খেতে ভালো লাগে না, একটা বহুল প্রচলিত সমস্যা। অনেকে একে দেখেন ডায়েটের দৃষ্টিতে, কেউ বডি শেমিং-এর হাত থেকে বাচার উপায় হিসেবেও নেন! কিন্তু, না খেয়ে স্বস্তি পাওয়াটা খুব একটা স্বাভাবিক নয়।
এলিক্স টিমকো এখন ফিলাডেলফিয়ার একটি শিশু হাসপাতালে সাইকোলজিস্ট হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি ভাবেন-
১৯৯০ সালের দিকে যখন তারা কলেজে পড়তেন, তাদের কোনো খাওয়া নিয়ে অনীহা ছিলনা। তিনি নিজে দেখতে কেমন ছিলেন আর তা নিয়ে তিনি অসন্তুষ্ট ছিলেন কিনা সেটা তিনি মনেই করতে পারেন না। টিভি সিরিজের কিছু চরিত্রের সাথে তিনি নিজের কিছু মিল পান যারা প্রায় নিয়মিত ব্যায়াম করত এবং তাদের দীর্ঘকালীন উপবাস শেষ হত একটা বিরাট পিজ্জার মাধ্যমে।
এলিক্স বলেন, “ আমার আর আমার বন্ধুদের খাবারে অনীহা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমাদের সেটা হয়নি ”
এটা স্পষ্ট যে,তার সময়ে খাবারে অনীহার ব্যাপারটা তেমন প্রচলিত হয়নি, এক বিশেষ রোগের ডায়াগনোসিস তো দূরের কথা যার নাম- “Anorexia nervosa”, সাধারন ধারণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১% লোক এর দ্বারা আক্রান্ত, তবে এর চেয়ে বেশি লোক আছে যারা এখনো শনাক্তই হয়নি।
এই রোগের লক্ষণ হলো, হঠাৎ করে রোগী নিজেকে উপবাসে রাখতে শুরু করে এবং এর ফলে ওজন কমতে থাকে। এক সময় এমন অবস্থা হয় যে, শরীর কোষগুলোকে বাচিয়ে রাখতে পুরো ব্যবস্থাকে হাইবারনেশনে (সাময়িক অচেতন অবস্থায়) পাঠাতে বাধ্য করে।
ছেলে আর পূর্ণবয়স্ক পুরুষরা আক্রান্ত হলেও সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী কিন্তু মেয়েরা যাদের ১০% মারা যায় এই রোগে। এটা কোন মাদক দ্রব্য গ্রহণ বা চাইল্ড লিউকোমিয়ার মৃত্যুর হার থেকেও বেশি। তবে বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থায়, প্রায় অর্ধেক কিশোর-কিশোরী সুস্থ হয় এবং ২০ থেকে ৩০% রোগিরা উপকৃত হোন।
এই রোগ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা টিমকো আমাদের সাথে আলোচনা করলেন- “ আমাদের সমাজটা এখন এমন, এখানে মেয়েরা বড় হয় এমন পরিবেশে যেখানে স্লিম ফিগার সকলের কাছে সমাদৃত, যা না খেয়ে থাকার প্রতি একটা দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত করে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, তাদের পিতামাতা খুব রুড়, স্নেহহীন বা কখনো আরো খারাপ ”
কিন্তু যখন টিমকো কিশোর বয়সী রোগিদের চিকিৎসা করতে যান, তখন আচমকাই প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে নতুন একটা বিষয় দেখতে পান, “ তাদের নিজেদের ফিগার নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই,তারা তাদের ডায়েট নিয়েও চিন্তিত না। একই সাথে তাদের পিতা মাতাও অনেক ভাল এবং সন্তানদের প্রতি যত্নশীল।তাহলে সমস্যাটা কোথায়? ”
এই বিষয়ে টিমকো আসলে একা না। সমসাময়িক অনেক গবেষককে এ ব্যাপারটা ভাবিয়েছে। সিন্থিয়া বুলিকেরর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই, যিনি নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটিতে এবং একই সাথে ক্যারোলিনস্কা ইন্সটিটিউটে এই রোগ নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, “ ক্ষুধা একটা মৌলিক চাহিদা। কিন্তু আমার রোগীরা বছরের পর বছর বলে যাচ্ছেন যে, তারা না খেয়ে থেকে বা উপবাস করলে বেশি সুস্থ অনুভব করেন ”
তিনি একটা সম্ভাবনার দিকে আমাদের ইঙ্গিত করেন, “তাদের শারিরীক ব্যবস্থাই হয়তো এভাবে মানিয়ে নিয়েছে”। বুলিক এবং টিমকো সেই সকল বিজ্ঞানীদের ভেতর অন্যতম যারা Anorexia এর জৈবিক কারণ নিয়ে কাজ করছেন।যারা যতই গবেষণা করছেন ততই এর জৈবিক কারণের গভীরে চলে যাচ্ছেন।
জেনেটিক তত্ত্ব নির্দেশ করছে যে, এটা স্থুলতা বা ডিপ্রেশনের মত বংশগতীয় হতে পারে। মস্তিষ্কের পুরষ্কার প্রাপ্তি বা তুষ্ট হবার প্রক্রিয়াটি রোগীর ভেতরে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে কাজ করে। নতুন যে চিকিৎসা পদ্ধতি চলছে তা একই সাথে জৈবিক এবং মানসিক দিক নিয়ে কাজ করে। এর উদ্দেশ্য শুধু রোগীকে সুস্থ করাই নয়, বরং রোগটি কতটা মানসিক কারণে হয় তা দেখা।
সুইডেন এবং মিনোসেটার গবেষকরা এই রোগের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে যমজ এবং ফ্যামিলি লাইন প্রভৃতি বিষয়ের উপর গবেষণা করেছেন। দেখা গেছে এই রোগটির ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে জিনের মাধ্যমে বাহিত হওয়ার।
আবার দেখা যায়, যে ঔষধ দিয়ে রোগির শরীরে ওজন বাড়ানো হত, বেশ কিছু ক্ষেত্রে সেগুলো আর কোন কাজ করছে না। এর জন্য জিন দায়ী, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিছু বিজ্ঞানীর মতে, রোগটি দেহের চাহিদার যে প্রক্রিয়া আছে তা উল্টেপাল্টে দেয়। গবেষক এবং মনোবিজ্ঞানীদের ভেতর এখনো মতবিরোধ বিদ্যমান।
রোগটিতে যেহেতু কিছুটা হলেও নেশার বা আসক্তির ধর্ম দেখা দেয়, বেশ কিছু মনোবিদ এটাকে ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করার পক্ষপাতী। ভবিষ্যতে হয়তো আমরা এই সমস্যার মোকাবেলা করতে পারবো।
ঋভু / নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
+1
+1
3
+1
+1
1
+1
+1