যখন আপনি ছোট ছিলেন,আপনার বাবা-মা আপনার ঘুমের সময় নির্ধারণ করে দিতেন। যখন আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হন,তখন যা ইচ্ছা করতে পারেন। কেউ আপনাকে বাঁধাধরা নিয়মে ফেলবে না। আপনি যতো ইচ্ছা দেরিতে বিছানায় যেতে পারেন কিংবা উঠতে পারেন। কিন্তু আপনার কী এটা করা উচিৎ?
একটি সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী উত্তরটি হচ্ছে, না। অনিয়মিত ঘুম আপনার স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে।
ডিউক ইউনিভার্সিটির গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণা এবং ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই গবেষণাটির মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলো “নিয়মিত ঘুম বা স্বাস্থ্যকর ঘুম”।
আগের গবেষণাগুলো দেখিয়েছিলো, মানুষ কতো গভীরভাবে ঘুমাতে পারে এবং কতো লম্বা সময় ধরে তারা প্রতিরাতে ঘুমায়। কিন্তু এই গবেষনার মূল উদ্দেশ্য ছিলো মৌলিক ও ভিন্নধর্মী, তাই এখানে গবেষকগণ একটি ভিন্ন পথ অবলম্বন করেন। তারা সবমিলিয়ে ২০০০ জন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির উপর প্যাটার্নভিত্তিক জরিপ চালান,যাদের বয়স ছিলো ৫৪ থেকে ৯৩ বছর।
একটি হাতে পরিধানযোগ্য ছোট ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে গবেষকগণ তাদের ঘুমাতে যাওয়ার সঠিক সময়, এমনকি দিনে ঘুমানোর দিকেও নজর রাখেন। এছাড়া হৃদপিন্ডের কার্যক্রম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখার জন্য তারা বিশেষ তথ্য যাচাই পদ্ধতি ব্যবহার করেন।
তারা দেখতে পান যে, যারা অনিয়মিত ঘুমিয়েছিলো, তাদের ওজন বেশি, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি ছিলো। তাদের হতাশাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। অমিয়মিত ঘুমের অসংখ্য ভবিষ্যৎ নেতিবাচক ফলাফলের মাঝে ছিলো পরের দশ বছরে হার্ট অ্যাটাকসহ স্ট্রোকের ঝুঁকি।
গবেষকরা নিয়মিত ঘুমের বাহিরেও ঘুমের অন্যান্য মানদন্ডের দিকে নজর রেখেছিলেন যেমন অংশগ্রহণকারীদের ঘুমের গুণমান, তারা কতক্ষণ ঘুমায় এবং তাদের পছন্দের শোবার সময়ও। তারা কি রাতের পেঁচার মতো জেগে থাকেন, নাকি দ্রুত ঘুমিয়ে ভোরে উঠা মানুষ?
প্রশ্ন জাগতেই পারে, একটি নির্দিষ্ট, নিয়মিত শোবার সময় কি আপনাকে স্বাস্থ্যবান করে তুলতে পারে?
হ্যাঁ, এমনকি ছুটির দিনেও। নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও জেগে উঠা – ভাল বিপাক এবং হৃদযন্ত্রের সুস্থতার সাথে সম্পর্কিত, বিশেষভাবে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। (গবেষণার সর্বকনিষ্ঠ অংশগ্রহণকারীর বয়স ৫৪ বছর।)
কাজ ও ঘুমের সম্পর্ক থাকাই সবসময় অনিয়মিত বা নিয়মিত ঘুমের কারন নয়। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতের গবেষণাগুলোতে ঘুমের সাথে কাজের বা পরিশ্রমের সম্পর্ক গুলো আলাদা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, অনিয়মিত ঘুমানো আসলেই কোনো শারীরিক অসুস্থতার যেমন হৃদরোগ বা স্ট্রোকের লক্ষন হতে পারে, আবার শিফট ওয়ার্ক, যা মানসিক চাপ এবং শারীরিকভাবে ক্লান্তি বাড়ায়, তার জন্যও এ রোগগুলো হতে পারে।
আবার এই রোগগুলো কোনোধরনের শারীরিক পরিশ্রমবিহীন জীবনযাপন ও অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের জন্যও হয়। যখন কোনও ব্যক্তির স্বাভাবিক দৈহিক চক্র ব্যাহত হয়, তখন তারা বেশি পরিমাণে খেতে থাকে এবং তারা যা যা খায় তা আরও ধীরে ধীরে বিপাকিত করতে থাকে, বিশেষত এটি যদি মিষ্টি হয়।
যদিও আমরা ঠিক জানি না কেন অনিয়মিত ঘুম নেতিবাচক স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত, কিন্তু এই বিশেষ গবেষণার ফলাফলগুলি ডাক্তারদের হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধের প্রচেষ্টাগুলোকে আরো উন্নত ও কার্যকর করতে সহায়তা করতে পারে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও স্ট্রোক এখনও অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ।
এই গবেষণাটি আমাদেরকে সতর্ক করে আমাদের ভবিষ্যৎএ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে। তাই, নিয়মিত ঘুম হোক আমাদের এই স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার।
আসফারুর রহমান / নিজস্ব প্রতিবেদক