চোখের পাতা লাফানো বা Eye Twitching -এর কারণ নিয়ে প্রচলিত আছে অনেকগুলো কুসংস্কার, যার কিছু আছে খুবই হাস্যকর, আবার সেগুলো অনেকে গুরুত্বদিয়ে মেনেও চলে! এই বিষয়টা যতটা সাধারণ ঠিক ততটাই বৈচিত্র্যময় কুসংস্কারাচ্ছন্ন। এমন খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই খুঁজে পাওয়া যাবে, যার জীবনে একবারও এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় নি। চোখের পাতা লাফানো নিয়ে যত কুসংস্কার প্রচলিত আছে তার মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত- ডান চোখ লাফালে বা কাঁপলে ছেলেদের জন্য সৌভাগ্য আর মেয়েদের ক্ষেত্রে তা দুর্ভাগ্য বয়ে আনে। আবার অন্য দিকে বাম চোখ লাফালে বা কাঁপলে ছেলেদের জন্য তা দুর্ভাগ্যের প্রতীক এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে তা সৌভাগ্য বয়ে আনে।
এ-তো গেল কুসংস্কারের কথা, এখন চলুন জেনে আসি চিকিৎসা বিজ্ঞান চোখের পাতা লাফানো সম্পর্কে কি বলে? কেন এমন হয়? কিভাবে এর থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়? এটা কি কোন দুশ্চিন্তার কারণ?
চোখের পাতা লাফানো উপসর্গটিকে যতটা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের চোখে দেখা হয় বিষয়টি কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক চিন্তার কারণ ও বটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোখের পাতা লাফানো বিষয়টিকে আমলে না নেওয়ার মূল কারণ হলো অধিকাংশ সময়ই কিছুদিন পর সেটা আপনা-আপনি উধাও হয়ে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি যদি উল্টো হয় ! তখন আমাদের কি করনীয় ?
চোখের পাতা লাফানো কখনও কখনও বংশগত কারণেও হয়ে থাকে, যাকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়ঃ
- Eyelid myokymia: সাধারণ বা কম গুরুতর অবস্থা যে পর্যায়ে চিকিৎসার দরকার তেমন হয় না।
- Benign essential blepharospasm: এই অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত সংকোচনের দরুন বারবার চোখের পাতা আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়ে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যার থেকে নিরাময়ের একমাত্র উপায় দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা।
চোখের পাতা লাফানোর কারণ:
চোখ কাঁপানোর সঠিক কারণ জানা যায়নি, তবে কিছু কিছু কারণ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। যেমন:
-
অপর্যাপ্ত ঘুম
-
কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
চোখের যত্নে করণীয়:
-
ছোট মাছ, সবুজ শাকসবজি এবং সিজনাল ফল চোখের জন্য বিশেষ উপকারী।
-
সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে কমপক্ষে দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন, তবে ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী এর বিভিন্নতা দেখা যায়।
-
প্রতি বিশ মিনিট পর ২০ ফিট দূরে কোনো কিছুর দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকার অভ্যাস করতে হবে। এই নিয়মটি ২০-২০-২০ নামেও পরিচিত। এতে চোখ বিশ্রাম পাবে, ধকল কমবে।
এ থেকে পরিত্রান পেতে তাৎক্ষণিক কি কি করতে পারেন:
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চোখের পাতা লাফানো আপনাআপনি উধাও হয়ে যায়, তবে কিছু কিছু কাজ তাৎক্ষণিক উপকার দিতে পারে। যেমন:
-
পর্যাপ্ত ঘুম
-
ক্যাফেইন গ্রহণ কমিয়ে দেওয়া
-
শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ বা ব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো
-
চোখকে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করতে কৃত্রিম আই ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।
কোন কোন রোগে চোখ পাতা লাফানো উপসর্গ দেখা যায়:
মস্তিস্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন ব্যাধি যা চোখের পাতা লাফানোর সাথে সম্পর্কযুক্ত:
কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন:
চোখের পাতা লাফানোর পাশাপাশি আপনার যদি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি বিদ্যমান থাকে তবে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন:
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া।
-
চোখের উপরের পাতা ঝুলে যাওয়া।
-
কয়েক সপ্তাহ ধরে চোখের পাতা লাফানো।
সাধারণত বেশিরভাগ চোখের পাতার কাঁপুনি তেমন কোনো কারণ ছাড়াই হয়, যা পরবর্তীতে আপনাআপনি সেরেও যায়। আবার দীর্ঘসময় ধরে এর উপস্থিতি বড়ো কোনো রোগেরও কারণ হতে পারে, তাই সবসময়ই সমস্যা হলে তা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখিয়ে নেওয়াই উত্তম!
নিজস্ব প্রতিবেদক/ মোঃ গালীব হাসান