বর্তমান পরিস্থিতির সাপেক্ষে, শক্তির স্বল্পতার দরুন নবায়নযোগ্য শক্তি সঞ্চয় (ব্যাটারি এর মাধ্যমে) ও উৎপাদন করা আবশ্যিক হয়ে পড়েছে। সূর্যের আলো এবং পরিবেশের উপাদান বায়ু, শক্তির নবায়নযোগ্য উৎস হলেও উক্ত শক্তিসমূহ পাওয়ার জন্য আবহাওয়ার অবস্থার উপর নির্ভর করতে হয়, যা স্বভাবতই অনিশ্চিত।
অন্যদিকে, সাধারণ লিথিয়াম দিয়ে তৈরি ব্যাটারি গুলো নবায়নযোগ্য, আর তাই নতুন করে শক্তির জন্য অন্য কোনো অনিশ্চিত উৎসের প্রতি নির্ভরশীল হতে হয় না বরং শক্তি পুনরুৎপাদন করবার আগ পর্যন্ত এই নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার করা যায়।
উদাহরণস্বরূপ, সূর্যের আলো কিংবা বায়ু কিন্তু সার্বক্ষণিকভাবে পাওয়া যায় না, আর ঠিক তখনই বিভিন্ন শক্তির ঘাটতি পূরণে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস ব্যাটারির প্রয়োজন পড়ে। ব্যাটারি হল বিশেষত রৌদ্রহীন বা বায়ুহীন কোনো অঞ্চলে নবায়নযোগ্য শক্তি সঞ্চয় ও ব্যবহারের অন্যতম উপযুক্ত একটি মাধ্যম।
সাম্প্রতিক একটি প্রকল্পে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) বিজ্ঞানীদের সহায়তায় এবং স্পেনীয় গবেষকদের নেতৃত্বে নবায়নযোগ্য এই ব্যাটারি তৈরির জন্য একটি নতুন উপকরণ আবিষ্কৃত হয়েছে। চিংড়ির খোলস হতে এর মধ্যকার ‘কাইটিন’ আলাদা করে তা দিয়ে বিজ্ঞানীরা ভ্যানাডিয়াম প্রবাহের ব্যাটারির অন্তর্গত ইলেকট্রোড তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
স্বনামধন্য লেখক এবং রাসায়নিক প্রকৌশলবিদ ফ্রান্সিসকো মার্টিন-মার্টিনেজ ব্যাখ্যা করেছেন, “আমরা প্রস্তাব করেছিলাম ভ্যানাডিয়াম প্রবাহের ব্যাটারির ইলেকট্রোড উৎপাদনে চিংড়ির খোলসের মধ্যকার কার্বন ও নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ কাইটিন ব্যবহার করতে। কাইটিন হলো সেলুলোজের মতোই এক প্রকার পলিস্যাকারাইড যা ক্রাস্টেসিয়ান সময়কার প্রাণীদের এবং পোকামাকড়ের এক্সোস্কেলেটনে পাওয়া যায়।”
“এসিএস সাসটেইনেবল ক্যামিস্ট্রি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং” -এ সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে এই সিদ্ধান্ত ব্যাক্ত হয়েছে যে, চিংড়ির খোলস প্রচুর পরিমাণে শক্তি উৎপাদনে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এই প্রক্রিয়াটি নিতান্তই ব্যয়বহুল হবে না।
“ভ্যানাডিয়াম রেডক্স প্রবাহ ব্যাটারি; যা স্বয়ংচালিত শিল্পে ব্যবহৃত যেকোনো লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিগুলোর মতো উচ্চ ঘনত্বের শক্তিপ্রবাহ দেয় না। তবে কম খরচে প্রচুর পরিমাণে শক্তি সঞ্চয় করে থাকে, যা সৌর কিংবা বায়ুশক্তির বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের উপযুক্ত মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে,” মার্টিন-মার্টিনেজ বলেছেন।
লিথিয়ামের অপচয় করা ছাড়াই খাদ্য বর্জ্য থেকে ব্যাটারি তৈরি করা আসলেই শক্তি সাশ্রয় এবং নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। মার্টিন-মার্টিনেজ যুক্ত করেছেন, “অবশ্যই লিথিয়াম আয়নের উদ্ভুত কার্বনের ইলেক্ট্রোড আরো ভালো মানের কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করে, কিন্তু এই প্রকল্পের মূল মন্ত্র হলো জঞ্জাল একটি পদার্থ থেকে এই জাতীয় বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপন্ন করা, এক্ষেত্রে চিংড়ির খোলস থেকে ইলেকট্রোড তৈরি অনেক সাশ্রয়ী এবং সময়োপযোগী শক্তি উৎপাদনের মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।”
হাসান সৈকত/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
+1
+1
1
+1
1
+1
+1
+1