একটি বৃহত্তর গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে গুরুতর চোখের রোগ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে একটি এআই সরঞ্জাম খুব সঠিকভাবে এবং বেশ দ্রুততার সাথে কাজ করছে। যার ফলে রোগীর সমস্যার সমাধান এর জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারার বেশ সময় হাতে থাকে।
স্বাভাবিকভাবেই এই কাজের সাথে সম্পর্কিত মানুষের কাজের চাপকে অর্ধেক করে দিয়েছে উক্ত এআই সরঞ্জামটি। ইংলিশ ডায়াবেটিক আই স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম (ডিইএসপি) এর এআই ব্যবহার করে এই বৃহত্তম গবেষণা থেকে উক্ত ফলাফলটি বের করা হয়েছিল, যা বছরের মধ্যে একবার ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত লোকদের এই অবস্থার (ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি) সাথে যুক্ত চোখের ক্ষতির লক্ষণগুলির জন্য স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম করে।
UK জুড়ে হাসপাতাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির গবেষকরা যুক্ত হয় উক্ত গবেষণা কে সফল করার জন্যে। এলএ-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘Eyenuk.Inc‘ দ্বারা নির্মিত ‘EyeArt‘ এআই স্ক্রিনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে। তারা রেটিনার ক্ষতির লক্ষণগুলি অনুসন্ধান করার জন্য প্রোগ্রাম থেকে ৩০০০০ রোগীকে স্ক্যানকৃত (মোট ১২০০০০) চিত্রগুলি ব্যবহার করেছিলন।
এ থেকে তাঁরা একটি ফলাফল দাঁড় করায় যার উপসংহারে দেখা গেছে, বিশেষজ্ঞদের পরিসেবার রেফারেল প্রয়োজন হতে পারে এমন ক্ষতি শনাক্তকরণের জন্য এই সরঞ্জামটি ৯৫.৭ শতাংশ সঠিক ছিল। মাঝারি থেকে গুরুতর রেটিনোপ্যাথি সনাক্ত করতে গিয়ে ১০০% যথার্থতা প্রকাশ করে।
গবেষকরা অনুমান করেছেন যে EyeArt সরঞ্জামের ব্যবহার ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথির জন্য স্ক্রিনিংয়ের সাথে যুক্ত ডাক্তার এবং অন্যান্য গবেষকদের কাজের চাপকে অর্ধেক করে দিতে পারে এবং এর ফলে একমাত্র ইংল্যান্ডে ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি বার্ষিক সঞ্চয় সম্ভব, যা স্ক্রিনিংয়ের প্রতি ১,০০,০০০ এপিসোডে ৫,০০,০০০ পাউন্ড বাঁচাতে পারে।
সেন্ট জর্জ বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডনের মহামারীবিদ এবং গবেষণার সিনিয়র লেখক প্রফেসর অ্যালিকজা রুডনিকা বলেছেন, “জাতীয় স্ক্রিনিং প্রোগ্রামটি ডায়াবেটিসের কারণে দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের মাত্রা হ্রাস করতে অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে”।
তিনি আরও বলেন, “চোখের ক্ষতি সহজেই শনাক্তযোগ্য এবং যাদের মধ্যে সমস্যা দেখা দিবে তাদের জন্য কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে। তবে প্রতিদিন হাজার হাজার চিত্র থেকে নির্ণয়ের জন্য মানব গ্রেডারের উপর একটি খুব বেশি বোঝা হয়ে যাচ্ছে- যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনও রোগের লক্ষণ দেখা যায় না এবং এর জন্য আর কোনও পদক্ষেপের প্রয়োজন হয় না।”
উক্ত টেকনোলজি সম্পর্কে বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, “আমাদের গবেষণা থেকে স্পষ্টত বুঝা যাচ্ছে যে মেশিন-লার্নিং প্রযুক্তি এই স্ক্রিনিংকে আরো সহজ ও নিরাপদ করে তুলতে পারে। এটি এনএইচএসের জন্য আরও তহবিল এবং অর্থায়নের সুযোগ করে দিবে। যদি এই প্রযুক্তিটি জাতীয় পর্যায়ে আবর্তিত হয়, তবে তা করোনাভাইরাস মহামারীজনিত কারণে ডায়াবেটিস আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে অহেতুক দৃষ্টি হ্রাসের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবার কারণে অবিলম্বে তৈরি হওয়া ব্যাকলগ হ্রাস করতে পারে।”
EyeArt এর মতো সরঞ্জামগুলি এমন অঞ্চলেও কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে যেখানে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির জন্য স্ক্রিনিং এর জন্য এখনও কোনও কর্মশক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ডায়াবেটিস বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলেছে, ২০৪৫ সালের মধ্যে এর কেস বেড়ে ২৯২২ মিলিয়ন হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে, যা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হিসাবে উপস্থিত করেছে।
মুরফিল্ডস চক্ষু হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ অধ্যাপক আদনান তুফাইল মন্তব্য করছেন যে, এই গবেষণাটি উল্লেখযোগ্য কারণ এটির প্রায় ১২,০০,০০০ এরও বেশি নমুনা রয়েছে বিশ্বজুড়ে।
তুফাইল আরও বলেন,“আমরা দেখিয়েছি যে এই এআই সফ্টওয়্যারটি যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেড ডায়াবেটিস আই স্ক্রিনিং ইমেজগুলো যাচাইয়ের ক্ষেত্রে মানুষের বোঝা অনেকখানি কমিয়ে দিবে এবং এর মাধ্যমে প্রতি বছর পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি আই স্ক্রিনিং এর ইমেজ যাচাই করা সম্ভব হবে। প্রযুক্তিটি অবিশ্বাস্য রকমের দ্রুত এবং নিশ্চিত, কারণ মারাত্মক ডায়বেটিক রেটিনোপ্যাথির একটি ক্ষেত্রও মিস করেনি।
কোভিড পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে এআই বেশ অবদান রাখতে পারে। আমরা কীভাবে ক্লিনিকাল ব্যবহারের জন্য এআইকে বৈধতা দিতে পারি তার একটি যুগান্তকারী গবেষণা বলে আমরা উক্ত প্রযুক্তিটিকে বিশ্বাস করি। আমরা আশা করছি, অন্যান্য দেশগুলি এই প্রযুক্তিটি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা আনবে।”
ফাহাদ বিন এনাম/ নিজস্ব প্রতিবেদক