আমরা প্রায় শুনি যে, কম বয়সী ভার্সিটিতে পড়ুয়া ছেলে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। কয়েকদিন আগে ভারতীয় অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্লাও ৪০ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেল। তবে কম বয়সী মেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে, এমন সংবাদ খুব কমই পেয়ে থাকি। মেয়েদের অপেক্ষা ছেলেদের হার্ট অ্যাটাক-এর ঝুঁকি বেশি কেন? এর পেছনে কি কোন যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে? -চলুন বিস্তারিত জানা যাক।
প্রথমত মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি। ছেলেদের চেয়ে ৭-১০ বছর পর মেয়েদের হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়। যুক্তরাজ্যে ৭ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন এবং ১১ জন মহিলাদের মধ্যে ১জন হৃদরোগে মারা যায়। কিন্তু ছেলে বেশি কেন?
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হার্ট গড়ে প্রতি মিনিটে প্রায় ৭০-৮৫ বার স্পন্দিত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক ছেলের হৃদস্পন্দন গড়ে প্রতি মিনিটে ৭০-৭২ বার স্পন্দিত হলেও, প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ৭৮-৮২ বার স্পন্দিত হয়। এই পার্থক্য হয় মূলত হার্টের আকারের জন্য, যা সাধারণত আকারে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ছোট। মেয়েদের হার্ট ছোট হওয়ায় প্রতিটি হার্টবীটে কম রক্ত পাম্প হয়, যা ছেলেদের চেয়ে ১০% কম। আর ছেলেদের মতো আউটপুট মেলাতে দ্রুত হারে বীট করা প্রয়োজন। তাই যখন একজন মেয়ে মানসিক চাপে থাকে, তার পালস রেট বেড়ে যায় এবং হার্ট আরো বেশি রক্ত পাম্প করে। কিন্তু যখন একজন ছেলে চাপে থাকে, তখন তার হার্টের ধমনী সংকুচিত হয়ে তার রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা হার্টের জন্য ক্ষতিকর। আর এই উচ্চ রক্তচাপ হঠাৎ মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
অন্যদিকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে সবার মধ্যেই হার্টের সেপটাল এবং প্রাচীরের পুরুত্ব বৃদ্ধি পায়, তবে বাম ভেন্ট্রিকুলার ব্যাসের ফিজিওলজি সেকশন শুধুমাত্র ছেলেদের মধ্যে বৃদ্ধি পায়। ফলাফল হলো ছেলেদের মধ্যে মায়োকার্ডিয়াল ভরের ক্ষতি হয় কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে হয় না। ছেলেদের বয়স বাড়ার সাথে প্রতিদিন ১ গ্রাম করে কার্ডিয়াক ভর হারায়, যা প্রায় ৬৪ মিলিয়ন কার্ডিয়াক মায়োসাইটের সমতুল্য। কিন্তু মেয়েদের হার্টের মায়োসাইট সংখ্যা এবং আকার সংরক্ষিত থাকে, বয়সের সাথে পরিবর্তন হয় না। তাই কার্ডিয়াক ফাংশনের ক্ষেত্রে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ডায়াস্টোলিক ফাংশন ভাল, তবে এটি সবার ক্ষেত্রেই বয়স বৃদ্ধির সাথে হ্রাস পায়। এছাড়াও, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের সিস্টোলিক ফাংশন বেশি হ্রাস পায়।
সেক্স হরমোনও হার্টের কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন- ইস্ট্রোজেনকে কার্ডিওপ্রোটেক্টিভ বলে মনে করা হয়, অন্যদিকে টেস্টোস্টেরন হার্টের কার্যকারিতার জন্য ক্ষতিকর। আর মেয়েদের হার্ট সংরক্ষণকারী হরমোন ইস্ট্রোজেনের পরিমান বেশি থাকে আর ছেলেদের কম থাকে। যদিও মেয়েদেরও পোস্টমেনোপজের পর লেভেলটা কমে যায়। পোস্ট মেনোপজে মেয়েদের টেস্টোস্টেরন বেশি উৎপন্ন হলেও ছেলেদের শরীরে স্বাভাবিকভাবেই মেয়েদের তুলনায় ১০ গুণ বেশি টেস্টোস্টেরন উৎপন্ন হয়। এসব কারণেই ছেলেদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি এবং মেয়েদের তুলনায় ৭-১০ বছর আগেই হার্টের সমস্যার সূচনা হয়।
এছাড়াও ছেলেদের ঝুঁকি বেশি হওয়া বা কম বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আরও কিছু কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা। এর মধ্যে কিছু কারণ যেমন- মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি চ্যালেঞ্জিং চাকরি করে এবং মানসিক চাপের সঙ্গে বিভিন্নভাবে মোকাবিলা করে। তারা মেয়েদের তুলনায় স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণের প্রতি কম মনোযোগী। বিশেষত ধুমপান এবং অ্যালকোহল পানে ছেলেরা খুবই কম সচেতন, যা হার্টের জন্য বেশ ক্ষতিকর।
অতএব, আমরা কারণগুলো পেলাম, কেন ছেলেদের হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি বেশি। এখন, আমার ভাইদের প্রতি পরামর্শ- এমনিতেই আপনাদের ঝুঁকি বেশি তার উপর ক্ষতিকর অভ্যাস যেমন ধুমপান, সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ইত্যাদি অভ্যাস বানিয়ে, কম বয়সেই নিজের হার্টটাকে অসুস্থ করে তুলবেন না।
তানজিনা সুলতানা শাহীন/ নিজস্ব প্রতিবেদক