অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে- বিগ ব্যাং কি আসলেই হয়েছিল? মানবজাতি ছাড়াও মহাবিশ্বে কি অন্য কোন বুদ্ধিমান প্রানী বা এলিয়েন আছে? নাকি এই ইউনিভার্সে মানুষই একমাত্র প্রাণী? সত্যিই কি মাল্টিভার্স বলতে কোনোকিছু হয়? নাকি আমাদের এই ইউনিভার্স একাই সবকিছু? বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন এসকল প্রশ্নের উত্তর দিবে “ন্যান্সি গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ”।
“Nancy Grace Roman Space Telescope” একটি এডভান্সড টেলিস্কোপ। এটি NASA-র ভবিষ্যত ইনফ্রারেড স্পেস অবজারভেটরি যা ডার্ক এনার্জির রহস্যগুলিকে সমাধান করে মহাজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবে। ইলন মাস্ক তার Falcon 9 রকেটের মাধ্যমে এটিকে লঞ্চ করবেন। টেলিস্কোপটির তোলা ছবি “Hubble Space Telescope” থেকেও ১০০ গুণ অধিক শক্তিশালী হবে। Hubble Space Telescope এর ৩ বছর সময় নিয়ে তোলা ছবির মতো ছবি তুলতে “Nancy Grace Roman Space Telescope” এর সময় লাগবে মাত্র ৯০ মিনিট!
২০১৩ সালে NASA এই টেলিস্কোপটির মডেল যখন সবার সামনে রাখে তখন বিজ্ঞানীদের মনে একটি দুশ্চিন্তা চলে আসে যে, এই অত্যাধুনিক টেলিস্কোপটি খুব শীঘ্রই আইনস্টাইনের General theory of relativity -কে ভুল প্রমাণিত করবে। এই টেলিস্কোপ দ্বারা করা খোঁজ এতটাই নিখুঁত হতে পারে যে এটি বর্তমান সময়কার প্রচলিত বিজ্ঞানের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতে পারে।
এই দুশ্চিন্তার বিষয় নিয়ে যখন NASA মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানায় তখন ডোনাল্ড ট্রাম্প এই প্রোজেক্টটিকে বাতিল করে দেন। অনেকের ধারণা এই প্রোজেক্টটিকে বাতিল করার কারণ ছিল এর বাজেট। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই প্রোজেক্টটিকে বাতিল করার পর NASA গিয়ে পৌছায় ইউএস কংগ্রেসের কাছে। ইউএস কংগ্রেস এই প্রোজেক্টটিকে এপ্রুভ করার পাশাপাশি ৮% বাজেট বাড়িয়ে দেয়।
ন্যান্সি গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ একাই চারটি টেলিস্কোপের কাজ করতে পারে। এই টেলিস্কোপে দুটি ইন্সট্রুমেন্ট সংযুক্ত আছে। একটি হলো ওয়াইড ফিল্ড ইন্সট্রুমেন্ট এবং অপরটি হলো কর্ণাগ্রাফ। ওয়াইড-ফিল্ড ইনস্ট্রুমেন্ট (WFI) হলো একটি 300.8-মেগাপিক্সেল মাল্টি-ব্যান্ড এর দৃশ্যমান এবং নিকট ইনফ্রারেড সম্পন্ন ক্যামেরা, যা হাবল স্পেস টেলিস্কোপ দ্বারা 0.28 বর্গ ডিগ্রি দৃশ্যের ছবিগুলোর তুলনীয় প্রায় ১০০ গুণ তীক্ষ্ণ ছবি তুলে। ওয়াইড ফিল্ড ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করে ৯০ মিনিটে একসাথে অনেক বড় একটি স্থানের ছবি তোলা সম্ভব যার জন্য যা Hubble telescope এর সময় লেগেছিল প্রায় ৩ বছর। এই ওয়াইড ফিল্ড ইন্সট্রুমেন্ট এতটাই শক্তিশালী যে এর মাধ্যমে প্রায় ১৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পুরোনো আলোকেও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। ধারণা করা যায় এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে বিগ ব্যাং হয়েছিলো কিনা, ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি সত্যি কি না- এ যাবতীয় সকল প্রশ্নের উত্তর উদঘাটন করা যাবে।
এবার আসা যাক টেলিস্কোপটিতে ব্যবহার হওয়া দ্বিতীয় ইন্সট্রুমেন্টটিতে। যা হলো কর্ণাগ্রাফ। কর্ণাগ্রাফ এমন একটি ইন্সট্রুমেন্ট যার সাহায্যে অন্য কোন সোলার সিস্টেমে থাকা ওই তাঁরার আলোকে আর্টিফিসিয়ালি কম করা যাবে এবং সে সাথে এটিও জানা সম্ভব যে ওই তারা মন্ডলে কতগুলো গ্রহ আছে এবং সেখানে কোন জীবিত প্রাণী আছে কী না।
এই টেলিস্কোপটি আবিষ্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল শুধুমাত্র ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জি এবং থিওরি অব রিলেটিভিটি’কে অধ্যায়ন করতে। এর নাম সর্বপ্রথম WFIRST (Wide-Field Infrared Survey Telescope) রাখা হলেও পরে Hubble Telescope এর জননী Nancy Grace এর মৃত্যুর পর এটিকে Nancy Grace Roman Space Telescope নামকরণ করা হয়।
বর্তমানে এই টেলিস্কোপ উৎক্ষেপনের জন্য প্রস্তুত। তবে চিন্তা হলো এটিকে কোথায় স্থাপন করা হবে সে বিষয়ে। টেলিস্কোপটিকে এমন এক জায়গায় স্থাপন করতে হবে যেখানে সূর্য থেকে আসা রেডিয়েশন টেলিস্কোপটির অবসারভেশনে কোন ব্যাঘাত না ঘটাতে পারে। সকল সমস্যার একটি তালিকা করার পর বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এটিকে স্থাপন করা হবে L2 (Lagrange point 2) তে। যেখানে জেমস ওয়েবও স্থাপন করা হয়েছে। মূলত L2 পয়েন্টে এটি স্থাপন করা হয়েছিল কারণ L2 পয়েন্ট এবং সূর্যের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে পৃথিবী। যার কারণে সূর্য থেকে আসা রেডিয়েশন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলেই আটকে যায় এবং এটি টেলিস্কোপ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। যার কারণে এটিকেই এখন পর্যন্ত রেডিয়েশন মুক্ত এরিয়া হিসেবে ধরা হয়।
আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট উইকিপিডিয়ার একটি তথ্য অনুযায়ী জানা যায় যে, টেলিস্কোপটির সবগুলো পরীক্ষণ শেষে উত্তীর্ণ হলে ২০২৭ সালের মে মাসে টেলিস্কোপটিকে উৎক্ষেপণ করা হবে। তবে কোনো নির্ধারিত তারিখ এখনও জানানো হয়নি। আশা করা যায় ২০২৭ সালের মধ্যেই পৃথিবীর মানুষের বিজ্ঞানের প্রতি নতুন ধারণার মোড় উন্মোচন হবে।
তথ্যসূত্র: নাসা, ইউরো নিউজ, উইকিপিডিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক/ শাহিনুল রাফি