পুরো বিশ্ব যখন করোনা সামলাতে ব্যস্ত, এর মাঝেই চীনে নতুনভাবে ছড়াচ্ছে আরেকটি ভাইরাস। Severe Fever with Thrombocytopenia Syndrome (SFTS) নামের এই রোগটিতে এবছরে এখন পর্যন্ত মারা গিয়েছেন সাত জন এবং বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০। আর এই রোগটি জন্য দায়ী ভাইরাসটি হলো Severe Fever with Thrombocytopenia Syndrome Virus (SFTSV)। এটি একটি Tick Borne Virus যা মানুষের মাঝে সংক্রমিত হয় একধরণের ছোটো পোকা বা বাগের কামড়ের মাধ্যমে।
পূর্ব চীনের জিয়াংসু এবং আনহুই প্রদেশে প্রথমে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত গবেষকদের দেওয়া তথ্যমতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৩০% রোগীর মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। এবং এর ছড়ানোর হার ও মৃত্যুঝুঁকি বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (WHO) একে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দেওয়া ১০ টি রোগের তালিকাভুক্ত করেছে।
ভাইরোলজিস্ট বা ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি এশিয়ান ক্ষুদ্র পোকা Haemaphysalis longicornis এই ভাইরাসটির প্রধান বাহক। কৃষক, শিকারি, বা যাদের বাসায় পোষা প্রাণি যেমন বিড়াল বা কুকুর বা অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণি যেমন গরু, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি আছে, তারা এই রোগের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছেন। এই পোকা গুলো এই প্রাণিদের দেহে পরজীবী হিসেবে থাকে এবং সেখান থেকে মানুষের কাছে স্থানান্তরিত হতে পারে। সাধারণত এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত না হলে এই প্রাণি গুলো SFTS এর কোনো লক্ষণ প্রকাশ করেনা। সবচেয়ে আশংকাজনক হলো, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে রক্ত বা মিউকাসের মাধ্যমে।
SFTSV আক্রান্তের লক্ষণ:
গবেষকদের দেওয়া তথ্যমতে ভাইরাসটি মানুষের দেহে ৭ থেকে ১৩ দিন সুপ্তাবস্থায় থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে নিম্নোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা যায়:
১। জ্বর
২। অবসাদ
৩। মাথাব্যথা
৪। ঠান্ডা–সর্দি ভাব
৫। লিম্ফাডেনোপ্যাথী
৬। অরুচি
৭। ডায়রিয়া
৮। বমি
৯। পেটব্যথা
১০। দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
১১। র্যাশ বা চুলকানি ইত্যাদি।
তবে আশার বিষয় হলো, এই Tick Borne Virus টি নতুন কিছু নয়। বিজ্ঞানীরা এটি সর্বপ্রথম ২০০৯ সালে শনাক্ত করেছিলেন চীনের হুবেই এবং হিনান প্রদেশের গ্রাম্য অঞ্চলে। এখন পর্যন্ত চীনের বাহিরে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে। ২০১৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়াতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ৩৬, যা ২০১৭ তে বেড়ে দাঁড়ায় ২৭০ এ। চীনে ২০১০ সালে ৭১ টি কেস শনাক্ত করা হয়েছিলো যা ২০১৬ সালে বেড়ে হয় ২,৬০০।
এনসিবিআই এর তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত এটি নিশ্চিতভাবে নিরাময় করে এমন কোনো ভ্যাক্সিন পাওয়া না গেলেও Favipiravir এর নিরাময়ের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ঔষধ। তবে অন্যান্য সব সময়ের মতোই, “প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে উত্তম”– তাই বসন্ত থেকে গ্রীষ্মকাল, যে সময়ে আউটডোর এক্টিভিটি বেশি হয়, সে সময়ে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগের ছড়ানোর হার কমানো যাবে, এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকরা।
সাদিয়া বিনতে চৌধুরী/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, উইকিপিডিয়া, সাইন্সডিরেক্ট