“জুটে যদি মোটে একটি পয়সা
খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি,
দুটো যদি জুটে
অর্ধেকে তার কোমলপানীয় কিনে নিও হে অনুরাগী!”
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের সেই বিখ্যাত কবিতার লাইন চারটিকে যদি এভাবে লিখা হয়, খুব একটা ভুল হবে না। কারণ পরিসংখ্যান বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫% প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন চিনিযুক্ত কোমলপানীয় গ্রহণ করেন। যদিও বাংলাদেশে কত শতাংশ সে ব্যাপারে কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি তবুও বর্তমান সময়ে প্রতিদিন অন্তত একটা Soft drinks ছাড়া যেন আমাদের দিনই কাটতে চায় না।
অথচ চিনিযুক্ত এসব কোমলপানীয় প্রতিনিয়ত আমাদের ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর দিকে। BRIGHAM AND WOMEN’S HOSPITAL এর গবেষণায় উঠে এসেছে কৃত্রিম চিনিযুক্ত এসব কোমলপানীয় লিভার ক্যান্সার এবং দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগের একটি প্রধান কারণ।
গবেষণা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটির মতে এটিই চিনিযুক্ত কোমলপানীয় এবং দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে প্রথম গবেষণা।
প্রায় ১ লাখ পোস্ট মেনোপোজাল মহিলাদের নিয়ে চালানো হয় এই পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকে নিশ্চিত করেছিলেন যে তারা বিগত তিন বছর ধরে নিয়মিত কোমলপানীয় পান করেছেন। এরপর ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই মহিলাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
দীর্ঘ সময়ের এই পর্যবেক্ষণে গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের মাঝে লিভার ক্যান্সার, দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগ যেমন ফাইব্রোসিস, সিরোসিস বা হেপাটাইটিস কারণে মৃত্যু হতে দেখেছেন এবং এই মৃত্যু যে লিভার রোগের জন্যই হয়েছে তা মেডিকেল রেকর্ড এবং জাতীয় মৃত্যু সূচক দ্বারা যাচাই করা হয়।
চূড়ান্ত বিশ্লেষণে মোট ৯৮৭৮৬ জন মহিলাদের মাঝে যারা প্রতি মাসে তিনটি চিনিযুক্ত কোমলপানীয় গ্রহণ করেন তাদের তুলনায় যে-সব মহিলারা প্রতিদিন এক বা একাধিকবার চিনিযুক্ত কোমলপানীয় গ্রহণ করেন তাদের লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ৬৮ শতাংশ বেশি পাওয়া গিয়েছিল।
এই অতিরিক্ত মৃত্যু ও রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে কোমলপানীয় পানের ক্ষতিকারক দিকগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেলেও গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যেহেতু এই গবেষণাটি পর্যবেক্ষণমূলক ছিল, তাই এই ঝুঁকির সম্পর্কে যাচাই করার জন্য এবং চিনিযুক্ত পানীয়গুলো কেন লিভার ক্যান্সার এবং রোগের ঝুঁকি বাড়ায় তা নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন।
তবে যাই হোক অর্থের বিনিময়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি কিনে নেওয়ার অদ্ভুত এক স্বভাব নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে মানুষ। নিজেদের স্বার্থে মানুষের এই অভ্যাস পরিবর্তন জরুরি।
আসিফুল হাসান আসিফ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সাইন্স ডেইলি, Everyday Health