শীতকাল আসবে আর খেজুরের রস খাবে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর বাড়ি গ্রামে হলে তো কথাই নেই! সকাল সকাল গাছ থেকে আনা খেজুরের রস পাওয়া যায় খুব সহজেই। কিন্তু সুস্বাদু খেজুর রসে নিপাহ ভাইরাস থাকলে এই পানীয় হতে পারে আপনার মৃত্যুর কারণ, তা কি ভেবে দেখেছেন কখনো?
কীভাবে? চলুন বিস্তারিত জেনে নিই।
গত কয়েকবছর ধরে শীতকাল এলেই শোনা যায় খেজুরের রস খেয়ে বিভিন্ন এলাকায় মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এতে করে মানুষের মাঝে খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে এক প্রকার ভীতি কাজ করছে। খেজুরের রস খেয়ে মৃত্যু হচ্ছে মূলত খেজুর রসে নিপাহ ভাইরাস থাকার কারণে!
সাধারণভাবে ভাবনা আসতেই পারে যে, নিপাহ ভাইরাস কী? কেনো হয়? ছড়ায় কীভাবে? এ নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
নিপাহ ভাইরাস হচ্ছে প্রানী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় এমন ভাইরাস, যা দূষিত খাবারের মাধ্যমে বা সরাসরি মানুষে সংক্রামিত হতে পারে। ভাইরাস সংক্রামিত ব্যক্তিদের মধ্যে এটি উপসর্গবিহীন সংক্রমণ থেকে তীব্র শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা এবং মারাত্মক এনসেফালাইটিস পর্যন্ত বিভিন্ন রোগের কারণ হয়।
অনেকেই হয়তো নিপাহ ভাইরাসকে নতুন ভাবছেন। তবে আসলে কিন্তু তা নয়।
১৯৯৮ সালে প্রথম নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ঘটনা চিহ্নিত করা হয়। তখন পশ্চিম মালয়েশিয়ার শূকরের খামারগুলোতে ২৬৫ জন মানুষের দেহে স্নায়ুবিক এবং শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দেয় এবং তারমধ্যে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ ও ভারতেও নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া যায়। তবে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে, যেখানে সাধারণত শীত মৌসুমে ভাইরাসটির প্রকোপ দেখা যায়।
নিপাহ ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়?
সাধারণত বাঁদুড়কে নিপাহ ভাইরাসের প্রধান বাহক বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ এবং ভারতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি লক্ষণীয়। ভাইরাস সংক্রমিত বাঁদুড়ের প্রস্রাব অথবা লালা দ্বারা দূষিত ফল বা ফলের পণ্য (যেমন, কাঁচা খেজুর রস) খাওয়ার ফলে ভাইরাসের সংক্রামণ ঘটে।পরবর্তীতে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের শরীর থেকে সরাসরি সুস্থ মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্ৰমণ হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাছাড়া উল্লেখযোগ্য কারণ হলো:
- বাঁদুরের লালা মিশ্রিত খেজুরের রস বা বাঁদুরে খাওয়া ফলমূল থেকে।
-
বাঁদুরে খাওয়া আংশিক ফল মাটিতে পড়ে থাকলে তা থেকে বা জমিতে পড়ে থাকা বাঁদুরের মল থেকে।
-
বাঁদুরে খাওয়া ফলমূল গরু-ছাগলকে খাওয়ালে তা থেকে পশুপাখির যদি নিপাহ ভাইরাস হয় তাহলে সেই পশুপাখি থেকে মানুষের সংক্রমণ হতে পারে।
নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণসমূহ:
নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সবার ক্ষেত্রে উপসর্গ বা লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। তবে বাঁদুরের লালা মিশ্রিত খেঁজুরের রস কাঁচা পান করলে বা বাঁদুরে খাওয়া ফল খেলে নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। এতে করে প্রথমদিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে মৃদু থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট,জ্বরসহ মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যাথা,খিঁচুনি,প্রলাপ বকা,অজ্ঞান হওয়ার মতো লক্ষণ থাকলে নিপাহ ভাইরাস বলে সন্দেহ করা যেতে পারে।
প্রানঘাতী এই ভাইরাসে মৃত্যু হার প্রায় ৭১% এর মতো। প্রথম আলোর তথ্য মতে, জানুয়ারির ১লা থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করে ৮ জন আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে যার মধ্যে ৬ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। কারো নিপাহ ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে।
নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধ ব্যবস্থা:
-
কাঁচা খেজুরের রস পান থেকে বিরত থাকা উচিত।
-
বাঁদুরে খাওয়া আংশিক ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
-
ফলমূল খাওয়ার আগে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে।
-
রোগীর সংস্পর্শে এলে ভালোভাবে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
-
নিপাহ ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে রোগিকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
-
আতংকিত না হয়ে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে খুব সহজেই নিপাহ ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
জেসিকা ইরা/নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: হো ইন্টারন্যাশনাল, আইইডিসিআর বাংলাদেশ
+1
1
+1
3
+1
1
+1
+1
1
+1
+1
2