একবার চিন্তা করে দেখুন তো, আজ থেকে বছর একশ পর কেমন রূপ নিতে পারে বর্তমান পৃথিবী!? হতে পারে পৃথিবীর সকল সমুদ্র, নদী-নালা, খাল-বিল বিষাক্ত হয়ে গেল অথবা সমুদ্র পরিণত হলো ধূসর মরুভূমিতে। এমন অবস্থা হলে পৃথিবীর মানুষের খাদ্যের যোগান হবে কোথা থেকে? শুধু মানুষই নয়, অন্যান্য সকল প্রাণিই তখন পড়বে করুণ খাদ্য সংকটে এবং মুখোমুখি হবে চরম বিপর্যয়ের। তবে এর বিকল্প হিসেবে যদি থ্রিডি প্রিন্টেড মাছ পাওয়া যেত, যেখানে কোনো পানি ছাড়াই উৎপন্ন হবে মাছ, তাহলে কেমন হতো?
এমন অবস্থার মোকাবিলা করতেই বিশ্বের প্রথমবারের মত ইজরায়েলি ডিপ-টেকনোলজি ভিত্তিক খাদ্য কোম্পানি Steakholder Foods এবং সিংগাপুরের কোম্পানি Umami Meats তৈরী করেছে Grouper মাছের থ্রিডি প্রিন্টেড ফিলেট। এই Grouper মাছের ফিলেটটি ল্যাবে মাছের কোষ থেকে তৈরি করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে একটি থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে একে মাছের আকৃতি দেওয়া হয়।
Steakholder Foods এবং Umami Meats দাবি করে যে,
“থ্রিডি প্রিন্টেড মাছের স্বাদ, গন্ধ ও টেক্সচার অবিকল বাস্তবে সমুদ্র থেকে ধরা মাছের মতোই রয়েছে এবং এই মাছের গুণগত মানও সর্বদা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে।”
বর্তমান পৃথিবীতে জনসংখ্যা অতিরিক্ত হারে বাড়ছে। যার ফলাফল হিসেবে অতিরিক্ত মাছ ধরাও গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, অতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে Grouper মাছের তিন ভাগের একভাগ বিলুপ্তির দার-প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
থ্রিডি প্রিন্টেড মাছের সুবিধা:
- আমিষের আদর্শ বিকল্প
নিম্নবিত্ত অনেক দেশের লাখ লাখ মানুষ খাদ্যাভাবে নিদারুণ জটিলতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে আফ্রিকান দেশগুলোর জনগণ বিপাকে পড়েছে সবচেয়ে বেশি। না আছে বিশুদ্ধ খাবার, না আছে আমিষ এবং শর্করা সরবরাহ। অন্যদিকে, মেরিন এক্সপার্টদের দাবি অনুযায়ী, অতিরিক্ত মাছ শিকারের ফলে সাগরে মাছের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমছে এবং অনেক মাছের প্রজাতি ইতোমধ্যে বিলুপ্তির পথে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মানবসভ্যতাকে উদ্ধার করতে থ্রিডি প্রিন্টেড মাছ হতে পারে এক আদর্শ সমাধান। বিশ্ব খাদ্য সমস্যা মেটাতে থ্রিডি প্রিন্টেড মাছ রাখতে পারে অনন্য ভূমিকা।
- আমিষে কোনো টক্সিন থাকে না
বিভিন্ন ক্ষতিকর টক্সিন যেমন পারদ, মাইক্রোপ্লাস্টিক, এন্টিবায়োটিক এবং হরমোন থ্রিডি প্রিন্টেড মাছে থাকে না। এই মাছের তৈরীর প্রতিটি ধাপ অত্যন্ত নিখুঁত ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে হওয়ায় ক্ষতিকর পদার্থ এতে থাকে না এবং মানবশরীরের জন্য বিশুদ্ধ আমিষ হিসেবে এগুলো পরিণত হয়।
- নিখুঁত স্বাদ ও টেক্সচার
Umami Meats এর সিইও মিহির পারসাদ বলেন,
“এই মাছের ফিলেটটির স্বাদ এবং গলে যাওয়ার ধরন একটি আদর্শ মাছের সমতুল্য।”
এছাড়াও মিহির পারসাদ কয়েক মাসের মাঝেই এই থ্রিডি প্রিন্টেড মাছ বিশ্বে বাজারজাত করার ব্যাবস্থা করবেন বলেও ঘোষণা দেন।
এই মাছের ফিলেটগুলো তৈরি করা হয় মাছের স্টেম কোষ গুলো নির্বাচন করে এবং পরবর্তীতে এগুলোকে একটি বড়ো পুষ্টিসমৃদ্ধ তরলপূর্ণ ড্রামে রেখে দেওয়া হয়, সংখ্যা বৃদ্ধি করানোর জন্য। কোষগুলো একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় পৌছানোর পর আপনা-আপনিই এদের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে পেশী ও চর্বি তৈরি করে। অতঃপর কোষগুলো কে থ্রিডি প্রিন্টারে ঢুকিয়ে পছন্দ মতো মাছের আকার-আকৃতি দেওয়া হয়।
-
ইনকিউবেশনের প্রয়োজনীয়তা নেই
থ্রিডি প্রিন্টেড মাংসের মতো এই মাছের ফিলেট এ কোন ইনকিউবেশন অথবা ম্যাচুরেশনের দরকার নেই। প্রিন্টিং এর সাথে সাথেই এই মাছ রান্নার জন্য প্রস্তুত হয়। যেখানে থ্রিডি প্রিন্টেড মাংসের রান্না করার মতো পর্যায়ে যেয়ে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
-
বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে সামুদ্রিক মাছ
প্রতিবছর লাখ লাখ টন মাছ সমুদ্র থেকে শিকার করা হয়। যার ফলে ইতোমধ্যে গ্রুপার মাছের এক তৃতীয়াংশ প্রজাতি বিলুপ্তির মুখোমুখি। এছাড়াও আরো অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। এমতাবস্থায় থ্রিডি প্রিন্টেড মাছই হতে পারে আমিষের চাহিদা মেটানোর একমাত্র উপায় এবং এর ফলে সামুদ্রিক মাছ ও রক্ষা পাবে বিলুপ্তি হতে।
বিশ্ববিখ্যাত কফি কোম্পানি Nescafe সম্প্রতি সী-উইড এবং মটর (Pea) থেকে তৈরি করেছে Vrimp। যা চিংড়ির বিকল্প হিসেবে খাওয়া যাবে।
নাফিস কামাল/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: Telegraph, CNN, Steakholder Foods