প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ মেজাজ, দুর্ঘটনা এমনকি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য ও চাঁদ-কে দোষী মনে করে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় গবেষকরা ইঙ্গিত দেয় যে, চাঁদ মানুষের ঘুম-কেও প্রভাবিত করে। কথাটি প্রথমবার শুনে আপনার হয়তো অদ্ভুত লাগছে, তাই না?
কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেন গবেষকরা। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব কুইলমস, আর্জেন্টিনা এবং ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দাবি করেন, পূর্ণিমার চাঁদ সরাসরি আমাদের ঘুম-কে প্রভাবিত করে।
গবেষক দলটি ওয়াশিংটনের সিয়াটল শহরের কলেজ ছাত্রদের নিয়ে এবং উত্তর আর্জেন্টিনায় বসবাসরত আদিবাসী অর্থাৎ টোবা সম্প্রদায়ের মানুষের উপর একটি গবেষণা করে। টোবা সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনযাপনের ধরণ আধুনিক সভ্য সমাজের তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন প্রকৃতির।
গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল কিভাবে কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক আলো শহর এবং গ্রামের মানুষের ঘুমকে প্রভাবিত করে। ঘুমের তারতম্য অনুসন্ধান করার জন্য গবেষকরা কব্জিতে ডিভাইস ব্যবহার করেন। গবেষণায় ৯৮ জন টোবা সম্প্রদায়ের মানুষ এবং সিয়াটল শহরের ৪৬৪ জন কলেজ পড়ুয়া অংশগ্রহণ করে।
প্রধানত তিন ধরনের পরিবারের উপর সমীক্ষা করা হয়। যেমন-
- যাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।
- যাদের বাড়িতে মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে।
- যাদের বাড়িতে সবসময় বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে একটি বিশেষ যন্ত্র প্রদান করা হয়। যার সাহায্যে বোঝা যায় কেমন ছিল তাদের ঘুমের পরিমাণ। গবেষণার শেষে দেখা যায়, পূর্ণিমার সময় সকলেই দেরি করে ঘুমাতে যায় এবং কম ঘুমায়। গবেষণা থেকে আরও জানা যায়, শহর এবং গ্রাম উভয় অঞ্চলের মানুষেরই ঘুমের অদ্ভুত সাদৃশ্য রয়েছে।
তাই সমীক্ষার রিপোর্টে গবেষকরা দাবি করেন পূর্ণিমার চাঁদের কারণেই মূলত মানুষ দেরিতে ঘুমাতে যায়। গবেষকরা বলেন, পূর্ণিমার আগের দিন মানুষ প্রায় ৩o মিনিট দেরি করে ঘুমাতে যায় এবং অনেকেই অন্যান্য রাতের তুলনায় পূর্ণিমার রাতে ৫o মিনিট কম ঘুমায়।
প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের ধারণা, চাঁদ স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু কথাটি কি আদৌ সত্যি নাকি সম্পূর্ণ টাই কাল্পনিক চিন্তাভাবনা?
আমরা জানি, কৃত্রিম আলো নির্দিষ্ট উপায়ে আমাদের জন্মগত সার্কাডিয়ান ঘড়ি গুলোকে ব্যাহত করে। যার ফলেও আমরা দেরিতে ঘুমাতে যাই এবং কম ঘুমাই। বিজ্ঞানী কাসিরাগি একটি প্রতিবেদনে বলেন, মাসের নির্দিষ্ট সময়ে সন্ধ্যাবেলায় আলোর অন্যতম উৎস হচ্ছে চাঁদ এবং প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের পূর্বপুরুষেরা চাঁদের এই প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করে। গবেষণায় দেখা যায়, চন্দ্র চক্রের আর্বতন শরীরে মেলাটোনিন স্তরের পরিবর্তন ঘটায় এবং ফলস্বরুপ মানুষের ঘুমের তারতম্য ঘটে।
সমীক্ষায় বলা হয়, চন্দ্র চক্র এবং মাসিক চক্রের মধ্যে কিছু যোগসূত্র রয়েছে। কারণ, মাসিক চক্রের গড় সময় ২৮ দিন এবং চন্দ্রচক্রের গড় সময় ও ২৭.৫ দিন। উভয়ের পর্যায়কাল প্রায় একই রকম হওয়ায় চন্দ্র চক্র, মাসিক চক্রকে-ও প্রভাবিত করে। সাইকিয়াট্রি এবং ঘুমের ঔষুধ দুই ক্ষেত্রেই বোর্ড স্বীকৃত ডাঃ অ্যালেক্স দিমিত্রি বলেন, সম্ভবত সন্ধ্যা বা রাতে চাঁদ তার প্রভাব প্রয়োগ করে। এটি তখন মেলাটোনিনের [ঘুমের হরমোন] পরিমাণ হ্রাস করে। ফলস্বরুপ পূর্ণিমার রাতে মানুষ দেরিতে ঘুমাতে যায় এবং কম ঘুমায়।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ সাইন্স টেক ডেইলি, হেলথলাইন, মেডিক্যাল নিউজ টুডে, ওয়াশিংটন.এডু নিউজ, স্পেস.কম