বর্তমানে প্রায় সব মোবাইল এবং কম্পিউটারে ডার্ক মোড বা নাইট মোড নামের একটি বিশেষ ফিচার রয়েছে, বলা হয়ে থাকে ফিচারটি আমাদের চোখ-এর জন্যে ভালো। বেশিরভাগ ডিভাইসের ডিফল্ট সেটিংসে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে কালো রঙের লেখা প্রদর্শিত হয়। কিন্তু আপনি যখন ডার্ক মোড ব্যবহার করবেন, তখন কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা লেখা প্রদর্শিত হবে।
ডার্ক মোডের মূল উদ্দেশ্য হলো ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর নীল আলোর এক্সপোজার হ্রাস করা এবং চোখকে সুরক্ষিত রাখা। কিন্তু ডার্ক মোড যে আসলেই চোখকে সুরক্ষিত রাখতে পারে, তার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।
আপনি জানলে নিশ্চয়ই অবাক হবেন, অতিরিক্ত ডার্ক মোড ব্যবহারের কারণে আপনার চোখের মারাত্নক ক্ষতিও হতে পারে এবং দৃষ্টি শক্তিও কমে যেতে পারে। অনেক সময় ডার্ক মোড অ্যাসিগমাটিজম এর কারণও হতে পারে।
আমাদের দৃষ্টিশক্তি নির্ভর করে চোখের রেটিনার উপর। কারণ, কোনো বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো রেটিনাতে প্রবেশ করলেই শুধুমাত্র আমরা বস্তুটিকে দেখতে পাই। আমরা যখন লাইট মোড ব্যবহার করি, তখন আমাদের রেটিনাতে বেশি আলো প্রবেশ করে এবং আমরা বস্তুটিকে পরিষ্কার দেখতে পাই।
কিন্তু যখন ডার্ক মোড বা নাইট মোড ব্যবহার করি, তখন রেটিনাতে কম আলো প্রবেশ করে এবং এর ফলে বস্তুর অস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। তখন কোনো লেখা পড়তে গেলে চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়, যা চোখের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর। তাই আপনি যখন ভিডিও দেখবেন, তখন ডার্ক মোড ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু অন্য সব ক্ষেত্রে ডার্ক মোড এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
American Academy of Ophthalmology (AAO) এর একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, যদি কেউ নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্লু লাইটের সংস্পর্শে থাকে, তাহলে তার চোখে মাইনাস পাওয়ার আসার সম্ভাবনা খুব কম। অন্যদিকে, হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, দিনের বেলা ব্লু লাইটের সংস্পর্শে থাকলে মানুষের মেজাজও ভালো থাকে।
আচ্ছা, আপনি কি জানেন ব্লু লাইট কিভাবে আমাদের চোখকে প্রভাবিত করে?
আমাদের ব্যবহৃত ডিভাইস থেকে নীল আলোক তরঙ্গ নির্গত হয়। তবে নীল আলো মূলত সূর্য থেকে আসে এবং আমাদের বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে আকাশ নীল রং ধারণ করে। অন্যান্য তরঙ্গের তুলনায় নীল আলোক তরঙ্গ অনেক বেশি শক্তিশালী।
২o১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, নীল আলো সবুজ আলোর তুলনায় দ্বিগুণ মেলাটোনিন হ্রাস করে। [মেলাটোনিন এমন একটি হরমোন, যা রাতের বেলা ঘুম আসাতে সহায়তা করে।]
রাতে নীল আলোর উপস্থিতি মেলাটোনিন উৎপাদনকে হ্রাস করে, যার ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়। তাই রাতে ডার্ক মোড ব্যবহার করলে দ্রুত ঘুম হয়। ২o১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা ডার্ক মোড ব্যবহার করে তাদের তুলনায়, যারা স্মার্ট ফোনে রাতে গেইম খেলে তাদের ঘুম আসতে দেরি হয়। আর একদম ডার্ক মোডের পরিবর্তে এক্ষেত্রে গ্রে-মোড ব্যবহার করা যায়, যা তুলনামূলক কম ক্ষতিকর।
আবার, ২o১৯ সালে অ্যাপল কোম্পানির একটি সমীক্ষায় জানা যায়, যারা তাদের আইপ্যাডে ডার্ক মোড ব্যবহার করেন এবং যারা ব্যবহার করেন না, তাদের মধ্যে মেলাটোনিন উৎপাদনের কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য প্রমাণিত হয় নি।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে, বিজ্ঞানী ডিব্রফ বলেন, চোখের চাপ কমাতে ডার্ক মোড কখনো বিকল্প ব্যবস্থা নয়। তিনি যুক্ত করেন, সুস্থ রাখতে হলে প্রতি ২o মিনিট পর পর চোখকে ডিভাইসের পর্দা থেকে বিশ্রাম দিতে হবে। চোখে কোনো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত চশমা এবং আই ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।
যেহেতু, ডার্ক মোড বা নাইট মোড চোখ-কে সুরক্ষিত রাখবে এমন কেনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো আবিষ্কৃত হয় নি, তাই আমাদের উচিত হবে প্রয়োজন বুঝে ডার্ক মোড ব্যবহার করা।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক