিয়ন বছর পূর্বের ঐসকল প্রাণীর পায়ের ছাপ এবং গমণপথগুলো বর্তমান দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত।
তারা প্রথমে গমণপথগুলোয় প্রাণীর হাতের ছাপের উপস্থিতি কেন নেই তা নিয়ে অনেক ভেবেছেন, কারণ বর্তমান কুমিরগুলো সাধারণত ‘চতুষ্পদী’ হয়ে থাকে। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই দুই হাতের ছাপ গমণপথগুলোতে কেন নেই তা ভাববার বিষয় ছিল।
“জীবাশ্ম কুমিরের পায়ের ছাপগুলো এশিয়া মহাদেশে বেশ বিরল, আর তাই হুট করে প্রায় একশো পদচিহ্ন একইসাথে খুঁজে পাওয়া সত্যিই বিস্ময়কর ছিল,” ড. রোমিলিও বলেছিলেন।
পরিশেষে তিনি বলেন, “একটি প্রাণী যখন হাঁটে, তখন তার পেছনের পা কর্তৃক সামনের পায়ের ছাপের উপর ‘ওভার-প্রিন্টিং’ হবার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে, তবে আমরা কোরিয়ার ঐ অঞ্চলগুলোতে ওভারপ্রিন্টিং হবার দৃষ্টান্তমূলক কোনো প্রমাণ পাইনি। এমন না যে পায়ের ছাপগুলো যত্নসহকারে সংরক্ষণ করা হয়নি, বস্তুত এই জীবাশ্মগুলো দর্শনীয়, কেননা তাদের ছাপগুলোতে পায়ের আঙ্গুলের নিচে প্যাডের অংশ এমনকি প্যাডে রেখাগুলোর সূক্ষ্ম বিবরণও স্পষ্ট দৃশ্যমান।”
হাসান সৈকত/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
+1
1
+1
1
+1
4
+1
3
+1
+1
1