আপনি কি আপনার বন্ধুর সাথে পুলে লাফ দেওয়ার আগে ১,২,৩ গণনা করে লাফ দেওয়া শুরু করেন? যদি এমনটাই করে থাকেন, তাহলে বলা যায় ডলফিনের সাথে আপনার কিছু মিল রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা থেকে জানা যায়, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ব্যাকফ্লিপ সম্পন্ন করতে এবং একে অপরের সঠিক অবস্থান জানার জন্য হুইসেল ব্যবহার করে। মানুষের পরে ডলফিন হলো একমাত্র প্রাণী যারা মানুষের মতো ভোকাল কর্ড এর সাহায্যে শব্দ সৃষ্টি করে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে।
ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী রিচার্ড কনার বলেন, ডলফিনের এই কাজটি সত্যিই আকর্ষণীয়। তিনি আরও বলেন, তিনি প্রথম বারের মতো ডলফিনদের মধ্যে এতটা গভীর সহযোগিতার সম্পর্ক এবং সংলাপ দেখেছেন। তিনি ধারণা করেন, ডলফিনরা পরস্পরের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করে সেই পদ্ধতি বুঝতেও ডলফিনই আমাদের সহযোগিতা করবে।
ডলফিনরা প্রায়ই ফ্রি রোমিং করার মাধ্যমে সংবেদনশীলতা অর্জন করে। তারা দলবেঁধে শিকার করে এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের তাড়িয়ে দেয়। ডলফিনের চলাফেরার ধরণ এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়ার সাথে অন্যান্য প্রাণীরও মিল রয়েছে। আচ্ছা, বলুন তো ডলফিন কিভাবে সংবেদনশীলতা অর্জন করে?
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করেছেন যে, ডলফিন ভোকাল কর্ড এর সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের শব্দ সৃষ্টি করতে পারে। তাই বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের তলদেশে ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোন স্থাপন করে রেখেছেন কয়েক দশক ধরে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা মাইক্রোফোনে রেকর্ডকৃত শব্দ এবং ক্যামেরায় আবদ্ধ হওয়া ভিডিও দেখে নতুন করে গবেষণা শুরু করেন। সত্যিই কি তাহলে ডলফিনরা মানুষের মতো কথা বলতে সক্ষম?
ফ্রান্সের গবেষকরা ৫ টি হাইড্রোফোন একসাথে সংযুক্ত করে স্টার প্যার্টান তৈরি করেন। যার সাহায্যে গবেষকরা নির্ধারণ করতে পারবেন কোন গ্রুপের ডলফিন কথা বলছে। প্যারিস স্লেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবিদ বিশেষজ্ঞ জুলিয়ানা লোপেজ মারুলান্ডা এই পদ্ধতিতে গবেষণা করতে গবেষকদের সহযোগিতা করেন।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণ বিজ্ঞানী স্টিফানি কিং এবং ফ্লোরিডা তাদের ডলফিন গবেষণা কেন্দ্রে ডলফিনের সিনক্রোনাইজ করার শব্দ ট্র্যাক করার জন্য ৪ টি হাইড্রোফোন সেট আপ করেন।
ব্রাসেলসের একটি থিম পার্কে লোপেজ মারুলান্ডা এবং তার সহকর্মীরা দেখতে পান, প্রশিক্ষিত ডলফিনগুলো মাত্র ১.৩১ সেকেন্ডের মধ্যে সিঙ্কের ব্যাকফ্লিপগুলোতে একে অপরের তল স্পর্শ করে। লোপেজ মারুলান্ডা বলেন, “এটি ছিল সত্যিই অসাধারণ একটি ব্যাপার”।
রয়েল সোসাইটির সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয় ডলফিন হুইসেলের মাধ্যমে ৩৩% সিক্রোনাইজ হয়। বিজ্ঞানীরা যখন ডলফিনের সিক্রোনাইজেশন নিয়ে গবেষণা করেন, তখন দেখেন একদল ডলফিন যোগাযোগ করার জন্য ব্যাকফ্লিপের বাটন ক্লিক করে এবং একদল ডলফিন হুইসেল দেয়। কিন্তু গবেষকরা বলেন,যারা হুইসেল দিয়েছিল তারাই ধারাবাহিকভাবে সফল হয়।
গবেষকদের এই গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি, কিভাবে ডলফিনরা একসাথে ভালোভাবে কাজ করার জন্য মানুষের মতো ভোকাল কর্ড ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখতে চায়।
মনোবিজ্ঞানী ডায়ানা রেইস বলেন, গবেষকদের এই গবেষণাটি সত্যিই খুব আকর্ষণীয়। কারণ, এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি ডলফিন কিভাবে তাদের আচরণ সংযত করে।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র : Science Mag