একটি প্রাণীর উপর সংঘটিত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, স্পাইনাল কর্ডে (মেরুদণ্ড) আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিপাকীয় জটিলতার কারণে ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, রক্ত সংবহনতন্ত্রজনিত রোগ ইত্যাদি স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যাগুলোর মূল কারণ হলো আঘাতের পরে স্পাইনাল কর্ডের অস্বাভাবিক কার্যকলাপ। পেটের চর্বি থেকে নিঃসৃত যৌগসমূহ লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গ সমূহে জমা হতে থাকার কারণে এমনটি হয়ে থাকে।
গবেষকেরা এ সংক্রান্ত একটি পরীক্ষা চালান ইঁদুরের উপর। এ থেকে জানা যায় যে অনিয়ন্ত্রিত নিউরন এবং ফ্যাট টিস্যুতে বিদ্যমান ট্রাইগ্লিসারাইডের ভাঙ্গনের মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন যে, গ্যাবাপেন্টিন (gabapentin) নামক ওষুধের সংক্ষিপ্ত ডোজ স্নায়ু ব্যথা দূর করতে পারে এবং স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির কারণে সৃষ্ট ক্ষতিকারক বিপাকীয় প্রভাব প্রতিরোধ করতে পারে। উল্লেখ্য, গবেষণাটি ‘Cell Reports Medicine’-এ প্রকাশিত হয়।
এক ধরনের নিউরাল প্রোটিন (Alpha2Delta1) সংবেদী নিউরন এবং পেটের ফ্যাট টিস্যুর মধ্যে নিউরনীয় সিগন্যালের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে। কিন্তু স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে একটি নিউরাল প্রোটিন অত্যধিক সক্রিয় বা এক্টিভ হয় এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে এর সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে গ্যাবাপেন্টিন।
ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ মেডিসিনের নিউরোসায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক আন্দ্রেয়া টেডেস্কি (Andrea Tedeschi) বলেছেন,
“গ্যাবাপেন্টিন ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা বিপাকীয় প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়েছি।”
গ্যাবাপেন্টিন স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতির ফলে সক্রিয় হয়ে উঠা নিউরাল প্রোটিনকে বাধা দেয় এবং কার্যকলাপ ঠিক রাখে।
পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে, একইসাথে কার্ডিওমেটাবলিক রোগ এবং স্পাইনাল কর্ডে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির মৃত্যুর হার বিভিন্নভাবে মৃত্যু ঘটার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি।
যাদের মধ্যে স্বাস্থ্যজনিত বিভিন্ন রোগের সাথে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিও রয়েছে তাদের উপর গবেষণাটি চালানো হয়। গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল অ্যাডিপোজ টিস্যুর কাজ এবং সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র।
এই নতুন কাজে, গবেষকরা প্রথমে পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, কীভাবে সংবেদনশীল নিউরনগুলো সুস্থ বা সাধারণ অবস্থায় অ্যাডিপোজ টিস্যুর সাথে সম্পর্কযুক্ত। পরবর্তীতে একটি মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত মাউস মডেল তৈরি করা হয় যা সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র ব্যতীত শুধুমাত্র সংবেদনশীল নিউরনকে প্রভাবিত করে, তা দেখানো হয়।
ইঁদুরের মধ্যে তৈরি করা আঘাতের এক সপ্তাহের মধ্যে, স্নায়ুগুলো ফ্যাট টিস্যুতে অতিরিক্ত বার্তা পাঠাতে শুরু করে, বিশেষ করে CGRP নামক একটি বার্তা। এই CGRP বার্তাটি ফ্যাটকে তার সঞ্চিত শক্তি (ফ্যাটি অ্যাসিড) একটি উল্লেখযোগ্য হারে নির্গত করতে বলে। এটি ফ্যাটে নতুন রক্তনালী তৈরি করে এবং প্রতিরক্ষা কাজে নিয়োজিত কোষগুলোকে আকর্ষণ করে, যার ফলে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। বার্তা পাঠানো, রক্তনালি তৈরি হওয়া, প্রদাহ হওয়া চক্রটি চলতে থাকে।
যদিও গ্যাবাপেন্টিন ফ্যাট এবং স্নায়ু সমস্যায় সাহায্য করে, এটি ইনসুলিন তৈরিতে বাঁধার সৃষ্টি করতে পারে যা ডায়াবেটিসের পূর্বশর্ত। যেটিকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে গবেষক দল প্রাথমিকভাবে ইঁদুরের মধ্যে গ্যাবাপেন্টিনের একটি উচ্চ মাত্রা প্রয়োগ করে এবং তারপরে ধীরে ধীরে এটি হ্রাস করে। ফলে চার সপ্তাহ পর সমস্যাটি আর দেখা যায় না।
বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে তারা ফ্যাট টিস্যুর কার্যকারিতা স্বাভাবিক করতে এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি এড়াতে সক্ষম। গবেষণাটির মাধ্যমে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির ফলে একজন ব্যক্তিকে পরবর্তী মতে যে জটিল রোগগুলোর সম্মুখীন হতে হতো তারই নিরসনের এক আশার পথ দেখায়।
রিয়াজুল ইসলাম / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সায়েন্স ডেইলি, নিউজ.অএসইউ.এডু