কোথাও যাবেন? তার আগে গুগল ম্যাপে একবার তো ঢু মেরে দেখাই হয়, জায়গাটা কতদূর বা সেখানে যেতে পথে ট্রাফিক কেমন পড়বে। যেকোন স্থানের লোকেশন খুব সহজেই আমরা এই গুগল ম্যাপের মাধ্যমে জানতে পারি। কিংবা কোন যানবাহনে চড়ার পর চালক আমাদের সঠিক স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে কিনা তা খুব সহজেই নিশ্চিত হতে পারি ও সতর্ক হতে পারি। আচ্ছা, কখনো কি মনে প্রশ্ন জেগেছে? এই গুগল ম্যাপ কিভাবে কাজ করে? গুগল ম্যাপ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমরা যে যানবাহনটিতে চলাচল করি: হোক সেটা মোটরসাইকেল, গাড়ি কিংবা সাইকেল তা কিভাবে যেন গুগল ম্যাপ জেনে যায়। আজ এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো এই আর্টিকেলটিতে।
এই বিষয়ে আদ্যপান্ত জানার আগে আসুন এই গুগল ম্যাপের ইতিহাস সম্পর্কে ছোট্ট করে জেনে আসি। সময়টা ছিল ২০০৪, তখন গুগল ম্যাপ কেবল একটি C++ প্রোগ্রাম ছিল যা দুইজন ডেনিশ ব্রাদার্স দ্বারা তৈরি করেছিলেন। তার ঠিক পরের বছরই এটি গুগল দ্বারা অধিগ্রহণ করা হয়। গুগল পরের বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গুগল ব্লগে খবরটি প্রকাশ করে। সেই একই বছরের আগস্ট মাসে ভয়াবহ ‘ক্যাটরিনা’ নামক হারিকেন আঘাত হানে। তারই ফলস্বরূপ পরের মাসে, গুগল ম্যাপস বন্যার পরিমাণ ম্যাপ করতে নিউ অরলিন্সের বাসিন্দাদের জন্য তার স্যাটেলাইট চিত্র আপডেট করে ফেলে।
২০০৮ সালে, HTC Dream, প্রথম অ্যান্ড্রয়েড-চালিত সিস্টেম, যারা গুগল ম্যাপের সঙ্গে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয়। ঠিক তারপর থেকেই গুগল ম্যাপের ব্যবহার আকাশচুম্বী হয়েছে। যেহেতু ভারতে টু হুইলার যানবাহন বেশি সেহেতু ২০১৭ এর শেষের দিকে, Google তাদের ব্লগে ভারতীয় ব্যবহারকারীদের জন্য “টু-হুইলার মোড” এর আগমনের ঘোষণা করে। এভাবে গুগল ম্যাপস শুধুমাত্র গাড়ি এবং বাসের সীমাবদ্ধ না থেকে তাদের সুবিধা কে অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে কাজে লাগানো শুরু করে।
গুগল ম্যাপ মূলত ৪ টি মাধ্যমে দিক নির্দেশনা প্রদান করে:
আপনার গাড়িতে কতটি চাকা আছে গুগল তা আপনার ফোনে থাকা অ্যাক্সিলোমিটারের সাহায্যে জানতে পারে। নাম থেকে বুঝতে পারছেন, অ্যাক্সিলোমিটার হল একটি টুল যা সঠিক ত্বরণ পরিমাপ করে। সঠিক ত্বরণকে সংজ্ঞায়িত করা হয় বেগের পরিবর্তনের হার দ্বারা। অর্থাৎ রিয়েল টাইমে একটি বস্তুর গতি কি দ্রুত নাকি ধীর তাই নির্ধারণ করে অ্যাক্সিলোমিটার।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি এবং আপনার একজন বন্ধু ঢাকায় বসবাসকারী আরেকজন বন্ধুর সাথে দেখা করতে ভিন্ন ভিন্ন শহর থেকে আসছেন। আপনি চট্টগ্রাম থেকে আসছেন, তিনি কুমিল্লা থেকে আসছেন। আপনাদের উভয়েরই গুগল ম্যাপে লোকেশন এবং জিপিএস সিস্টেম চালু রয়েছে ৷ আপনার বন্ধু ঘণ্টায় ৫০ মাইল বেগে আসছে, আপনি 75 মাইল। আপনার গতি এবং সময়ের পার্থক্যের হিসাব রিয়েল টাইমে হয়। যখন এই হিসাব গুলি অনেক বড় স্কেলে সঞ্চালিত হয়, তখন Google বলতে পারে যে আপনি একটি মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন।
