বিজ্ঞানীরা অনুধাবন করেছেন যে, আমাদের পৃথিবীর ভূগর্ভের প্রায় পুরোটা জুড়ে প্রচুর পরিমাণ জীবমণ্ডল লুকিয়ে রয়েছে। যা বিশ্বের সব সাগরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। তাদের মতে, ভূগর্ভস্থ অণুজীব সূর্যের আলো ছাড়াই ডার্ক অক্সিজেন তৈরি করে।
গবেষকরা প্রায় মেনেই নিয়েছেন যে, ভূগর্ভস্থ (Subterranean) রাজ্যের অক্সিজেনের অভাবযুক্ত অঞ্চলগুলো অধ্যুষিত হচ্ছে মাত্র কিছু প্রাচীন অণুজীব দ্বারা। যেগুলো তাদের বিপাক ক্রিয়া ধীর গতিতে চালিয়ে নিচ্ছে। এই উৎসগুলো যেভাবে কমে আসছে তাতে মনে করা হয়েছিলো ভূগর্ভস্থ পরিবেশ অচিরেই প্রাণহীন হয়ে পড়বে।
কিন্তু গত মাসে ন্যাচার কমিউনিকেশনে একটা নতুন গবেষণা প্রকাশিত হয়। সেখানে বিজ্ঞানীরা এই উদ্বেগকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।
কানাডার আলবার্তোর ফসিল ফুয়েল ফিল্ডের জলাধারের ২০০ মিটার নিচে তারা প্রচুর পরিমাণ অণুজীবের খোঁজ পেয়েছেন। যেগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদন করতে সক্ষম, এমনকি সূর্যের আলোর অনুপস্থিতিতেও।
টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞানী ক্যারেন লয়েড বলেন,
” অণুজীবগুলো এতো বেশি অক্সিজেন (বিজ্ঞানীরা যাকে ডার্ক অক্সিজেন বলে) উৎপাদন করে যে মনে হয় যেন আমাজন রেইনফরেস্ট থেকে অক্সিজেন উৎপন্ন হচ্ছে।”
গ্যাস নির্গত হওয়ার পরিমাণ দেখে মনে হয় অক্সিজেন নির্ভর প্রাণীদের জন্য তা অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি করবে।
টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-রসায়নবিদ বারবারা শেরউডের মতে,
“এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার।”
অতীত গবেষণা প্রায়শই এমন পদ্ধতির দিকে নজর দিয়েছে যা ভূগর্ভস্থ জীবের জন্য হাইড্রোজেন এবং অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ অণু তৈরি করতে পারে। কিন্তু অক্সিজেন ধারণকারী অণুগুলোর প্রজন্মকে মূলত উপেক্ষা করা হয়েছে। কারণ এই ধরনের অণুগুলো খুব দ্রুত মাটির তলায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
পুরানো, গভীর জলস্তরের নমুনাগুলো কোনো জীবকে ততটা সহায়তা করতে পারে না। কারণ তারা জলস্তরের শীর্ষে থাকা সালোকসংশ্লেষী উদ্ভিদ এবং শৈবাল দ্বারা উৎপাদিত পুষ্টি থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যাইহোক, এমিল রাফের দল অবাক হয়ে গিয়েছিল যে পুরানো, গভীর ভূগর্ভস্থ জলে নতুন জলের চেয়ে বেশি কোষ রয়েছে।
আণবিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে নমুনা ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্যসূচক জিন খোঁজ করা হয় এবং গবেষকরা সেগুলো চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। উপরিভাগের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া অথবা উদ্ভিদ থেকে আসতে পারে। গবেষকরা এর সমাধান বের করতে আলোক বর্ণালি ব্যবহার করেছেন।
এটা এমন একটা প্রক্রিয়া যা অণুর আইসোটোপের ভর নির্ণয় করতে পারে। সাধারণত ভূতাত্ত্বিকভাবে উদ্ভূত অক্সিজেন জৈবিকভাবে উদ্ভূত অক্সিজেনের চেয়ে ঘন হয়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে হালকা অক্সিজেন অবশ্যই জীবিত কিছু থেকে আসে।
কারণ এটা জলস্তরের উপরিভাগেই বিদ্যমান। এক্ষেত্রে অণুজীবই সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রতিযোগী। উপরিভাগের জলে পুরো ব্যাকটেরিয়ার দলটি সিকোয়েন্সড ছিল। তারপর গবেষকরা বিপাকীয় কার্যাবলী চিহ্নিত করেন এবং খুব সম্ভবত অক্সিজেন উৎপাদন করার প্রক্রিয়াও।
এই ধরনের রাসায়নিক ভাঙন ডিসমিউটেশনকে আরোপ করে। পূর্বে বিশ্বাস করা হতো কিছু প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া অক্সিজেন তৈরি করতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, বিভিন্ন কোষ থেকে বিভাজনের দ্বারা সৃষ্ট অক্সিজেন সিম্বায়োটিক প্রক্রিয়ায় অন্যান্য অক্সিজেন-নির্ভর প্রজাতির উপকারের জন্য ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মেরিন বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরির (MBL) মাইক্রোবিয়াল ইকোলজিস্ট এমিল রাফের মতে,
“এই কারণেই ভূগর্ভস্থ জলে এবং সম্ভবত কাছাকাছি মাটিতে বিভিন্ন বায়বীয় জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।”
মোহাম্মদ রনি / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সায়েন্সটাইমস