চিনাবাদাম, খুবই পরিচিত একটি উদ্ভিজ্জ প্রোটিন। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, চিনাবাদাম প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে এলার্জি সৃষ্টি করে। এলার্জি এবং ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজির জার্নালে এবিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে গবেষকরা বলেন, প্রতি ৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মাঝে ১ জন বা ১৭% মানুষের চিনাবাদাম এলার্জি দেখা যায়, এবং তাদের বয়স ছিল ১৮ বছর বা তার বেশি।
ইলিয়েন নর্থ- ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফুড এলার্জি এবং অ্যাজমা রিসার্চের পরিচালক ডঃ রুচি গুপ্ত বলেন, পেডিয়াট্রিক সমস্যার কারণে চিনাবাদাম এলার্জি হয়ে থাকে। তবে শিশুদের তুলনায় প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে এই ধরনের এলার্জি বেশি দেখা যায়।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় জানা যায়, ২৫-৪o% ব্যক্তি রয়েছে যাদের চিনাবাদাম (মাটির নিচের বাদাম) এবং গাছের বাদাম (কাঠবাদাম, কাজুবাদাম ইত্যাদি) উভয়তেই এলার্জি রয়েছে। ত্বকের স্পর্শে বা শ্বাস নেওয়ার সময় যদি চিনাবাদামের ধুলা শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে তখন বেশির ভাগ এলার্জি যুক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এলার্জি শুরু হয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে চিনাবাদামের তেল দিয়ে তৈরিকৃত খাবার খেলেও এলার্জি হতে পারে।
চিনাবাদাম এলার্জির লক্ষণসমূহঃ
সাধারণত চিনাবাদাম এলার্জির প্রতিক্রিয়া কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রকাশ পায়। যেমন-
১. গলায় আটকে যাওয়া।
২. শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া।
৩. ত্বকে লালচে ভাব প্রকাশ।
৪. মুখ বা গলাতে চুলকানি।
৫. ডায়রিয়া, বমি -বমি ভাব, পেট ব্যথা।
৬. সর্দি।
অ্যানাফিল্যাক্সিস মূলত চিনাবাদাম এলার্জির কারণে হয়। এটি খুবই মারাত্মক রোগ এবং শরীরকে মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই রোগ হলে গলা ফুলে যায়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, মাথা ঘোরে এবং অজ্ঞান হওয়ার সম্ভাবনা ও থাকে।
চিনাবাদাম এলার্জি বিভিন্নভাবে সৃষ্টি হতে পারে। যেমন-
১. সরাসরি যোগাযোগেঃ চিনাবাদাম এলার্জির সর্বপ্রধান কারণ হলো চিনাবাদাম যুক্ত খাবার খাওয়া। কখনো কখনো চিনাবাদাম ত্বকের সংস্পর্শে আসলে ও এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে।
২. ক্রস যোগাযোগঃ এটি মূলত পরোক্ষভাবে এলার্জি সৃষ্টির কারণ হতে পারে। যেমন-কোনো পণ্যে অনিচ্ছাকৃতভাবে চিনাবাদামের উপস্থিতি বা প্রক্রিয়াজাত করার সময় অসাবধানতার কারণে কোনো খাবার যদি চিনাবাদামের সংস্পর্শে আসে তখন এলার্জি হতে পারে।
৩. শ্বসনঃ চিনাবাদামের ধুলা বা কোনোভাবে বায়ুবাহিত হয়ে যদি শ্বাসনালিতে সেগুলো প্রবেশ করে তাহলে এলার্জি হতে পারে।
চিনাবাদাম এলার্জি প্রতিরোধের উপায় সমূহঃ
সমীক্ষা অনুসারে, শিশুদের যদি শৈশবকালেই চিনাবাদামের সাথে পরিচয় করানো যায় তাহলে এলার্জি হওয়ার ঝুঁকি ৮o% হ্রাস পায়। গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশুদের চিনাবাদামে এলার্জি রয়েছে তাদের অন্যান্য মারাত্নক এলার্জিও রয়েছে। যেমন-একজিমা, ডিমের এলার্জি। তাই শিশুদের চিনাবাদামের সাথে পরিচয় করানোর সময় যেকোনো সমস্যা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
আমেরিকায় এ বিষয়ে একটি আইনও রয়েছে, যেসকল খাবারে চিনাবাদাম আছে সেগুলো লেবেলিং করতে হবে এবং খাবার ক্রয় করার সময় ভালোভাবে লেবেল দেখে সঠিক খাবার ক্রয় করতে হবে।
এলার্জিবিদ ডাঃ ফিল লাইবারম্যান হেলথলাইনের একটি প্রতিবেদনে বলেন, প্রাপ্ত বয়স্কদের কেনো চিনাবাদাম এলার্জি হয় তার সঠিক কারণ কেউ জানে না। তিনি আরও বলেন, যেসকল ব্যক্তির শৈশবে খাবার এলার্জির সিনড্রোম ছিল পরবর্তীতে ও তাদের চিনাবাদাম এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গবেষণায় জানা যায়, প্রতিরক্ষামূলক এপিনেফ্রিন এবং নতুন নতুন এন্টিবডি প্রাণনাশক এলার্জি প্রতিরোধে খুবই সহায়ক।
অবশেষে আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক বলে, যদি কোনো পরিবারে সদস্যদের পূর্বে চিনাবাদাম এলার্জির রেকর্ড থাকে, তাহলে শিশু জন্মের কয়েক মাসের মধ্যে শিশুর সংস্পর্শে চিনাবাদাম নিয়ে এসে চিনাবাদামের প্রতি তার সংবেদনশীলতা বাড়াতে হবে।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ সিএনএন, ওয়েবমেড, মায়ো ক্লিনিক, হেলথলাইন