মহাকাশ গবেষণায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাতারে ওঠার বহুদিনের চেষ্টা চীনের। এর মধ্যেই অন্তত একটি জায়গায় রুশ-মার্কিনদের টেক্কা দিয়েছে চাঁদের দেবী চ্যাং’ইয়ের দেশটি। আর তা হলো পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদের অন্ধকার অংশে সবার প্রথমে পৌঁছে গিয়েছিল তাদের মহাকাশযানটি। শুধু তাই নয়, অবতরণের এক ঘণ্টার মধ্যেই সে অন্ধকার অংশটিতে প্রথমবারের মতো ক্যামেরার আলো ফেলেছিল, ছবিও তুলে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিল।
চাঁদের বুকে চীনের মহাকাশযান চ্যাং’ই-৪ চাঁদের যে অংশে আলো ফেলতে পারে না সূর্য, সেই অন্ধকার অংশেই আলো ফেলেছিল। আক্ষরিক অর্থে কথাটা শতভাগ সঠিক নয়। কিন্তু মহাকাশ গবেষণার তাৎপর্যের দিক থেকে এটাই বাস্তবতা।
এই সফলতার পর এই বছরের ডিসেম্বরে চ্যাং‘ই-৫ অভিযান চালাবে চীন। চীনের বিজ্ঞানীরা এই বছরের শেষের দিকে চাঁদে একটি মানববিহীন মিশনের অংশ হিসেবে চাঁদের নমুনা পরিবহন এবং তা নিয়ে গবেষণার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়েছে। রোবোটিক চ্যাং’ই-৫ মিশন চীনের চাঁদ বিষয়ক গবেষণার একটি মূল অংশ।
চাঁদের নতুন নমুনা বা চাঁদের পাথর সংগ্রহ করা এবং ধরা ছোঁয়া ছাড়াই তা পৃথিবীতে আনা এই পরিকল্পনার অংশ। নমুনাগুলি তারা পৃথিবীতে আনার পরে এবং গবেষণার আগে পরিবহনের জন্য কঠোর চার পর্যায়ে ভাগ করেছে। এই চার পর্যায়ে আবার চারটি বিভাগে ভাগ করা হবে, এগুলো হচ্ছে : পার্মানেন্ট স্টোরেজ, ব্যাকআপ পার্মানেন্ট স্টোরেজ, সায়েন্টিফিক রিসার্চ এবং প্রদর্শনী।
চীনের গ্রাউন্ড রিসার্চ এপ্লিকেশন সিস্টেম (জিআরএএস) প্রথমে নমুনাগুলি একটি বদ্ধ প্যাকেজে নিয়ে সংগ্রহ করার পর নাইট্রোজেন ভর্তি একটি বক্সে প্রতিস্থাপন করবে। দ্বিতীয়ত, প্যাকেজটি আনসিল করা হবে। এজন্য আনসিলিং সরঞ্জাম অবশ্যই প্রথমে ইনস্টল করতে হয়, প্যাকেজটি অবশেষে ক্যাবিনে পাঠানো হবে মূলতঃ আনসিলিং করার জন্য এবং এতে পাথরগুলোকে বিশ্লেষণ করে ফেলতে পারে এমন কোনো গ্যাস আছে কিনা তা যাচাইএর জন্য। আনসিলড প্যাকেজটিতে দুটি পৃথক নমুনা থাকবে: ড্রিল বা ছিদ্র করা এবং স্কুপড। তৃতীয় পর্যায়ে, ড্রিল করা নমুনাগুলি সরানো হবে এবং একাধিক ছোট ১৫ সেমি অংশে কাঁটা হবে। প্রতিটি অংশ থেকে রিসার্চ স্যাম্পল এবং পার্মানেন্ট স্টোরেজ স্যাম্পলে ভাগ করা হবে।
স্কুপ করা নমুনাগুলি বাদে চতুর্থ স্তরটি মূলত একই। এই স্কুপ করা নমুনাগুলি রিসার্চ, স্টোরেজ এবং ব্যাকআপ স্টোরেজ স্যাম্পলে বিভক্ত হবে। পার্মানেন্ট স্টোরেজের জন্য নির্ধারিত নমুনাগুলি একটি দীর্ঘমেয়াদী স্টোরেজ রুমে রাখা হবে, অন্যদিকে গবেষণা এবং ব্যাকআপ নমুনাগুলি আরও ব্যবহারের জন্য অস্থায়ী বাক্সে রাখা হবে। গবেষণায় জড়িত সরঞ্জামগুলিও সাবধানতার সাথে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে ফলাফল সঠিক আসে। এটি যদি সফল হয় তবে এটি হবে চীনের প্রথম চাঁদের মাটি সংগ্রহ। আশা করা হচ্ছে এই সংগৃহীত নমুনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য কিভাবে চাঁদ ও পৃথিবী গঠিত হয়েছিলো তা সম্পর্কে জানতেও আমাদেরকে সাহায্য করবে।
জাকিয়া খানম তিশা/ নিজস্ব প্রতিবেদক