উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন গেমিং পিসি কনফিগারেশন পেতে সবাই প্রথমে একটি ভালো গ্রাফিক্স কার্ড খোঁজে এবং পরে একটি ভালো গেমিং CPU খোঁজে। GPU-কে এই অগ্রাধিকার দেওয়া অযৌক্তিক নয়,আবার অস্বাভাবিক কিছুও নয়। কারণ এই উপাদানটিই শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করে কোন মানের সেটিংস এবং রেজুলেশনে ব্যবহারকারী তার গেমটি চালাতে পারবেন।
কিন্তু CPU কে এড়িয়ে সমস্ত টাকা GPU এর পিছনে খরচ করাটাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। সর্বোপরি, প্রসেসরই যুক্তিসঙ্গতভাবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এটিই নির্দেশ করে আপনার পিসিটি কতটা ভালোভাবে চলবে। এমনকি একটি দুর্বল CPU, GPU-কে তার পূর্ণ ক্ষমতায় চলতে বাধা দিতে পারে।
প্রসেসরকে এমনিতেই ‘সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট’ নামে ডাকা হয় না। এটিই নিশ্চিত করে আপনার SSD তে থাকা গেমটা কত দ্রুত চালু হবে। তাই পিসির জন্য সেরা গেমিং CPU বাছাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাফিক্স কার্ড হয়তো সময়ের সাথে সাথে আপগ্রেড করার সুযোগ থাকবে, কিন্তু গেমিং প্রসেসর এর ক্ষেত্রে এ সুযোগ খুবই নগন্য। তাই নিশ্চিত হয়ে ভেবেচিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত, যেন পরে আফসোস না করতে হয়।
যদিও সিপিইউ এর বাজারে কেবল Intel আর AMD এর মাঝে প্রতিযোগিতা চলে, তবুও বিভ্রান্তিকর মডেল সংখ্যার জন্য গ্রাহকদেরকে কাঙ্খিত সিপিইউ খুঁজতে বেগ পেতে হয়। তাই সকল প্রকার গেমারদেরকে তাদের কাঙ্খিত সিপিইউ খুঁজে পেতে সাহায্য করার জন্য এখানে প্রায় সব ধরণের গেমিং সিপিইউ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
Cores: 6 ● Threads: 12 ● Base Clock: 3.7GHz ● Boost clock: 4.6GHz ● L3 Cache: 32MB ● TDP: 65W
AMD এর Ryzen প্রসেসর শুরু থেকেই অসাধারণ পারফর্ম করছে যা সাম্প্রতিক প্রজন্মের প্রসেসর এর সুনাম আরো বাড়িয়ে দেয়। যদিও Ryzen 5 5600X প্রিমিয়াম বা সবচেয়ে বেশি কোর সম্পন্ন নয়, তবুও এর অবিশ্বাস্য কর্মক্ষমতা ও ভারসাম্য গেমিং দুনিয়ায় এক আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।
Ryzen5 5600X ৬ কোর বিশিষ্ট এবং মাল্টি-থ্রেডিং সমর্থন করে। এটি অনায়াসে সব ধরনের কাজ করতে পারে এবং গেমিং হ্যান্ডেল করতে পারে। এর কোরগুলোর ক্লক স্পীড 4.6GHz পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তাদের সবার একটি 32MB L3 cache এ এক্সেস এর সুযোগ আছে। এই সব পারফরম্যান্স একটি প্যাকেজে আসে যাতে শুধুমাত্র একটি 65W TDP আছে। AMD এতে একটি কুলার সংযোজন করেছে যা প্রসেসর এর গুণাগুণ অক্ষুণ্ন রাখতে সাহায্য করে।
Cores: 4 ● Threads: 4 ● Base Clock: 3.6GHz ● Boost Clock: 4GHz ● Graphics: Radeon Vega 8 Graphics ● L3 Cache: 4MB ● TDP: 65W
