সৃজনশীলতার মূল চাবিকাঠি হলো কোনো একটি সমস্যাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উপলব্ধি করা। প্রয়োজন আবিষ্কারের জননী, তাই একটু কৃত্রিম প্রয়োজন তৈরি করা হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমাদের ক্রিয়েটিভিটি বা সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করবে!
বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, ক্রিয়েটিভিটি হলো বুদ্ধিমত্তার কাজ! তিনি আরও বলেছেন, যদি তিনি পদার্থ বিজ্ঞানী না হতেন, তবে সংগীত শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতেন। কারণ তিনি মনে করেন সংগীত তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
গবেষণায় দেখা যায়, সংগীত রচনা এবং শোনা উভয়ই উন্নত প্রতিরোধ ব্যবস্থার অন্তগর্ত। গবেষকরা বলেছেন, যেসকল মানুষ প্রতিনিয়ত তাদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো লিখেন, তাদের CD4+ লিম্ফোসাইট বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে এটা যেকোনো ধরণের সংগীতই হতে পারে, এখানে সুর মূল ফ্যাক্টর!
[CD4+ লিম্ফোসাইট হচ্ছে ইমিউনি সিস্টেম কার্যকারি করার মূল চাবিকাঠি। এটি ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি হিসেবেও কাজ করে।]
সংগীত একটি অন্যতম সৃজনশীল শিল্পকর্ম। এটি মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে এবং মস্তিষ্কে প্রতিক্রিয়া সংযত করতে প্রভাবিত করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, জুম্বা প্রোগ্রামগুলো রক্তচাপ এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
লেখা, অভিনয়, অংকন, নাচ, গান প্রভৃতির মাধ্যমে আমরা সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশ করতে পারি। এই সৃজনশীল কাজ গুলো আমাদেরকে আনন্দিত করে এবং নতুন নতুন কাজের অনুপ্রেরণা যোগায়।
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই আমাদের পূর্বপুরুষ গুহার দেওয়ালগুলোতে ছবি এঁকে সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, মাটির তৈরি শিল্পকর্মগুলো মানুষকে বিভিন্ন ধরনের ট্রমা মোকাবেলায় সহায়তা করে। ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগের অভিজ্ঞতা যেগুলো মুখে বলা যায় না, রোগীরা সেগুলো তাদের সৃজনশীল শিল্পকর্ম যেমন-চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে।
ঔপন্যাসিক মায়া এন্জেলিও বলেছেন, ক্রিয়েটিভিটি হলো একটি গভীরতম তল, আপনি যত বেশি এটি ব্যবহার করবেন, তত বেশি সৃজনশীল হবেন!
BBC সংস্কৃতির একটি প্রতিবেদনে জুলিয়া ক্যামেরন বলেন, “আমার চোখে সৃজনশীলতা হচ্ছে একটি আধ্যাত্নিক অভিজ্ঞতা।” তিনি আরও বলেন, আমরা সকলেই সৃজনশীল এবং সৃজনশীলতা হচ্ছে পুনরুদ্ধারের মূল ভিত্তি।
বিখ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ছিলেন খুবই কৌতূহলী, যার প্রতিফলন আমরা তার সৃজনশীল চিত্রকর্মে দেখতে পাই। পাবলো পিকাসো ছিলেন সৃজনশীলন সংযোগের একজন মাস্টার। সাইকেলের স্যাডল এবং হ্যান্ডলবার গুলো দিয়ে বুলের প্রধান ভাস্কর্যটি তিনি তৈরি করেন।
নীল সেন BBC সংস্কৃতির একটি প্রতিবেদনে বলেন, “সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। আপনি যতবেশি অনুশীলন করবেন, তত বেশি উন্নত হবেন।”
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ব্যথায় ভুগছে এমন কয়েকজন রোগী নিয়ে ৯ সপ্তাহের একটি গবেষণা করেন, সেখানে রোগীদেরকে তাদের প্রতিনিয়ত ব্যথার তীব্রতা, রাগ, ক্ষোভ প্রকাশ করে একটি জার্নাল লিখতে বলা হয়। ৯ সপ্তাহ পরে বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, রোগীদের পূর্বের তুলনায় ব্যথা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ব্যথার তীব্রতাও হ্রাস পেয়েছে।
সৃজনশীল হওয়া মানে কোনো উপন্যাস লেখা বা মাস্টারপিস আঁকার বিষয় নয়। সৃজনশীল আমাদের জীবনের সবক্ষেত্রেই প্রয়োজন। সৃজনশীল হওয়ার কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমনঃ
- মনে নতুন ধারণার আর্বিভাব হয়।
- আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
- সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন হয়।
- মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
মনোবিজ্ঞানী ‘মিহালি সিসিকসেন্ট’ বলেন, “আমরা যখন কোনো সৃজনশীল কাজে নিযুক্ত হই, তখন সাময়িক সময়ের জন্য আমরা নিজেকে ভুলে যাই। আমাদের অসহায় চিন্তা ভাবনা গুলোও কিছু সময়ের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়।”
গবেষণায় দেখা যায়, কবিতা আবৃত্তি করলে মস্তিষ্কের ডান হেমিস্ফিয়ারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, মস্তিষ্কের এই অংশটি আত্মজীবনী মূলক স্মৃতি সংরক্ষন করে। অধ্যাপক ডেভিস বলেন, কবিতা শৈলীর বিষয় নয়, এটি অভিজ্ঞতার সংস্করণ যা সংবেদনশীল জীবনী যোগ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি নতুন গবেষণায় দেখা যায়, ২o-২৬ বছর বয়সে মানুষের মস্তিষ্কে উদ্ভাবন শক্তি সবচেয়ে বেশি থাকে। গবেষকরা অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি গবেষণা করেন। সেখানে দেখা যায়, ২o এর আশেপাশে বয়সে নোবেল বিজয়ীরা সবচেয়ে বড় কাজ করেছেন এবং পরবর্তীতে তারাই নতুন ধারণার উদ্ভাবক হয়েছেন।
সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, মানুষ বেশির ভাগ সময় তার জীবনের সেরা উদ্ভাবনী কাজটি করে থাকে ক্যারিয়ারের প্রায় শেষের দিকে, তাই এই বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের সৃজনশীল কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়া উচিত।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ মেডিক্যাল নিউজ টুডে, বিবিসি, movenourishbelieve, xyladigitaltherapies.com, lifehack.org