কাগজি মুদ্রা কিংবা হোক ধাতব মুদ্রা, মুদ্রার এই রুপগুলো আমারা গত ৩ হাজার বছর ধরে ব্যবহার করছি। আগের যুগে বিনিময়ের মাধ্যমে লেন দেন থেকে পরিবর্তন হয়ে আসে বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু দিয়ে লেন দেন, এরপর আসে মুদ্রা (ধাতব কিংবা কাগজের) । তবে বর্তমানে আধুনিকতার কল্যানে চলে আসে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম বা ক্যাশলেস পেমেন্ট সিস্টেম, যেখানে সরাসরি কোনো মুদ্রার বাস্তব (শারিরীকভাবে) অস্তিত্বই নেই।
টাকার বাস্তব অস্তিত্বের বিনিময়ে আছে কেবল নির্দিষ্ট সিস্টেমে কেবল নিজেদের জন্য নাম্বার বা পয়েন্টস যা কাজ করে বাস্তব মুদ্রার পরিবর্তে। মুদ্রাবিহীন পেমেন্ট সিস্টেম যেকোনো ব্যাংক কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং এ হতে পারে। ব্যাংকের জন্য নির্দিষ্ট ক্রেডিট কিংবা ডেভিট কার্ড বা অন্যান্য আর মোবাইল ব্যাংকিং এর জন্য তাদেরও রয়েছে এপ্স ইত্যাদি। যার সাহায্যে এখন আমরা প্রতিদিন ক্যাশ হাতে না নিয়ে ইচ্ছেমত কেনাকাটা করতে পারছি। নিত্যদিন বিশ্বের এক অজস্র মানুষ এই সহজ সিস্টেমের আওতায় আসছে।
কিন্তু এবার প্রশ্ন হলো,
হাতে টাকা থাকলে আমরা যেভাবে তা ব্যবহার করি ক্যাশলেস পেমেন্টেও কি আমরা সেভাবেই করি?
টাকার ব্যবহারে কি আমাদের সেই একই মনোভাব কাজ করে?
বিভিন্ন গবেষণা বলে, এ সময় কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ার এডিলেড ইউনিভার্সিটি এবং মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির যৌথ এক দল ১৭ টা ভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা ৭১ টা রিসার্চ পেপারের ডাটা এনালাইসিস করে আমাদের খরচ করার অভ্যাসের দিকে নজর দেন। তাদের এনালাইসিসে দেখতে পান যে, আমরা যখন ক্যাশলেস পেমেন্ট করি তখন ক্যাশ পেমেন্ট করার চেয়ে বেশি খরচ করতে উদ্ভুত হই।
আমরা ফোন ট্যাপ বা কার্ড সুয়াইপ করে কোনো কিছুতে যখন টাকা খরচ করি তখন প্রয়োজনের বেশি বা কম টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে কিনা এই চিন্ত কম করি, অর্থাৎ খরচের দিকে কম কঠোর হই। যে কঠোরতা আমাদের হাতে ক্যাশ থাকলে দেখা যায়। এটি হওয়ার কারন হিসেবে তারা মনে করেন, এখানে কত পরিমান খরচ করতে হবে সেটার আমাদের শারিরীক কোনো চিত্র নেই।
মার্কেটিং গবেষক ল্যাচলান স্কোমবার্গ এ নিয়ে বলেন,
“নগদ অর্থ ব্যবহার করার সময়, লোকেরা শারীরিকভাবে গণনা করে এবং নোট এবং পয়সা ইত্যাদি নিজেদের হাতে রাখে যা তাদের খরচ করার কাজটিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। যদি শারীরিকভাবে কিছু এভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে কত খরচ হয়েছে তার ট্র্যাক হারানো সহজ। এজন্য আমরা পরিকল্পনার চেয়ে বেশি ব্যয় রোধ করতে পরামর্শ দিই যে গ্রাহকরা যখনই পারেন কার্ডের পরিবর্তে নগদ অর্থ নিয়ে যান, কারণ এটি একটি আত্ম-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসাবে কাজ করে।”
গবেষকরা আরো বলেন, বর্তমানে নগদহিন আদান প্রদান গুলো সহজতর বা সাধারণ হয়ে উঠেছে। এজন্য গ্রাহকরা সহজে এটিতে অভ্যস্থ হয়ে পরছেন। বিশ্ব এভাবে নগদহীন সমাজের দিকে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে এই অভ্যাসের প্রভাব আরও বাড়তে পারে। একই সাথে বর্তমানে এমন কিছু পেমেন্ট সিস্টেম আছে যেখানে আগে কিনে পরবর্তীতে পে করার সুযোগ হয়ে উঠছে, তারা এটাও দেখতে ইচ্ছুক এই পদ্ধতিটি আমাদের পেমেন্ট করার আচরণকে নতুন ভাবে প্রভাবিত কড়ে কিনা।
সবশেষে স্কোমবার্গ এটিও বলেন যে,
“আমাদের একটি নগদহীন সমাজের দিকে রূপান্তর প্রায় অনিবার্য বলে মনে হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি এই গবেষণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই পরিবর্তন কীভাবে আমাদের আচরণকে প্রভাবিত করে তা আমাদের জানা উচিত। এজন্য তিনি সবাইকে উপদেশ দিতে চান যেন পেমেন্টের ক্ষেত্রে নিজের সাথে ক্যাশ রেখে দেন।”
মাহফুজুর রহমান রিদোয়ান / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সায়েন্স এলার্ট, সায়েন্স ডেইলি