Ryzen3 3200G শুধুমাত্র একটি চমৎকার সাশ্রয়ী প্রসেসর নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী ভেগা গ্রাফিক্স কার্ড সমন্বিত অবস্থায় আসে যা গেমারদেরকে আলাদা গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়াই হালকা মানের গেম খেলার সুযোগ দেয়।
আপনি চাইলে পাগল বলতে পারেন, তবে এটা সত্যি যে, এই প্রসেসর এর সাহায্যে কোন সমস্যা ছাড়াই বর্তমান প্রজন্মের অনেক গেম খেলা যায়। এমনকি 30 FPS রেট এর সঙ্গে 4K রেজোলিউশন সেটিংসেও গেম খেলা সম্ভব হয়েছে এই প্রসেসর ব্যবহার করে। সব কিছু মাথায় রেখে বলা যায় AMD Ryzen3 3200G ব্যবহার করে অনায়াসে হোম থিয়েটার পিসি বা একটি ছোট গেমিং পিসি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তৈরি করা যায়।
Cores: 12 ● Threads: 24 ● Base Clock: 3.7GHz ● Boost Clock: 4.8GHz ● L3 Cache: 64MB ● TDP: 105W
২০২০ সালে এসে কে চায় একটি দামি সিপিইউতে এক ডিজিটের কোর সংখ্যা হোক? Ryzen 9 5900X দিয়ে দুই ডিজিটের কোর সংখ্যার দুনিয়ায় প্রবেশ করা যায়, 12 টি কোর এবং 24 টি থ্রেডস এর সাথে। যেকোন কাজই এই সিপিইউ নির্দ্বিধায় করতে পারে। খুব কম সংখ্যক গেমই পাওয়া যাবে যা এই সিপিইউ তে চলবে না।
এই প্রসেসরটি PC70 এবং B52 মাদারবোর্ড এর মধ্যে পিসিআই ৪.০ তে অ্যাক্সেস করতে পারে। এতে করে পিসিটি এর অবিশ্বাস্য উচ্চ গতির ব্যান্ডউইথ সুবিধা দিতে পারে ব্যবহারকারীকে। এতো ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও Ryzen 9 5900X কেবল একটি 105W TDP ব্যবহার করে।
Cores: 6 ● Threads: 12 ● Base Clock: 4.1GHz ● Boost Clock: 4.8GHz ● Graphics: Intel UHD Graphics 630 ● Intel Smart Cache: 12MB ● TDP: 125W
আপনি যদি মিড-রেঞ্জ এর CPU খুঁজেন আপনার বাজেটকে না বাড়িয়েই আপনার চাহিদা পূরণের জন্য, আপনি Intel Core i5-10600K নিতে পারেন। এই চিপ একটি উল্লেখযোগ্য উপায়ে এর অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রথমত, এটি ৬ কোর বিশিষ্ট এবং তাদের থ্রেড দ্বিগুণ করে এটি হাইপারথ্রেডিং ব্যাক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
এতে একটি Bump আছে যার 200MHz বেস ক্লক স্পীড, যা বুষ্ট করলে 400MHz পর্যন্ত হতে পারে। এই 10600k এর 4.1 GHz বেস, আর 4.8 GHz বুষ্ট ক্লক স্পীড পিসির শক্তি আরো বাড়িয়ে দেয়। এটি একটি আনলকড প্রসেসর তাই চাইলেই এতে overclock করা যায়। নিঃসন্দেহে আপনি এতে বেশ ভালো স্পিড উপভোগ করতে পারবেন।
Cores: 16 ● Threads: 32 ● Base Clock: 3.4GHz ● Boost Clock: 4.9GHz ● L3 Cache: 64MB ● TDP: 105W
যখন AMD তাদের Ryzen9 5950X মডেল বাজারে আনা শুরু করে তখন তাদের ধারণা ছিলো না এতো সাড়া ফেলবে এটি। ১৬ কোর এবং ৩২ থ্রেড বিশিষ্ট এই প্রসেসর এর দাম ছিল ১০০০ ডলার এর ভিতর যার ফলে সবাই এত উদগ্রীব ছিল। তাছাড়া ওই কোর গুলোর তথ্য 64 MB L3 cache এর মাধ্যমে প্রসেস করতো, যা ছিল এর আরেকটি উপকারী দিক।
