স্কুল–কলেজে পড়াশোনার সময় পছন্দের বিষয় কি ছিল? – এই প্রশ্নের জবাবে আপনি কোন বিষয়কে বসাবেন? পরিসংখ্যান বলে, অন্যান্য বিষয় থেকে গণিত এখানে এগিয়ে (পরিসংখ্যানও কিন্তু গণিতের একটি শাখা)। গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিসের ভাষায়, ‘গণিত তার কাছেই তার সৌন্দর্য নিয়ে ধরা দেয়, যে বিশুদ্ধ মন ও ভালোবাসা নিয়ে গণিতের দিকে অগ্রসর হয়।’
গণিত বিষয়টা কারো জন্য নিছক কোন বিষয়ের নাম, কারো কাছে সৌন্দর্যের আরেক ভাষা, কারো কাছে আবার বিশাল ভীতি। কেউ কেউ আবার খুব করে শিখতে চাইলেও পান না পর্যাপ্ত সুযোগ। অনেকে হয়তো বলবেন, এতো বেশি গণিত শিখে বাস্তবে কি হবে? যোগ–বিয়োগ–গুন–ভাগ আর মাঝেমধ্যে এক–আধটু ঐকিক নিয়মের মাধ্যমে গণিতের জগতে হাতেখড়ি হলেই জীবন পার করে ফেলা যায়। তাহলে এই ভুল ধারণাটি ভেঙে দিতে, আসা যাক গণিত এর ব্যবহার কোথায় কোথায় রয়েছে এই আলোচনায়।
মনে করি, পৃথিবীতে গণিতের অস্তিত্ব নেই। এই ধরাধরির কবলে পড়লে আপনার মোবাইলফোন, কম্পিউটার, বিদ্যুৎ, ঘুর্নায়মান পাখা, গাড়ি , মোটরসাইকেল, কলকারখানা এবং মাথার ছাদ কিছুই থাকবে না! রক্তচাপ–ওজন–ডায়বেটিস মাপার যন্ত্র থেকে শুরু করে সকল মেশিনও উধাও হয়ে যাবে। মোটকথা, গণিত না জানলেই নয়।
গণিত কিভাবে শেখা শুরু করা যায়?
১) প্রথমে জানতে হবে, আপনি কোন পর্যায়ে আছেন অর্থাৎ গণিত বিষয়ে আপনার জ্ঞান কতটুকু। তারপর, জানতে হবে আপনি গণিতের হাতেখড়ি তে ঠিক কতটুকু আগ্রহী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো করতে গণিত শিখতে চান, নাকি দক্ষতা বাড়াতে, না অন্য কোনো কারণে। তারপর নির্দিষ্ট ঐ শাখায় দক্ষ হতে চেষ্টা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
২) পরবর্তী ধাপে, গণিত চর্চার জন্য নির্দিষ্ট যে সময়ে মনোযোগ ধরে রাখতে পারবেন এমন সময় ঠিক করা যাতে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
৩) গণিত শুধু সমস্যা আর সমাধান দেখলেই চলবে না, হাতে কলমে করে এবং নিজে নিজে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
কোথায় থেকে গণিত শেখা যাবে?
পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ক্যালকুলাস, গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞান, গেইম থিওরি, সম্ভাব্যতা, পরিসংখ্যান ইত্যাদি বিষয়গুলো গণিতের অংশ। আমাদের দেশে যোগ-বিয়োগ-গুন-ভাগ, ঐকিক নিয়ম, অনুপাত ইত্যাদি দিয়ে পাটিগণিত, বীজগাণিতিক সূত্র এবং সমীকরণ সমাধান ও লেখচিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে বীজগণিত, রেখা-ত্রিভুজ-চতুর্ভুজ–বৃত্ত এবং এদের সম্পাদ্য উপপাদ্য দিয়ে জ্যামিতি শেখানোর মাধ্যমে গণিতের ভিত্তি তৈরি করা হয়। কিন্তু গণিতের হাতেখড়ি-র জন্য এইটুকুই কি যথেষ্ট? না। গণিতে আগ্রহ গড়ে তুলতে পাঠ্যবইয়ের বাহিরেও আরো নানা বিষয় সম্পর্কে আপনার জানতে হবে, দেখতে হবে গণিতের রঙিন দুনিয়া।
এরপরের গণিত শিখতে হলে জ্যামিতি, বীজগণিত ও ত্রিকোণমিতি, ক্যালকুলাসের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায় খান একাডেমির এসব বিষয়ের ভিডিওসমূহ, যা বেসিক গণিতের দক্ষতা বাড়াতে বেশ ভুমিকা পালন করে। আরও আছেন বাংলাদেশী একজন ইউটিউবার ও গণিত শিক্ষক চমক হাসান, যিনি সাবলীল ভাবে তুলে ধরেন নানা রকম অঙ্কের মারপ্যাঁচ।
এছাড়াও Coursera, Udemy, Edx ইত্যাদি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সার্টিফিকেট ছাড়া বিনামূল্যে গণিতে আধুনিক শাখাগুলো সম্পর্কিত কোর্স করা যায়। সার্টিফিকেট পেতে কোর্সের নির্ধারিত মূল্য প্রদান করতে হয়।
গণিত বিষয়ক অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলো হলো:
১) Openstax
২) Paul’s Online Notes
৩) Brilliant
৪) proofwiki
৫) The Great Courses
৬) MIT opencourseware
এছাড়াও প্রয়োজনীয় কিছু গণিত টুলসগুলো হচ্ছে :
১) WolframAlpha
২) desmos
৩) GeoGebra
৪) Overleaf
বিভিন্ন সমস্যায় পড়লে সাহায্য নেয়া যেতে পারে এমন কিছু অনলাইন কমিউনিটি হচ্ছে :
১) Quora
২) Art of problem solving
৩) Mathematics stack exchange
গাণিতিক দক্ষতা বিষয়ক সমস্যা সমাধানের জন্য “The Art of problem solving” বইটির দুইটি ভলিউম সাথে “The art and craft of problem solving by paul zeitz” পড়ে ফেললে বেশ উপকৃত হওয়া যায়।
এছাড়াও, ইউটিউবে দেশি, বিদেশি এমনকি এমআইটি-হার্ভার্ড–অক্সফোর্ডের বিভিন্ন শিক্ষকদের ক্লাসের ভিডিও দেখে গণিত চর্চা করে গণিতের বিভিন্ন শাখা আয়ত্ত্বে আনা যায়।
প্রতিবেদক/ জাকিয়া খানম তিশা
সোর্সঃ Britannica