একটি পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য হতে ধারণা করা যাচ্ছে, সমুদ্রের নিচ দিয়ে প্রবাহিত যে ডাটা ক্যাবল দিয়ে তথ্য আদান প্রধান এর কাজ করা হয়, সেই ক্যাবল দিয়ে ভবিষ্যতে ভূমিকম্প বা সুনামি এর গতিপথ এর তথ্য পাওয়া যাবে বা এদের ট্র্যাক করা যাবে।
গত বছর গুগলের একটি ডাটা ক্যাবল ব্যবহার করে এই পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায় যে, এটি নিকটবর্তী স্থানের ভূমিকম্প ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়েছে। এই নতুন পদ্ধতি নিয়ে গবেষকরা গত কয়েক বছর ধরেই পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছিল।
‘আমরা কি কম খরচে পুরো সমুদ্রে geophysical সেন্সর বসাতে সক্ষম?’ California Institute of Technology এর সহকারী প্রফেসর Zhongwen Zhan এর মতে, ‘এটা সম্ভব নয়। কারণ অনেক ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু ডাটা ক্যাবল যা এখন প্রায় পুরো সমুদ্র জুড়েই রয়েছে তাকে যদি সেন্সর হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তবে এটার ব্যয় হবে খুবই নগণ্য।’ এই সম্পর্কিত একটি রিসার্চ জার্নাল সায়েন্স নামক ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়।
এই ক্যাবল এর মুল কাজ বিশ্বব্যাপী তথ্য আদান প্রধান। শীঘ্রই হয়তো এর এই মূল কাজের পাশাপাশি মানুষকে সুনামি বা ভূমিকম্প এর আগাম বার্তা পৌঁছে দিবে। এতে করে বিজ্ঞানীরা খুব কাছ থেকে সমুদ্রের নিচে সংঘটিত ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন।
তাছাড়া সমুদ্রের নিচের বিভিন্ন বিষয়ে বিজ্ঞানের জ্ঞানের যে সীমাবদ্ধতা ছিল তাও হয়তো কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, এটি করতে ডাটা ক্যাবলে নতুন কোন যন্ত্র সংযোজন করার দরকার হবে না।
এই ডাটা ক্যাবল মূলত কাজ করে আলোক সিগন্যাল প্রেরণের মাধ্যমে ডাটা প্রেরণ করে। যখন একটি ট্রান্সমিটার থেকে আরেকটি ট্রান্সমিটারে আলোক সংকেত প্রেরণ করা হয় তখন এর যাত্রা পথে কোনো বাঁধা পেলে তথা ভূমিকম্প বা ঢেউ দ্বারা ক্যাবল এর বিকৃতি ঘটলে আলোকসংকেতও একটু বিকৃত হয় যাকে “state of polarization” বলে। পরে এই ডাটা বিশ্লেষণ করে সুনামি বা ভূমিকম্পের আগাম বার্তা পাওয়া সম্ভব। Zhan এর টিম ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২০ এর মধ্যে গুগল এর ১০৫০০ কিলোমিটার ডাটা ক্যাবল ব্যবহার করে ২০ টি ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হন।
Zhan আশা করেন এই নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে মানুষ সুনামি, ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সংকেত অনেক আগে থেকেই পেতে সক্ষম হবে যা মানুষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবং ক্ষতির পরিমাণ কমাতে ভূমিকা রাখবে। তিনি এও বলেন যে, এটি একদম সঠিক এবং পরীক্ষিত একটি পদ্ধতি, তাই মানুষ নিঃসন্দেহে এর উপর ভরসা রাখতে পারে।
জোবায়ের হোসেন সামস/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ দ্য ভার্জ, সাইন্স ম্যাগাজিন