এতগুলো কোর ব্যবহার করায় এতে অনায়াসে সকল গেম খেলা যাবে এবং গেমপ্লে রেকর্ড, এমনকি লাইভ স্ট্রিমিং করা যাবে। এডিটিং এর ক্ষেত্রে বলা যায় এটি দ্বারা সকল প্রকার এডিটিং এর কাজ করা যাবে। এটি PCle 4.0 সমর্থিত, তাই এতে ভবিষ্যতের যেকোন উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন SSD সাপোর্ট করবে।
Cores: 2 ● Threads: 4 ● Base Clock: 4.0GHz ● Graphics: Intel UHD Graphics 610 ● Intel Smart Cache: 4MB ● TDP: 58W
Intel Pentium Gold G6400 এর এতো বেশি কোর নেই, তবে এটি সাধারণ ডুয়াল কোর বিশিষ্ট হয়েও হাইপারথ্রেডিং এর দ্বারা 4 GHz পর্যন্ত ক্লক স্পিড তুলতে সক্ষম। একটি সাধারণ মানের গেমিং পিসি এর দ্বারা অনায়াসে তৈরি করা যায়।
এটি স্ট্রিমিং এর জন্য সেরা নাও হতে পারে, তবে এই চিপ এর যথেষ্ট দক্ষতা আছে। একটি মাঝারি পাল্লার গ্রাফিক্স প্রসেসর এর সঙ্গে যুগ্ম ভাবে অধিকাংশ গেম ভালভাবেই চালাতে পারে এটি। তবে একে Nvidia GeForce RTX 2080 Ti এর সাথে জোড়ানোর চেষ্টা না করাই ভালো।
Cores: 24 ● Threads: 48 ● Base Clock: 3.8GHz ● Boost clock: 4.5GHz ● L3 Cache: 32MB ● TDP: 280W
আপনি যদি কখনো ভেবে থাকেন ৮ টি কোর এবং 64 GB RAM যথেষ্ঠ নয় তবে আপনার জন্যই এই প্রসেসর।
কেননা এই প্রসেসরে আছে ৮ এর ৩ গুণ বেশি কোর এবং ৮টি RAM সংযুক্ত করার সুযোগ। তাছাড়া এটি PCle 4.0 সমর্থন করে, যার ফলে এটি এই পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন SSD সমর্থন করতে সক্ষম। এছাড়া এটি এই স্পেসিফিকেশন এর মধ্যে থাকা সস্তা চিপগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
Cores: 64 ● Threads: 128 ● Base Clock: 2.9GHz ● Boost Clock: 4.3GHz ● L3 Cache: 256MB ● TDP: 280W
অধিকাংশ আধুনিক প্রসেসর গুলোতে সাধারনত ৬ থেকে ৮ কোর থাকে। কিন্তু AMD সবাইকে পিছনে ফেলে প্রথম AMD Ryzen Threadripper 3990X দ্বারা ভোক্তাদের জন্য নিয়ে এসেছে ৬৪-কোর বিশিষ্ট সিপিইউ।
এতে রয়েছে 128 থ্রেড, এর ফলে এই প্রসেসর ভিডিও রেন্ডারিং অভাবনীয় দ্রুত এবং কার্যকরীভাবে করতে সক্ষম। এমনকি যদি কেউ একটি গেম খেলার মাঝখানে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেন যে স্ট্রিমিং করবেন বা একটি ভিডিও রেন্ডারিং শুরু করবেন, এতেও এর গেমিং এ কোনো প্রভাব পড়বে না এমনি এডিটিং এর কাজও দ্রুত গতিতেই হবে।
গেমিং CPU বাছাই এর ক্ষেত্রে যা বিবেচনায় রাখতে হবে :
প্রথমে মনে রাখতে হবে CPU দুই ধরণের হয়ে থাকে,
Mainstream এবং High-End Desktop (HEDT)।
Intel এর Core i3, i5, i7, i9 এবং AMD Ryzen এর 3, 5,7 সিরিজ এর চিপগুলো Mainstream সিপিইউ এর মধ্যে পড়ে।
অন্যদিকে AMD এর সব HEDT সিপিইউ এর মডেল নাম্বার এর শেষে “X” বা “XE” থাকে এবং এরা সব Ryzen সাব ব্র্যান্ড এর আওতায় রিলিজ হয়। Intel এর HEDT সিপিইউ এর শেষে বিশেষ নাম যুক্ত থাকে যা থেকে সহজেই তা অন্যান্য সিপিইউ থেকে আলাদা করা যায়।
Mainstream সিপিইউ মূলত অফিসিয়াল ছোটখাটো কাজ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
তাই গেম এর উদ্দেশ্যে পিসি কনফিগারেশন চাইলে অবশ্যই HEDT সিপিইউ ব্যবহার করা উচিত।
জোবায়ের হোসেন সামস/ নিজস্ব প্রতিবেদক