ছোট্ট করে আরোও একটি বিষয় যোগ করি, গুগল ম্যাপ কিন্ত শুধু আমরা কোন ধরনের যানবাহনে চলছি তাই বলে না বরং এটি কিন্ত আমাদের চলার পথে আসন্ন ট্রাফিক জ্যাম সম্পর্কেও বলে দেয়।
জাইরোস্কোপ (Gyroscope):
জাইরোস্কোপ হচ্ছে আপনার ফোনে থাকা এমন এক ধরনের সেন্সর বা মুক্তভাবে ঘূর্ণায়মান ডিস্ক, যা পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণকে ব্যবহার করে দিক নির্ধারণে সাহায্য করে।
অ্যাক্টিভিটি রিকগনিশন API:
অ্যাক্টিভিটি রিকগনিশন এপিআই হল Google দ্বারা নিযুক্ত একটি সফটওয়্যার যা ব্যবহারকারীরা রিয়েল টাইমে কী করছেন সে সম্পর্কে Google ম্যাপে একটি নির্দেশনা পাওয়া যায়। মেশিন লার্নিং মডেলগুলি ব্যবহার করে, API পর্যায়ক্রমে এই সেন্সরগুলি থেকে সংক্ষিপ্ত ডেটা পড়ে এবং সেগুলিকে প্রক্রিয়াজাত করে। এপিআই বিশেষত শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে যখন অ্যাক্সিলোমিটার এবং জাইরোস্কোপ কে এর পরিপূরক সহায়তা হিসাবে ব্যবহার করা হয় কারণ এটি উল্লিখিত সেন্সর থেকে কয়েক ডজন সংকেতের মধ্যে সামান্য তারতম্য সনাক্ত করতে পারে।
গুগল লোকেশন হিস্ট্রি:
গুগল লোকেশন হিস্ট্রি মূলত আপনার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য দিয়ে থাকে। আপনি যদি আপনার একাউন্ট থেকে একাধিক ডিভাইসে লগইন করেন সে সবকটি ডিভাইসে আপনার হিস্ট্রি একই দেখাবে। এর সুবিধা গুলো হল:
আপনি যেই যেই জায়গাগুলোতে বেশি পরিদর্শন করেছেন তার জন্য রেকমেন্ডেশন দেয়া।
আপনার ফোন খুঁজে পেতে সাহায্য করা।
আপনার যাতায়াত সম্পর্কে রিয়েল-টাইম ট্রাফিক আপডেট।
বিজ্ঞাপন এবং অনুসন্ধান সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক সাজেশন দেয়া।
গুগল ম্যাপ বিশ্বের ২২০ টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ১ বিলিয়ন কিলোমিটারেরও বেশি দৈর্ঘ্যের ল্যাবরেট ম্যাপিং ডাটাবেস তৈরি করেছে এবং সেই ডেটা প্রতিনিয়ত উন্নত করার চেষ্টা করছে। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হল এটি আপনার চলার পথে ট্রাফিককে বিশ্লেষণ করতে পারে। আপনার রাস্তায় আসন্ন ট্র্যাফিক কেমন হবে তা অনুমান করতে, গুগল ম্যাপ সময়ের সাথে সাথে রাস্তাগুলির জন্য পূর্বের ট্র্যাফিক প্যাটার্নগুলি বিশ্লেষণ করে। সফ্টওয়্যারটি তারপরে লাইভ ট্রাফিক অবস্থার সাথে পূর্বের এই রাস্তায় ট্র্যাফিক প্যাটার্নের ইতিহাস ও ডাটাবেসকে একত্রিত করে। উভয় সেটের ডেটার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যদ্বাণী তৈরি করতে এই সফটওয়্যার মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে এবং রাস্তায় আসন্ন ট্র্যাফিক সম্পর্কে ধারণা দেয়। ঠিক এভাবেই গুগল ম্যাপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় অনেকটা স্বস্তি এনে দিয়েছে।