গত ৯ জুন কারেন্ট বায়োলজি নামক জার্নালে এই প্রথম এক বিলুপ্ত বিশাল ডলফিন প্রজাতির প্রায় সম্পূর্ণ কঙালতন্ত্র প্রকাশ করা হয় যেটা বর্তমান দক্ষিণ ক্যারলাইনা‘র আশেপাশে পাওয়া যেত। এই ১৫ ফুট লম্বা ডলফিনটি (Ankylorhiza tiedemani comb. n.) প্রায় ২৫ মিলিয়ন বা আড়াই কোটি বছর আগে অলিগোসিন সময়কালে পৃথিবীর বুকে বিচরণ করতো যেটার অস্তিত্বের কথা এতোদিন শুধুমাত্র পার্শিয়াল রোস্ট্রাম (স্নাউট) নামক ফসিলে পাওয়া গিয়েছে।
গবেষকদের মতে এটার মাথার খুলি, দাঁত, ফ্লিপার (লেজের শেষে সাঁতার সহায়ক অঙ্গ) আর মেরুদন্ডের গঠন প্রমাণ করে এই বিশাল ডলফিন তার সময়কালের সেরা শিকারী ছিল তাছাড়া এই ডলফিনের খুলি বাদে বাকি হাড়গুলো থেকে বুঝা যায়, বর্তমান ব্যালীন তিমি কিংবা দাঁতওয়ালা তিমির কিছু বৈশিষ্ট্য এই ডলফিন প্রজাতি থেকেই সমান্তরাল বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে, কারণ এ তিমি প্রজাতিগুলি এই ডলফিনের মতো একইরকম জলজ আবহাওয়ায় বেড়ে উঠে। বর্তমান ব্যালীন তিমি কিংবা দাঁতওয়ালা তিমির কিছু বৈশিষ্ট্য এই ডলফিন প্রজাতি থেকেই সমান্তরাল বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে, কারণ এ তিমি প্রজাতিগুলি এই ডলফিনের মতো একইরকম জলজ আবহাওয়ায় বেড়ে উঠে।
দক্ষিণ ক্যারোলিনার চালর্সটন কলেজের রবার্ট বোসেনেকার বলেন “ব্যালীন তিমি আর এই ডলফিন যেভাবে আলাদা আলাদাভাবে একই সাঁতারের কৌশল আয়ত্ব করেছে সেটা তাদের আলাদা পূর্বপুরুষের হতে বিবর্তিত হয়েছে এইরকম হওয়াটা আশ্চর্য্যজনক। আরো কিছু উদাহরণ আছে, যেমন লেজের গঠন সরু হয়ে যাওয়া, লেজে কশেরুকার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং হিউমেরাস ছোট হয়ে ফ্লিপারে পরিণত হওয়া।“
তিনি আরো বলেন “বিভিন্ন প্রজাতির সিল আর সি লায়নদের মধ্যে ভিন্ন ধরণের সাঁতার কৌশল কিংবা ভিন্ন রকমের পোস্টক্রেনিয়াল হাড় থাকে। তিমির বিশাল গ্রুপের মধ্যে সাঁতারের গতিতে একই ধরণের বিবর্তন হয়েছে ফ্লিপারে একটা অতিরিক্ত হাড় এবং এর সাইনোভিয়াল জয়েন্টের কারণে।“
যদিও ১৮৮০ এর দশকে দক্ষিণ ক্যারোলাইনার ওয়ান্ডো নদীতে এর খুলির ভাঙ্গা অংশ আবিষ্কৃত হয়, কিন্তু অ্যানকাইলোরিজা গণের খুলি প্রথম আবিষ্কার করেন চালর্সটন মিউজিয়াম অফ ন্যাশনাল হিস্ট্রির কিউরেটর আলবার্ট স্যান্ডার্স। ৯০ এর দশকে একটা গবেষণায় এর মাথার খুলির প্রায় সম্পূর্ণ বর্ণনা পাওয়া যায়।
মার্ক হাভেনস্টাইন নামের একজন বাণিজ্যিক জীবাশ্মবিদ দক্ষিন ক্যারোলিনায় আবাসিক এলাকা নির্মাণের সময় এর জীবাশ্ম পায়, যেটা পরবর্তীতে গবেষণার জন্য দান করে দেয়া হয় মেস ব্রাউন মিউজিয়াম অফ ন্যাশনাল হিস্ট্রিতে। এই জীবাশ্ম থেকে জানা যায় অ্যানকাইলোরিজা এক প্রকার ইকোলজিক্যাল স্পেশালিস্ট। গবেষকদের মতে এই প্রজাতি ‘সুস্পষ্টভাবে বড় দেহের শিকারের প্রতি আকৃষ্ট অনেকটা Killer Whale এর মত।‘
গবেষকদের মতে অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায় অ্যানকাইলোরিজা গণের শিকারী ডলফিন গুলো ছিলো সে সময়ের খাদ্য শৃঙ্খলের সর্বোচ্চ খাদক । ২৩ মিলিয়ন বছর আগে অ্যানকাইলোরিজা বিলুপ্ত হওয়ার পর কিলার স্পার্ম তিমি আর হাঙরদেঁতো তিমি স্কোয়ালোডন বিবর্তিত হয়ে ৫ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত শীর্ষ শিকারীর স্থান দখল করেছিলো।
৫ মিলিয়ন বছর আগে সর্বশেষ কিলার স্পার্ম তিমি মারা যাওয়ার পর শীর্ষ শিকারীর স্থান বরফযুগ পর্যন্ত খালি ছিল আর ১–২ মিলিয়ন বছর আগে সে স্থান দখল করে কিলার তিমি ।
বোসেনেকার বলেন, ‘তিমি আর ডলফিনের বিবর্তনের ইতিহাস যথেষ্ট জটিল যেটা বর্তমান অন্যান্য প্রাণি প্রজাতিতে পাওয়া যায় না। এই ফসিল রেকর্ড বিবর্তনের এক বিশাল ঘুরপথ দেখায় যা বুঝা যায় অ্যানকাইলোরিজার মতো জীবাশ্ম থেকে।‘
তিনি আরো বলেন, অ্যানকাইলোরিজার আরো কিছু জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণা হচ্ছে এর থেকে হয়তো জানা যাবে দ্বিতীয় প্রজাতির অস্তিত্ব কিংবা তরুন অ্যানকাইলোরিজা থেকে বর্তমান ডলফিন ও তিমির সুক্ষ্ণ বিকাশ সম্পর্কে। হয়তো আরো জানার আছে দক্ষিণ ক্যারোলিনার এই ব্যালীন তিমি আর জীবিত জীবাশ্ম ডলফিন থেকে।
‘চালর্সটন, দক্ষিণ ক্যারোলিনাতে অলিগোসিন যুগের আরো কিছু প্রথমদিককার অদ্ভুত আর অনন্য ডলফিন আর ব্যালীন তিমি পাওয়া যায়। কারণ অলিগোসিনকাল এমন একটা সময়, যে সময়কার সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীরা বিরল। তাই চালর্সটনের জীবাশ্ম থেকে এই স্তন্যপায়ীদের প্রথমদিককার বিবর্তন সম্পর্কে জানা যাবে এমনটাই আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
শামস ফারাবি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ সাইটেকডেইলি