চাঁদকে আমরা মহাকাশ নিয়ে গবেষণার শুরু থেকেই পানিশূন্য ধরে থাকি। বিশেষত প্রথম চন্দ্রাভিযানের পর যখন ১৯৬৯ সালে মহাকাশচারীরা পৃথিবীতে ফিরে আসেন, তখনও চাঁদকে পুরোপুরিই শুকনো ও রুক্ষ ধরা হয়েছিলো। কিন্তু আসলেই কি তাই? চাঁদের পৃষ্ঠে কোনো ধরণের পানির উপস্থিতি নেই?
২০১৮ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিজ্ঞানীরা চাঁদের মেরু অঞ্চলের অন্ধকার শীতল পৃষ্ঠে বরফ সদৃশ পানির খোঁজ পাবার দাবী করেন। সেই থেকে গবেষণা চলতে থাকে ও সম্প্রতি নাসার স্ট্র্যাটোস্ফেরিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারেড এস্ট্রোনমি (SOFIA) প্রথমবারের মত চাঁদ-এর সূর্যালোকিত স্থানে পানি পাবার কথা নিশ্চিত করেছে। আর এই আবিষ্কারটি চাঁদের শুধু নির্দিষ্ট কিছু স্থানেই নয় বরং পুরো পৃষ্ঠ জুড়েই পানি পাবার দিকে ইংগিত করে। আর চাঁদে পানির উপস্থিতি সেখানে প্রাণের বিকাশের ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের এখন নতুনভাবে ভাবাচ্ছে।
SOFIA এই পানির খোঁজ পেয়েছে চাঁদের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত ক্ল্যাভিয়াস ক্রেটারে যা পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান চাঁদের পৃষ্ঠে থাকা গিরিখাত গুলোর অন্যতম একটি। এর আগের চন্দ্রপৃষ্ঠের অভিযানে কিছু পরিমানে হাইড্রোজেন যৌগ শনাক্ত করা হয়, কিন্তু তা পানি (H2O) নাকি তার কাছাকাছি যৌগ হাইড্রক্সিল (OH) তা নির্ণয় করা যায়নি। পরবর্তীতে সেখান থেকে সংগ্রহকৃত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা জানান, চাঁদের পৃষ্ঠে এক কিউবিক মিটার পরিমান জায়গাজুড়ে এই পানি পাওয়া গেছে, যার পরিমাণ হিসেব করলে দাঁড়ায় ১২ আউন্স। আর এই গবেষণার সম্পূর্ণটা প্রকাশিত হয়েছে ন্যাচার জার্নালে।
ওয়াশিংটনের নাসা হেডকোয়ার্টারের সায়েন্স মিশন ডাইরেক্টরেট এর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ডিভিশনের ডাইরেক্টর পল হার্টজ জানান, “পূর্ববর্তী গবেষণায় আমরা এমন কিছু নিদর্শন পেয়েছিলাম যা আমাদেরকে ভাবতে বাধ্য করেছিলো, সম্ভবত আমরা চাঁদের সূর্যালোকিত পৃষ্ঠে পানি (H2O)-র সন্ধান পেয়েছি। আমরা এখন জানি চাঁদে পানি আছে। এই আবিষ্কারটি আমাদের চাঁদের পৃষ্ঠতল সম্পর্কে পূর্বের ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে ও ভবিষ্যতের ডীপ স্পেস এক্সপ্লোরেশন এর ক্ষেত্রে আরো কিছু গভীর প্রশ্নের সৃষ্টি করছে।”
যদি এই আবিষ্কৃত পানির পরিমাণ আমাদের পৃথিবীর কোনো কিছুর সাথে তুলনা করি, তবে বলা যায় পৃথিবীর সাহারা মরুভূমিতে চাঁদের পৃষ্ঠে পাওয়া এই পানির ১০০ গুন পরিমাণ বেশি আছে। কিন্তু পানির পরিমানের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কিভাবে এই পানি সেখানে উৎপন্ন হলো এবং কিভাবে সেখানকার রুক্ষ ও বায়ুশূন্য পরিবেশে টিকে রইলো।
তথ্যসূত্রঃ ন্যাচার জার্নাল, নাসা, সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান