সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কয়েকদিন ধরেই ভাইরাল নিচের ছবি এবং সংবাদটি। সংবাদটি অনেকটা এরকম “ছবির শিশুটির বয়স নয় মাস, অল্প বয়সের কারণে শ্বাস নিতে পারছে না। ডাক্তাররা অন্য মানুষের ফুসফুসের সাথে সংযুক্ত করে শ্বাস নিতে বলেছেন তাই শিশুটির বাবা বুক ছিড়ে ফেলেছেন।” বস্তুত ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে ভুল নেই, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই পদ্ধতিকে বলে ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (KMC) বা Skin-to-Skin Contact। ভাইরাল হওয়া ছবিটি সঠিক হলেও এর সাথে দেওয়া তথ্য অতিরঞ্জিত এবং ভুল। তাহলে সঠিক তথ্য কী? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া অপরিণত শিশুদের বাঁচাতে ইনকিউবেটরের বিকল্প হিসেবে কাজ করে ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার বা ক্যাঙ্গারু কেয়ার। এই পদ্ধতিতে শিশুকে এমনভাবে বুকে শুইয়ে রাখতে হয় যেন দুজনের ত্বকে ত্বক লেগে থাকে। মা ও বাবা উভয়ই ক্যাঙ্গারু কেয়ার করতে পারেন। প্রত্যেক সেশনে শিশুকে নগ্ন বা ডায়পার পরা অবস্থায় মা অথবা বাবার বুকে কিছু ঘন্টার জন্য শুইয়ে দেওয়া হয়।
তারপর শিশুর শরীরের উপর পাতলা কাপড় বা কম্বল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় যাতে উষ্ণতা বজায় থাকে। ঠিক একইভাবে ক্যাঙারু নিজের পেটের নিচে থলেতে বাচ্চাদের নিয়ে চলাফেরা করে। তাই এই পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে ক্যাঙারু মাদার কেয়ার।
ক্যাঙ্গারু কেয়ার পদ্ধতির বিকাশ ঘটে ১৯৭০ সালের দিকে কলম্বিয়াতে যখন শিশুমৃত্যুর হার ছিলো ব্যাপক। সেই সময় অপরিণত শিশুদের মধ্যে প্রায় ৭০% শিশুই মারা যেত। মৃত্যুর কারণ ছিলো ইনফেকশন, জন্ডিস, জন্মগত ক্রুটি, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা ও পর্যাপ্ত দেখভালের অভাব।
গবেষকরা সেই সময় লক্ষ করেন, যেসব নবজাতক দীর্ঘসময়ের জন্য মায়ের দেহের নিকটে থাকে তারা বেঁচে যাওয়ার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটছে। ক্যাঙ্গারু কেয়ার পদ্ধতির প্রয়োগ অপরিণত শিশুদের পাশাপাশি সব শিশুদের জন্যই উৎসাহিত করা হয়। সাধারণত গর্ভাবস্থার স্থায়িত্বকাল ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত হয়। যেসব শিশুর জন্ম ৩৭ সপ্তাহের পূর্বে হয় তাদেরকে বলা হয় প্রিমেচিউর বা প্রি-টার্ম শিশু।
প্রিমেচিউর শিশুদের দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অপরিণত থাকে, পাশাপাশি কিছু শিশুদের জন্ম সময়ের এতো আগে হয় যে ত্বকের নিচে চর্বির স্তর স্বাভাবিকভাবে তৈরির সময়টুকু হয়ে উঠেনা। এইসব শিশুদের দেহ উষ্ণ রাখার জন্য ইনকিউবেটর ব্যবহৃত হয়। ক্যাঙ্গারু কেয়ার পদ্ধতিকে মানব ইনকিউবেটর সিস্টেমও বলা হয়। এই পদ্ধতির উপকারিতা:-
শিশুর বাবা, মা যেকোন একজনের ত্বকের সাথে শিশুর ত্বক দীর্ঘসময় স্পর্শ করিয়ে রাখার ফলে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে। এটি শিশুকে ইনকিউবেটরে রাখার মতোই কার্যকর।
This premature baby is placed on the father’s chest immediately after birth, because his chest regulates the baby’s temperature better than an incubator. pic.twitter.com/hJVFbokNUu
— Medical Facts Hub (@MedicalFactsHub) October 8, 2020
নবজাতক শিশুর মা’এর অনুপস্থিতিতে শিশুর বাবা, নানী-দাদী যে কেউ চাইলে এই পদ্ধতিতে নবজাতককে বুকে আগলে রাখতে পারেন। গবেষণা মতে ক্যাঙ্গারু কেয়ার এর ফলে শিশুর মস্তিষ্কেরও বিকাশ ঘটে। এইতো গেলো ক্যাঙ্গারু কেয়ার পদ্ধতির আলোচনা, মূল প্রসঙ্গে আসা যাক এবার। ভাইরাল হওয়া ছবিটি সম্পর্কে কোন অফিশিয়াল তথ্য পাওয়া যায়নি।
নাইজেরিয়ার গনমাধ্যম ও @MedicalFactsHub টুইটার অ্যাকাউন্ট মতে, নবজাতক শিশুটি ছিলো প্রিমেচিউর। শিশুর মা সি-সেকশন ডেলিভারির ফলে তখনো সুস্থ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বাবাই শিশুর ক্যাঙ্গারু কেয়ার করেন। শিশুর পরিবার তার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত থাকলেও বর্তমানে শিশুটি সুস্থ আছে।