জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার এক তথ্যমতে লকডাউন পরিস্থিতিতেও বায়ুমন্ডলে জলবায়ু উত্তপ্তকারী গ্রীনহাউজ গ্যাস সমূহের পরিমাণ রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে।
বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন গ্যাসসমূহের মধ্যে প্রধান গ্যাস দুটি অর্থাৎ নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন এর পরিমাণ যথাক্রমে ৭৮.০৮৪% ও ২০.৯৪৬%। এছাড়াও বায়ুমন্ডলে রয়েছে আরও বিভিন্ন ধরনের গ্যাস (কার্বন ডাই-অক্সাইড, হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেন ইত্যাদি)। বায়ুমন্ডল উত্তপ্তকারী গ্যাস সমূহ মূলত গ্রীনহাউজ গ্যাস নামে পরিচিত। যেসকল গ্যাস তাপীয় অবলোহিত সীমার মধ্যে বিকিরিত শক্তি শোষণ ও নির্গত করে তাদের গ্রীনহাউজ গ্যাস বলা হয়।
গ্রীনহাউজ গ্যাসগুলো হচ্ছে “কার্বন ডাই-অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন, ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন ও হাইড্রো ফ্লোরো কার্বনসমূহ”। গ্রীনহাউজের মধ্যে অন্যতম প্রধান গ্যাসটি হচ্ছে “কার্বন ডাই-অক্সাইড”, বায়ুমন্ডলে যার পরিমাণ প্রায় ০.০৩৫%।
এ বছর ভ্রমণ ও অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ‘WMO‘ এর সমীক্ষা জানাচ্ছে গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ ‘৪.২%’ থেকে ‘৭.৫%’ এর মধ্যে হ্রাস পেয়েছে এবং সংস্থাটি বলছে গ্যাসের এই অবিচ্ছিন্ন পরিবর্তন একটি ‘ছোট্ট ব্লিপ’ এর ন্যায় যা পূর্বের বছরসমূহের রেকর্ডের তুলনায় কম।
WMO এর প্রতিবেদন দুটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গার যথাক্রমে ‘২০১৯’ ও ‘২০২০’ সালের গড় কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ পরিমাণ প্রকাশ করে যা নিম্নরুপঃ
১ম জায়গা: মাওনা লোয়ার বেঞ্চমার্ক স্টেশন, হাওয়াই
বছর ২০১৯ (সেপ্টেম্বর )পরিমাণঃ ৪০৮.৫ পিপিএম
বছর ২০২০(সেপ্টেম্বর )পরিমাণঃ ৪১১.৩ পিপিএম
২য় জায়গা: তাসমানিয়া কেপ গ্রিম, অস্ট্রেলিয়া
বছর ২০১৯(সেপ্টেম্বর) পরিমাণঃ ৪০৮.৬পিপিএম
বছর ২০২০(সেপ্টেম্বর) পরিমাণঃ ৪১০.৮ পিপিএম
অর্থাৎ উক্ত পরিবর্তন জানায় যে পুরো ‘২০১৯’ এর গড় পরিমাপ দুই স্তরে ‘বৃদ্ধি উদ্দীপক’ হিসেবে কাজ করে যা গত দশকের গড় হারের তুলনায় বেশি। বিজ্ঞানীদের গণনা অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে এই উত্তাপ ‘১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস’ অবধি সীমিতকরণের লক্ষ্যে ভালো সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে ‘২০৩০ সালের’ মধ্যে অর্ধেক নির্গমন হ্রাস অপরিহার্য।
‘১৯৬০ সাল থেকে ২০২০ সাল’ অব্দি গ্রাফের উর্ধ্বমুখী সূচকে নিঃসরণ হার এই লকডাউনে সামান্য পতন কেবলমাত্র একটি ‘ছোট্ট ব্লিপ‘।
“WMO” এর সেক্রেটারি জেনারেল পেটারি তালাস বলেছেন “আমরা ২০১৫ সালে ‘৪০০পিপিএম’ গ্লোবাল (বার্ষিক) প্রান্তকে লঙ্ঘন করেছি এবং এর চার বছর পরে আমরা ‘৪১০ পিপিএম’ ছাড়িয়েছি এবং এ জাতীয় হারের নিদর্শন আমাদের রেকর্ডে আর কখনও দেখা যায়নি”। কার্বন ডাইঅক্সাইড বহু শতাব্দী ধরে থেকে যায় এবং পৃথিবী সর্বশেষ এমন তুলনীয় ঘনত্বের অভিজ্ঞতার সম্মূখীন হয়েছিলো ‘৩বছর’ পূর্বে যখন তাপমাত্রা ছিলো ‘২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস’ উষ্ণ ও সমুদ্রের উচ্চতা ‘১০-২০ মিটার’ এবং জনসংখ্যা প্রায় ‘০.৭ বিলিয়ন’ কম ছিলো বর্তমানের তুলনায়।
সোমবার “WMO” এর গ্রীনহাউজ গ্যাস বুলেটিন জানায় ‘১৭৫০সালের’ তুলনায় এখন কার্বন ডাইঅক্সাইড এর পরিমাণ প্রায় ‘৫০%’ বেশি এবং গ্রীনহাউজ গ্যাস (কার্বন ডাই-অক্সাইড) দ্বারা শোষিত তাপ ‘দুই-তৃতীয়াংশ’ আটকা পরে ‘১৯৯০সালের’ পর এই প্রভাব ‘প্রায় ৪৫%’ বৃদ্ধি পেয়েছে।১৭৫০ সালের তুলনায় গবাদিপশু, ধানক্ষেত, জীবাশ্ম জ্বালানী শোষণে উৎপাদিত মিথেন হিটিং এফেক্টর গ্রীনহাউজ গ্যাস ‘১৭%’ বৃদ্ধির জন্য দায়ী এবং কৃষিকাজে অতিরিক্ত সার ও বন জ্বালানীর অতিরিক্ত ব্যবহার উত্তাপকারী গ্যাসের পরিমাণ ‘২৩%’ বাড়ায় । এই ঘনত্ব প্রাক- শিল্প স্তরের ‘আড়াই (২.৫) গুন’।
তালাস আরও বলেছেন “আমাদের শিল্প, শক্তি ও পরিবহন ব্যবস্থার সম্পূর্ণ রূপান্তর প্রয়োজন। পরিবর্তনগুলি অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী মূল্যের এবং প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব এবং এটি কেবল আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রভাব ফেলবে”। এটা ভাল বিষয় যে অধিক সংখ্যক দেশ এবং সংস্থাগুলি কার্বন নিরপেক্ষতার জন্য নিজেকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছে।
অর্থাৎ দূরদর্শী ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতা সৃষ্টি এই কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হার কমাতে সাহায্য করবে যা লকডাউন পরিস্থিতিতে সামান্য “ছোট ব্লিপ” বৈ কিছুই হবে না।
তন্ময় ইসলাম তানভীর/ নিজস্ব প্রতিবেদক
আরো পড়ুন
নিউইয়র্ক শহরের ৭ গুণ আকারের বরফখণ্ড এগিয়ে আসছে পেঙ্গুইন কলোনির দিকে কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম: বর্তমান সময়ের অন্যতম স্বাস্থ্যঝুঁকি |
তথ্যসূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান