এখন নভেম্বর মাস, শীতকাল প্রায় এসে গেল বলে। শীতকাল শব্দটার সাথে সাথে আমাদের মাথায় বেশ কিছু খাবারের দৃশ্য চলে আসে। যেমন: শীতকালীন সবজি, ফল, পিঠা এবং খেজুরের রস। আমরা সবাই খেজুরের রসের পিঠা খেতে পছন্দ করি এর স্বাদ ও ঘ্রাণের জন্য। কিন্তু খেজুরের রসের উপকারিতা সম্পর্কে কি আমরা জানি? আজকে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
প্রথমে আসি খেজুরের রসে থাকা নিউট্রিয়েন্ট ইনগ্রিডিয়েন্ট নিয়ে। খেজুরের রসে ন্যাচারালি আয়রন, ম্যগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন B3, B2, B5, B1, A1 এবং C থাকে। এছাড়া ফ্রুকটোজ, সুক্রোজ ও গ্লুকোজ থাকে, যেটাকে বলা হয় প্রাকৃতিক চিনি; এর ফলে খেজুরের রস প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি ও ইন্সট্যান্ট এনার্জি বুস্টার হিসেবে কাজ করে। এর নিউট্রিয়েন্ট ইনগ্রিডিয়েন্ট এর উপর ভিত্তি করে খেজুরের রস অনেক সমস্যার সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে। খেজুরের রসের উপকারিতা গুলো নিম্নরূপ:
- আয়রন ডেফিসিয়েন্সির রোগীদের জন্য খেজুরের রস হতে পারে একটি উত্তম সমাধান। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ফলিক এসিড থাকে যা আয়রন ডেফিসিয়েন্সির জন্য উপকারী। এছাড়া এটি দেহের রক্ত স্বল্পতা কমাতে ও ব্লাড সেলস ইম্প্রুভ, বাড়াতে সাহায্য করে। এমনকি প্লাটিলেট সংখ্যার উপর একটা ভালো প্রভাব ফেলে।
- রাতকানা রোগ প্রতিরোধে এই খেজুরের রস অনেক বড়ো ভূমিকা পালন করতে পারে। খেজুরের রসে প্রচুর মাত্রায় ক্যারোটিনয়েড ও ভিটামিন-এ রয়েছে। এই ভিটামিন এ আমাদের vision cycle এর সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট উপাদান। বিশেষ করে বাচ্চা ও টিনএজারদের জন্য এটি বিশেষ উপকার দিবে।
- এটিতে যেহেতু ন্যাচারাল ফাইবারও থাকে, তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেশ কার্যকরী, কেননা এর ফাইবার ল্যাক্সেটিভের মতো কাজ করে ও হজম-পরিপাক আরো সহজ করে। আর এতে থাকা উপকারী ব্যাক্টেরিয়া আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের উন্নতি ঘটে।
- গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে খেজুরের রস জরায়ু পেশি শিথিল করে, ফলে চাইল্ড লেবার তুলনামূলক কম ব্যাথাদায়ক ও সহজ হয়। আর এর পুষ্টি উপাদানগুলোর জন্য গর্ভে থাকা শিশু ইমিউনিটি ও প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো যথাযথভাবে পেয়ে থাকে।
- ক্লান্তি এবং নার্ভাস সিস্টেম ইম্প্রুভ করার জন্য খেজুরের রস একটা উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখতে পারে। কারণ খেজুরের রস ভিটামিন-বি তে সমৃদ্ধ যা নার্ভ ইমপ্রুভমেন্ট এবং ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেক উপকারি বলে প্রমাণিত। আর এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম এবং ফসফরাস নিউরন সেলকে আরও একটিভ করে তোলে।
আরোও পড়ুন: সূর্যের আলোতে থাকা ভিটামিন-ডি কি শুধু শীতকালেই কার্যকরী?
- ওজন বাড়াতে খেজুরের রস বেশ উপকারী। খেজুরের রসে উচ্চমাত্রায় ক্যালরি রয়েছে এবং প্রত্যেকদিন পান করলে এটা ওজন লাভে সাহায্য করতে পারে। তবে প্রতিদিন পান না করলে এটা ওজন লাভে তেমন কোনো ফলাফল দেখাবে না।
- খেজুরের রসে থাকা ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-ডি আমাদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী, ভিটামিন-সি ও ডি ২ টিই স্কিনের ইলাস্টিসিটি বাড়ায় যার কারণে বয়সের ছাপ কমে যায় এবং তুলনামূলক কম বয়সী দেখায়। ভিটামিন-সি স্কিন ব্রাইট করে এবং ডি মেলানিন ও ভিটামিন- ডি ডেফিসিয়েন্সিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- খেজুরের রস প্রতিদিন পান করা শরীরে ‘Libido‘ বাড়াতে সাহায্য করবে, যার ফলে যৌন শক্তিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।
- খেজুরের রসে থাকা আয়রন হেয়ার ফলিকল আরও শক্তিশালী করে তোলে, সেই সাথে স্ক্যাল্পের নিচে ব্লাড সার্কুলেশন বাড়িয়ে দেয়। যার কারণে হেয়ার গ্রোথ বৃদ্ধি পায়।
- খেজুরের রস হাড়ের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। খেজুরের রসে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের গঠন মজবুত ও দৃঢ় করা সহায়তা করে। এছাড়া এতে থাকা এন্টি ফ্ল্যামেটোরি প্রোপার্টিস হাড়ের ব্যাথা, জয়েন্টের সমস্যা ও বাতের ব্যাথায় উল্লেখযোগ্য ভালো ফলাফল দেখায়।
- ব্লাড কোলেস্টেরল কমাতে খেজুরের রস উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখে। খেজুরের রসে কোলেস্টেরল ও ফ্যাটে মাত্রায় কম থাকে। যার কারণে কোনো চিন্তা ছাড়াই খেতে পারেন!
এছাড়াও অন্যান্য উপকারিতাগুলো হচ্ছে:
- এটি পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামে সমৃদ্ধ, তাই প্রতিদিন সকালের নাস্তার সাথে একগ্লাস উষ্ণ গরম পানিতে খেজুরের রস মিশিয়ে খেলে হজম প্রক্রিয়া, স্মৃতিশক্তির (নিউরন সেল এক্টিভেশন) কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
- হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে তোলে।
- কিডনি ডিটোক্স করে।
- সর্দি-কাশি এবং ঠাণ্ডা সারাতে ভুমিকা রাখে।
এগুলো তো গেলো উপকারিতা এবং কেন খাবেন তার একটা লম্বা লিস্ট। এখন আসি কাদের খাওয়া উচিত নয় এবং কেন উচিত নয়:
- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য খেজুরের রস সাধারণত নিউট্রিশন এক্সপার্টরা রেকোমেন্ড করেন না। কারণ এতে থাকা উচ্চমাত্রায় প্রাকৃতিক চিনি রোগীর জন্য ক্ষতিকর। তবে খুবই অল্প ও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করলে খুব ক্ষতি হবে না।
- খেজুরের রস প্রাকৃতিকভাবেই উষ্ণ-প্রকৃতি এবং এটি অন্যান্য প্রাকৃতিকভাবে উষ্ণ কোনো খাবারের সাথে বেশি পরিমাণে খেলে ব্রণ উঠতে পারে।
- স্থূল ওজন ও যারা বেশি একটা পরিশ্রম করে না, তাদের জন্য খেজুরের রসের অধিক সেবন বেশ ক্ষতিকর বলে বিবেচিত। কারণ এটি যেহেতু উচ্চ মাত্রায় ক্যালরিযুক্ত, তাই এটি খাওয়ার পর শারীরিক পরিশ্রম বা এক্সারসাইজ না করলে ওজন বৃদ্ধি এবং কোলেস্টেরল জনিত সমস্যা গুলো মোকাবেলা করতে হতে পারে।
সুতরাং, এরদ্বারা আমরা খেজুরের রসের উপকারিতা, অপকারিতা এবং কাদের খাওয়া উচিত বা উচিত নয় তার ব্যাপারে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা পেলাম। খেজুরের রস পান করার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো মাথা রাখা জরুরি।
নাদিয়া ইসলাম/নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: বেনেফিসিয়ালি