অ্যামেরিকার ‘ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-অশকশ’-এ ডাইনোসরের দাঁত নিয়ে গবেষণায় প্যালায়োজিওগ্রাফি, প্যালায়োক্লাইমেটোলজি এবং প্যালায়োইকোলজি সম্পর্কিত জার্নালে যৌথভাবে প্রকাশিত ফলাফল থেকে দেখা যায়, ডাইনোসর কিংবা এর স্বজাতিরা সাধারণত কখনো দল বেঁধে শিকার ধরেনি, বরং তারা এককভাবেই শিকার ধরত!
১৯৯৩ সালের ব্লকবাস্টার ‘জুরাসিক পার্ক’ মুভির কারণে ডাইনোসর (বৈজ্ঞানিক নাম- Deinonychus antirrhopus) খুবই বিখ্যাত হয়েছিল। মুভিটিতে আরো দেখানো হয়েছিল যে ডাইনোসরেরা উচ্চ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন এবং খুব চালাক শিকারি, যারা বড় কোনো শিকার ধরার জন্যে দলবেঁধে কাজ করত।
বিখ্যাত মেরুদণ্ডী প্রাণি ফসিলবিদ এবং উইজ আর্থ সায়েন্স মিউজিয়াম অব ইউডাব্লিউও ফক্স সিটিজ ক্যাম্পাস এর পরিচালক জোসেফ ফ্রেডরিকসন বলেছেন, “মুভিটিতে হিংস্র ডাইনোসরগুলোকে নেকড়েদের মত দলীয়ভাবে শিকার ধরতে দেখা গিয়েছে। তাদের এরূপ আচরণের ভিত্তি এখনও অবিশ্বাস্য। যেহেতু আমরা কখনো নিজ চোখে শিকার করতে দেখিনি, তাই আমাদের অনুমানের ভিত্তিতেই তাদের জীবনের সকল আচরণ ব্যাখ্যা করতে হবে।”
“আমরা এ গবেষণায় একটি প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম যে, বয়ঃবৃদ্ধির সাথে সাথে ডাইনোসরের দল বেঁধে শিকার ধরা এবং তাদের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে কিছুটা পারস্পরিক সামঞ্জস্য বিদ্যমান,” তিনি বলেছিলেন।
উক্ত গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের সাথে কমোডো ড্রাগন (গুইসাপ) নামক সরীসৃপের আচার আচরণে কিছুটা সাদৃশ্য দেখতে পান। আর এই ‘কমোডো ড্রাগন‘ নামক সরীসৃপ জাতের মধ্যে এক বিচিত্র রকমের প্রণোদনা দেখা যায়; এদের শাবকেরা তাদের স্বজাতির মাধ্যমে নিজেরা প্রায়শঃই শিকার হবার দরুন জীবন নিয়ে খুব বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
তাই তারা জন্মের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বিভিন্ন গাছের ডালপালার আড়ালে আশ্রয় নেয়, ফলে তারা তাদের স্থলে বসবাসকারী বাবা কিংবা মা থেকে দূরে থাকার কারণে পর্যাপ্ত আহার দ্রব্যাদি পায় না। আর তাই বয়ঃবৃদ্ধির সাথে সাথে খাবার যোগানের তাগিদে তাদের এককভাবে শিকারে বেরুতে হয়। মজার ব্যাপার, দলবেধে শিকার করা প্রাণীরা কখনোই এমন কোনো পরিবেশের সংস্পর্শে আসে না।
যাহোক, পরবর্তীতে উক্ত গবেষণা করবার জন্য বিজ্ঞানীরা হিংস্র Deinonychus গণের ডাইনোসরের দাঁত দিয়ে কাজ চালিয়েছিলেন, উক্ত ডাইনোসরগুলো উত্তর আমেরিকায় ক্রেটাশিয়াস পিরিয়ডে ১১৫ থেকে ১০৮ মিলিয়ন বছর আগে বাস করত।
ফ্রেডরিকসন বলেছিলেন, “এ সকল প্রাণিদের খাদ্য এবং জলের উৎস সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পেতে ফসিলে কার্বন এবং অক্সিজেনের স্থিতিশীল আইসোটোপগুলি পর্যবেক্ষণ করা হয়। তথাপি আমরা একই ভূতাত্ত্বিক এলাকার একটি কুমির এবং একটি নিরামিষাশী ডাইনোসরকেও পর্যবেক্ষণ করেছি।”
পরিশেষে তিনি ব্যাক্ত করেন, “প্রকৃতপক্ষে এরকম কিছু আমরা আশা করতেই পারি যখন কোনো প্রাণির বাবা-মা তাদের সন্তানদের জন্যে পর্যাপ্ত খাদ্যের যোগান দিতে অপারগ থাকে। এজন্যেই আমরা বিশ্বাস করি যে জুরাসিক পার্ক মুভিতে হিংস্র প্রাণীদের এই আচরণের ব্যাপারে ভুল দেখানো হয়েছিল।” অর্থাৎ, ঐসকল হিংস্র ডাইনোসরেরা দল বেঁধে শিকার ধরতো না, বরঞ্চ এককভাবে শিকার ধরতো।
হাসান সৈকত/ নিজস্ব প্রতিবেদক