আধুনিক কালে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক ধরনের পদ্ধতি বের হয়েছে। তেমনই এক পদ্ধতি হলো ভ্যাসেকটমি– পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। ভ্যাসেকটমি হলো পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বা বন্ধ্যাকরণের আধুনিক পদ্ধতি। এর মাধ্যমে স্থায়ীভাবে কোনো পুরুষকে সন্তান জন্মদানে অক্ষম করে ফেলা যায়।
খুব ছোট এক অস্ত্রোপচার এর মাধ্যমে এটি সম্পন্ন করা হয়। প্রথমে অন্ডকোষের গায়ে ছোট এক ছিদ্র করা হয়। এরপর অল্প বের করে আনা হয় শুক্রাণু পরিবহন নালিকা, নালিকার দুটো স্থানে হাল্কা কেটে ফেলা হয় আংশিকভাবে। এরপর তাপ প্রয়োগে বন্ধ করে দেওয়া হয় দুটো মুখ। টাইটেনিয়াম ক্লিপ দ্বারা একটা মুখ আটকে আংশিক কাটা অংশদ্বয়ের মাঝটুকু কেটে ফেলা হয় যাতে এরা পুনরায় মিলিত না হতে পারে। একই প্রক্রিয়া দ্বিতীয় অংশেও চালানো হয়৷ ফলে শুক্রাণু আর অন্ডকোষ হতে পুরুষাঙ্গে পৌঁছতে পারেনা।
একজন পুরুষের দুটি অণ্ডকোষেই শুক্রাণু উৎপাদিত হয়। এরপর সেসব শুক্রাণু একটি নালী দিয়ে মূত্রাশয় হয়ে জননাঙ্গ দিয়ে বের হয়ে আসে। ওই নালীগুলো কেটে ফেলার পর দুটো অণ্ডকোষই স্টিচ বা সেলাই করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই কাজটি করার সময় অণ্ডকোষেও একটু ছোট কাটা-ছেঁড়া করতে হয়।
প্রথমদিকে এই পদ্ধতিটিই অনুসরণ করা হত। তবে ১৯৭৪ সালে এক চীনা সার্জন আরো উন্নত পদ্ধতিতে ভ্যাসেকটমি করার পন্থা উদ্ভাবন করেন। তার উদ্ভাবিত পদ্ধতির নাম নো-স্ক্যালপেল ভ্যাসেকটমি। এই পদ্ধতিতে খুবই ছোট্ট ছিদ্র করে অণ্ডকোষদ্বয় থেকে মূত্রাশয়ে শুক্রাণু চলাচলের নালী দুটো কেটে ফেলা হয়। এতে কোনো সেলাইও লাগে না। আর ছিদ্রটি নিজে নিজেই সেরে যায়।
এই পদ্ধতিটিই গত ৪০ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সবচেয়ে বেশি। কারণ এতে রক্তপাত ও ব্যথা হয় খুবই কম।
সুবিধা:
ভ্যাসেকটমির বড় সুবিধা হলো স্থায়ীভাবে ঝামেলাহীন ও নিরাপদ যৌনমিলনের সুযোগ। ভ্যাসেকটমির মূল উদ্দেশ্য হলো অনিয়ন্ত্রিত জন্মনিয়ন্ত্রণ। আবার অনেকে নির্দিষ্ট সময় পর সন্তান নিতে চান না, সেক্ষেত্রে এটি অনেক ইফেক্টিভ ও কম খরচের প্রক্রিয়া।
এটি নারীর গর্ভনিয়ন্ত্রণ (Tubal ligation) এর মতো জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ নয়। পুরুষের প্রজননতন্ত্র থাকে দেহের বাইরে, এ সার্জারিতে ব্যক্তিকে অজ্ঞান করারও প্রয়োজন পড়ে না।
ভ্যাসেকটমি নিয়ে অনেকের কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। যেমন : অনেকের ধারণা এটির কারণে যৌন উত্তেজনা কমে যায়, যা নিতান্তই অমূলক। ভ্যাসেকটমিতে শুধু শুক্রাণু গমনের নালিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সার্জারির পর এক মাস যৌনমিলন বন্ধ রাখতে বলা হয়, বা প্রয়োজনীয় প্রটেকশন নিতে বলা হয়, কারণ ভ্যাসেকটমির পরেও কিছু শুক্রাণু পুরুষাঙ্গতে থেকে যায়। কিছুদিন পর আর এই শুক্রাণু থাকে না, বের হয়ে যায়।
অনেকে এটাও মনে করেন যে, ভ্যাসেকটমির কারণে ক্যান্সার হয়। কিন্তু এর কোনো সুষ্ঠু প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। অনেকের মতে বেশ কিছু ব্যথার সৃষ্টি হয়, কিন্তু মূল কথা হচ্ছে যে সার্জারির পর কিছুদিন ব্যথা থাকলেও পরে আর থাকেনা।
ঝুঁকি:
১. ভ্যাসেকটমি করানোর আগে ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে হবে যে, সে ভবিষ্যতে আর সন্তান নিতে চান না/ বাবা হতে চায় না। যদিও রিভার্স ভ্যাসেকটমি করানো সম্ভব, কিন্তু সেই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল, জটিল। আর তাতে গ্যারান্টি নেই যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে ইফেক্টিভ হবে কি না।
২. টেস্টিকুলার পেইন কিংবা টেস্টিকুলার ডিজিজ থাকলে ভ্যাসেকটমির জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারেন।
সার্জারি পরবর্তী সমস্যা:
১. পুরুষাঙ্গতে ব্লিডিং (রক্তক্ষরণ) বা ব্লাড ক্লট (রক্ত জমাট বাঁধা) দেখা দিতে পারে।
২. বীর্যতে রক্ত পাওয়া যেতে পারে।
৩. অন্ডকোষ ঝুলে যেতে পারে।
এগুলো সবই ক্ষণিকের জন্য, ১-২ সপ্তাহ পর ঠিক হয়ে যায়।
মিথিলা ফারজানা মেলোডি/ নিজস্ব প্রতিবেদক