চা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়। হবেই না বা কেন? গরম চায়ে চুমুক দিয়ে দিনটা শুরু করতে কার না ভালো লাগে? আবার কাজের ফাঁকে ক্লান্ত শরীরকে পুনরায় সতেজ করতে চায়ের চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে!
তবে যারা একটু বেশিই চা প্রেমী হয়, তাদের কিন্তু কিছু কথা শুনতে হয় সবসময়, যেমনঃ চা পানে এসিডিটি হবে, দুধ চায়ের চেয়ে কালো/রঙ চা ভালো। এসব কি আসলেই সত্য?
কতটুকু সত্য, কতটুকু মিথ্যা আজ আপনাদের সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। আচ্ছা, বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।
চা-এ শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। আমরা যখন এতে দুধ যুক্ত করি তখন দুধে থাকা ক্যাসিন (caseins) নামক প্রোটিনের সাথে চায়ে থাকা ক্যাটচিন (catechin) নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত হয়ে কমপ্লেক্স যৌগ তৈরি করে।
ফলে চা-য়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ হ্রাস পায় এবং পাশাপাশি এটি প্রদাহ, অ্যাসিডিটির উৎস তৈরি করে। অন্যদিকে কালো চা রক্তনালীগুলি শিথিল করে, যদি এর সাথে দুধ যুক্ত করা হয়, তখন প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়। তাই গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সুবিধার কারণে সব বয়স জুড়ে কালো চা একটি জনপ্রিয় পানীয় হয়ে উঠছে।
তাহলে কি এখন দুধ চা খেলে ক্ষতি হবে ভেবে খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে? বিষয়টা আরও একটু স্পষ্ট করতে দুধ চা এবং কালো চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কালো চা এর স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ
কালো চা হৃদরোগের অনেক রোগীর করোনারি আর্টারি ত্রুটিপূর্ণ ক্রিয়া মেরামত করতে সহায়তা করে।অন্ত্রের ব্যাধি নিরাময়ে এটি ভূমিকা রাখে। কালো চা হাঁপানি রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী, কারণ এটি বায়ু গমনকে প্রসারিত করে, ফলে রোগীরা সহজে শ্বাস নিতে পারে। এটি পাচনতন্ত্রের ব্যাধি নিরাময়ে সহায়তা করে, হার্টের সমস্যার ঝুঁকি কমায় এবং মহিলাদের স্তন ক্যান্সারজনিত বৃদ্ধি রোধে সহায়তা করে, বিশেষত মেয়েরা যখন মেনোপজাল স্তরে থাকে।
কালো চা একটি দুর্দান্ত শক্তি বৃদ্ধিকারক এবং আপনার ত্বক এবং চুলকে সুন্দর করে। মানসিক ফোকাস বাড়ায় এবং আপনাকে চাঙ্গা রাখে। কালো চা স্ট্রেস থেকে মুক্তি দেয় এবং হাড়ের ঘনত্ব উন্নত করে যা আর্থ্রাইটিসের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
দুধ চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ
চায়ের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তা তো জানি, এতে দুধ যুক্ত করা আরও বেশি স্বাদযুক্ত হয়ে উঠে। চায়ের ফ্রি র্যাডিক্যালস এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলিই এটি পান করার উপযুক্ত করে তোলে। এক কাপ দুধ চা শরীরে শক্তি জোগায়। বিশেষত দুধে থাকা ক্যালসিয়াম উপাদান হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে। এটি স্ট্রেস হ্রাস করে, কারণ এতে ক্যাফিন রয়েছে এবং এটি শরীরকে সতেজ করে তোলে। দুধ চা ওজন বৃদ্ধি এবং ওজন হ্রাস উভয়েরই ভাল উৎস। কার্বোহাইড্রেট, খনিজ এবং ক্যালসিয়ামের মতো যৌগগুলির কারণে দুধ চা প্রায়শই স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসাবে বিবেচিত হয়।
দুধ চায়ের ক্ষতিকর প্রভাবঃ
দুধের চা বেশি মাত্রায় গ্রহণের ফলে টাইপ -২ ডায়াবেটিস, উদ্বেগ, অনিদ্রা, তৈলাক্ত ত্বক এবং ব্রণ, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডিহাইড্রেশন, ফোলাভাব, গুরুত্বপূর্ণ নিউট্রিয়েন্ট ঘাটতি ইত্যাদির কারণ হতে পারে। দুধ, চায়ের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সুবিধাগুলো কমিয়ে দেয় তাই দুধ চা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
অন্যদিকে কালো চায়ের পানীয় হিসাবে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তবে, আপনাকে অবশ্যই খাওয়ার পরে কালো চা পান করা এড়াতে হবে কারণ কালো চায়ে রয়েছে ফেনল (phenols) নামে একটি ক্যামিকেল উপাদান। খাবার খাওয়ার অল্প সময় পরেই কালো চা পানে, ফেনল খাবারে থাকা আয়রন শোষণে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। যাদের আয়রনের ঘাটতি রয়েছে, তাদের খাবারের পর চা পান করা উচিত নয়। এছাড়াও দুই আহারের মাঝে কালো চা পান করলে খাবারে রুচি কমে যায় এবং এতে ওজনও কমে যায়।
শেষ কথা হচ্ছে আপনি চা এ দুধ যোগ করবেন, নাকি না?
প্রথমত বিষয়টা আপনার উপর নির্ভর করছে, যেহেতু দুধ চা খাওয়া ক্ষতি নাকি ভালো এখন আপনি জেনে গেলেন, আমি মোটেও আপনাকে এতে বাধ্য করছি না। কিন্তু স্বাস্থ্য দিক বিবেচনা করলে, আপনার যদি দুধ চা পানের অভ্যাস থাকে তাহলে এর ক্ষতি-র প্রভাবটা চিন্তা করে প্রতিদিন দুধ চা পানের পরিমাণটা অন্তত কমিয়ে দিন।
আর গরম দুধ চায়ে চুমুক দিয়ে দিনটা শুরু করতেই হলে, চায়ে চুমুক দেওয়ার আগে কিছু খেয়ে নিন যেন অ্যাসিডিটি এড়াতে পারেন। আপনি চাইলে চা এর অন্য ফ্লেভারগুলো টেস্ট করতে পারেন, যদিও স্বাদ পাল্টানো একটু কষ্ট, শরীরের সুস্থতা নিশ্চিত করতে তো একটু কষ্ট করতেই হবে।
তানজিনা সুলতানা শাহীন/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ food.ndtv.com, spoonforkandfood.