বিজ্ঞানীরা এক দীর্ঘ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে একটি বিস্ময়কর প্রমাণ পেয়েছেন যে,দৈনিক কাজের চাপ, চুলের রং ধূসর/সাদা হওয়ার জন্য দায়ী । সাও পাওলো এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক চুল পাকার রহস্য উদ্ধারে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালান।এর মাধ্যমে তারা কিছু চমকপ্রদ ফলাফল পেয়েছেন।
চুল ধূসর হওয়ার ব্যাপারে অনুসন্ধানকারীদের একটি গবেষণাপত্র সম্প্রতি নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হলে ব্যাপারটি সবার নজরে আসে।হার্ভাডের গবেষকদল গবেষণা করার প্রেক্ষিতে একটি রাসায়নিক পরিবর্তন শনাক্ত করেন,যেটি সচারাচর মানুষের মানসিক চাপের বা বিপদজনক পরিবেশে সংগঠিত হয়ে থাকে এবং চুলকে ধূসর করার জন্য সামগ্রিক ভাবে দায়ী।
এই বিষয়ে গবেষক দলের নেতৃত্বে থাকা এবং স্টেম সেলঃপুনউৎপাদন বিষয়ক অধ্যাপক ইয়া-চিয়ে-সু জানান,তারা প্রাথমিক বিশ্বাসগত ধারণা যে,মানসিক চাপ চুল ধূসর করে এর উপর ভিত্তি করে গবেষণা শুরু করেন।
গবেষক দল ইদুরকে বেছে নেয় এটা পর্যবেক্ষণ করতে জটিলায় আক্রান্ত ইদুরের পশমের ফলিকল এবং স্বাভাবিক ইদুরের ফলিকল এর মাঝে কি পার্থক্য দেখা যায়।বেশীরভাগ মানুষের মাথায় প্রায়,১০,০০০০ চুলের ফলিকল রয়েছে।
এই ফলিকল মেলানোসাইট কোষ তৈরীর জন্য দায়ী।কোষ গুলো চুলকে তার নিজস্ব বর্ণ প্রদান করে থাকে। বৃদ্ধ বয়সে ৩০ এর অধিক বয়সে মেলানোসাইট উৎপাদন কমে গিয়ে চুল সাদা হতে থাকে।
গবেষকরা প্রথমে ধারণা করেছিলেন একধরনের ইমিউনোলজিক্যাল আক্রমণে যেটি মেলানোসাইট কোষকে লক্ষ্য করে হয় তার ফলেই চুল ধূসর হয়। কিন্ত এই ধারণা অচীরেই ভুল প্রমাণিত হয়।
দলটি পরবর্তীতে কোলেস্টেরলজনীত সমস্যাকে দায়ী করেন এই রূপান্তর প্রক্রিয়ার জন্য। যেটি মানসিক চাপের সময় বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।ইয়া-সু এর মতে বেশীরভাগ রূপ বিশেষজ্ঞ হরমোন কে এই ক্ষেত্রে দায়ী করে থাকেন।কিন্তু হরমোন উৎপাদনকারী নালিকা অপসারণ করার পরও ইদুরদের পশম ধূসর হতে দেখা যায়।
মূলত মধ্য মস্তিষ্ক থেকে (MSH)মেলানোসাইট স্টিমুলেটিং হরমোন নির্গত হয়।যখন ইঁদুরগুলোকে গবেষণাগারের পীড়নদায়ক কোন স্থানে আবদ্ধ করে রাখা হয়,তখন কিছু নালিকা থেকে পীড়ন যন্ত্রণা হ্রাসকল্পে নরএপিনেফ্রিন (Norepinefrin) নামক পদার্থ ক্ষরিত হয়।যেটিকে (MSH) এর কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং মেলানোসাইট তৈরীতে বাধার সৃস্টি করে।
ইয়া-চিয়ে-সু এর মতে মানুষের যন্ত্রণা বা জটিলতার কারণে শারিরীক পরিবর্তনের যে মতবাদ,এটি তার প্রাথমিক প্রমাণ। ধীরে ধীরে আরো বিস্তৃত গবেষণার মাধ্যমে এমন সম্পর্কিত সমস্যা গুলোকে বের করে আনা হবে।
প্রায় একই ধরনের এক গবেষণায় আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনেস্ট্রেশন(FDA)জানায় পেইন কিলার বা এন্টি-স্ট্রেস জাতীয় যেসকল ঔষুধ গ্রহণ করা হয়, সেগুলো মস্তিষ্কে ব্লক তৈরীর মাধ্যমে কাজ করে থাকে,
এক্ষেত্রে আ্যসিটাইল কোলিন এর মতো নিউরোট্রান্সমিটার এর কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে ফলে হরমোন ক্ষরণমাত্রা কমে গিয়ে অস্বাভাবিক হয়ে নানা ধরনের জটিলতা দেখা যায়, যার মধ্যে সম্প্রতি আবিষ্কৃত চুল ধূসর হয়ে যাওয়ার কারণও একটি।