পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম জন্ম নিল ৩টি পুরুষাঙ্গ নিয়ে গঠিত এক মানব শিশু। কথাটি শুনে হয়তো অবাক হচ্ছেন! কারণ, বিশ্বে এই প্রথম এমন বিরল শিশুর জন্ম হলো। যার বৈজ্ঞানিক নাম ট্রাইফিলিয়া (Triphallia)।
ইরাকের দুহোক শহরে এই বিরল শিশুর জন্ম হয়। শিশুটি স্বাভাবিক ভাবেই জন্ম নেয়। কিন্তু জন্মের কিছুদিন পরে তার বাবা-মা লক্ষ্য করেন, শিশুটির ১টি স্বাভাবিক পুরুষাঙ্গের গোড়ার দিকে দুই পাশে আরও ছোট ছোট ২টি পুরুষাঙ্গ রয়েছে।
শিশুটির বয়স যখন মাত্র ৩ মাস, তখন তার বাবা-মা তাকে নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। সেই সময় চিকিৎসকরা প্রথমবারের মতো এমন বিরল শিশুর কথা জানতে পারে। শিশুটির বাবা-মা চিকিৎসকদের বলেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার শিশুর অতিরিক্ত পুরুষাঙ্গ ২টি বাদ দিতে।
চিকিৎসকরা শিশুটিকে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে জানান, ৩টি পুরুষাঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুটির ৩টি পুরুষাঙ্গের মধ্যে মাত্র ১টির সাথে মূত্রনালী ছিল। বাকি ২টির সাথে মূত্রনালী ছিল না। তাই সহজেই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হবে।
চিকিৎসকরা আরও জানান, মাতৃগর্ভে থাকাকালীন ভ্রূণ অবস্থায় শিশুটির শরীরে ৩ টি পুরুষাঙ্গ গঠিত হয় এবং জন্মের কিছুদিন পরে তা আস্তে আস্তে বিকশিত হয়।
গত বছরের নভেম্বর মাসে আন্তজার্তিক চিকিৎসা গবেষণা পত্রিকা “ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সার্জারি” কেস রিপোর্টে এই বিরল শিশুর পুরুষাঙ্গ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়।
গবেষণাপত্রে যেসব বিষয়বস্তু ছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলোঃ
কেন ১টির পরিবর্তে ৩ টি পুরুষাঙ্গ নিয়ে শিশুটির শরীর গঠিত? কেন তিনটির মধ্যে ১টি পুরুষাঙ্গের সাথে মূত্রনালী সংযুক্ত এবং বাকি ২টি পুরুষাঙ্গের সাথে কেন মূত্রনালীর সংযোগ নেই?
গবেষণা পত্রটি থেকে আরও জানা যায়, পৃথিবীর ইতিহাসে এটি সত্যি বিরল একটি ঘটনা! “সুপারনিউমারারি” পুরুষাঙ্গ নিয়ে এর আগে কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করে নি। গবেষকরা বলেন, ৫ থেকে ৬ মিলিয়ন জন্ম নেওয়া শিশুদের মধ্যে মাত্র ১জন এমন বিরল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গবেষকরা আরও বলেন, যেসব শিশু বিরল পুরুষাঙ্গ নিয়ে জন্ম নেয়, তাদের পুরুষাঙ্গগুলোর গঠন ও পরস্পরের থেকে ভিন্ন প্রকৃতির হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ৩ টি জননাঙ্গ-কে একত্রে “ট্রাইফিলিয়া” (Triphallia) বলা হয়।
পুরুষাঙ্গ সাধারণত ২ ধরনের টিস্যু থাকে। যেমন- একটির নাম কর্পাস ক্যাভারনোসাম এবং অপরটির নাম কর্পাস স্পঞ্জিওসাম। ১ম ধরনের টিস্যু পুরুষাঙ্গকে উত্তেজিত করতে সহায়তা করে এবং ২য় ধরনের টিস্যু ইউরেথ্রা বা মূত্রনালী তৈরি করে এবং তার মধ্যে দিয়ে বাধাহীনভাবে মূত্র পরিবহণে সাহায্যে করে।
গবেষকরা বলেন, এই ট্রাইফিলিয়া (Triphallia) আক্রান্ত বিরল শিশুটির ৩ টি জননাঙ্গ-এর মধ্যে ১ টিতে মাত্র দুই ধরনের টিস্যুই ছিল এবং বাকি ২টিতে কর্পাস স্পঞ্জিওসাম নামক টিস্যু ছিল না। ফলস্বরুপ, বাকি পুরুষাঙ্গগুলোর সাথে কোনো মূত্রনালী ও তৈরি হয়নি এবং তাই অস্ত্রোপচার করতে চিকিৎসকদের সুবিধা হয়েছিল।
চিকিৎসকরা শিশুটির পারিবারিক ইতিহাসেও কোনো জিনগত অস্বাভাবিকতা খুঁজে পান নি। চিকিৎসকরা আরও বলেন, মাতৃগর্ভে থাকা কালীন কোনো ঔষুধের প্রভাব ও পড়ে নি শিশুটির শরীরের।
সেন্ট লুই বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অব মেডিসিনের অ্যানাটমি অধ্যাপক জন মার্টিন বলেন, কেন এই অতিরিক্ত পুরুষাঙ্গ নিয়ে মানব শিশুটি জন্ম নেয়, তার রহস্যে এখনো উদঘাটন সম্ভব হয় নি।
তিনি এবং তার সহকর্মীরা আরও বলেন, আজ থেকে ২১ বছর পূর্বে অর্থাৎ ২ooo সালে গবেষকরা এমন একজন ব্যক্তির সন্ধান পায়, যার বয়স ছিল ৮৪ বছর এবং তার কেসটি ছিলো ডাই ফিলিয়া বা ২টি পুরুষাঙ্গ ছিল। বৃদ্ধটির ২টি পুরুষাঙ্গের সাথেই মূত্রনালী যুক্ত ছিল। তাই চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করতে ব্যর্থ হন এবং পরে লোকটি মৃত্যুবরণ করেন।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসুত্রঃ livescience.com, technology.inquirer.