কোকাকোলা: একটি কোম্পানি যার প্রচারণা হয়েছে শুধু গুজব দিয়ে! অবাক হচ্ছেন? হবারই কথা।
আমাদের আশেপাশে কোকাকোলা নিয়ে বিভিন্ন কথা সবসময় শোনা যায়। সেগুলো শুনতে বেশ মজাদার হলেও পিছনের দৃশ্যটা কেউ খেয়াল করে দেখে না। একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষ যা জানে তার বেশির ভাগই গুজব। তেমনই কিছু প্রচলিত গুজব, যেটা প্রায় আগের শতাব্দীর পুরোটা এবং বর্তমানেও মানুষের মাঝে প্রচলিত রয়েছে, চলুন তার পিছনের দৃশ্য দেখে আসি।
ইতিহাসঃ
১৮৮৯ সালে ড. জন এস. প্যামবারটন কোকাকোলা আবিষ্কার করেন এবং একটি ছোটো টিমের মধ্যেই এর প্রস্তুতপ্রণালি সীমাবদ্ধ রাখেন যা কখনও লিখিত আকারে প্রস্তুত করা হয় নি। তারা তাদের পানীয়র প্রচারের জন্য মিডিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগত এই বিষয়টা প্রচার করতে থাকেন; কোকাকোলাতে স্পেশাল দ্রব্য থাকে থাকে এবং এর প্রস্তুতপ্রণালী পৃথিবীর সবচেয়ে সিক্রেট একটি জিনিস আর, মানুষের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে ইস্যুটা। বিভিন্ন কমার্শিয়াল বিজ্ঞাপন ও লিফলেটও প্রচার করা হয়। ১৯২৫ সালে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য এর একমাত্র লিখিত প্রস্তুতপ্রণালিটি জমা দিয়ে লোন নেন। প্রস্তুত প্রণালীটি প্রায় ৯৫ বছর ধরে এখনও ব্যাংকের ভল্টে রয়েছে। সে থেকে একটা ধারণা চলে আসছে এটি একটা মাত্র লিখিত কপি!
কতজন মানুষ সিক্রেট ফর্মুলা সম্পর্কে জানেন?
কোকাকোলা একটি বিশ্বব্যাপি প্রচলিত পানীয় যা প্রায় ২০০ টি দেশে বিক্রি করা হয় এবং ৭ লক্ষের বেশি মানুষ এই কাজের সাথে জড়িত!
এতে বোঝা যায় প্রতিটা জায়গাতে অবশ্যই দুইজন সব করে না।
কোম্পানি নতুন পলিসি বানায় ১৯২৫ এর পর। বোর্ড, প্রেসিডেন্ট ও চেয়ারম্যানের অনুমতি বাদে ফর্মুলা কেউ জানতে পারে না। সিক্রেট ফর্মুলা জানা ব্যক্তিরা বাকি সময় নজরদারিতে থাকে। কোকাকোলা কোম্পানির মতে, এগুলো জানা মানুষের সংখ্যা অনেক কম। তবে সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা হয় নি। দুই জন মানুষের কথা মূলত তাদের এক টিভি বিজ্ঞাপন থেকে ছড়িয়েছে। যেখানে প্রচার করা হয়, প্রস্তুতপ্রণালীর তথ্য শুধু দুই জন ব্যক্তি জানে, তাই তারা কখনো একই বিমানে ভ্রমণ করে না।
আসলেই কী কেউ কোকাকোলাতে ব্যবহৃত উপাদান নিয়ে জানে না??
কোকাকোলার উপাদানগুলো আমেরিকার মতো দেশে সুরক্ষিত থাকা অসম্ভব এমনকি এটা দেশে আনতেও প্রচার হবেই। সেখানে তাদের বিশেষ উপাদান (কোকা পাতা থেকে কোকেইন আনা) আনার জন্য আমেরিকায় প্লান্ট আছে যা DEA পার্মিটেড, এটি অন্য কোথাও নেই। আবার আরব ও মুসলিম দেশগুলোর জন্য তারা সার্টিফাইড দ্রব্যসমুহ(হালাল) ব্যবহার করে থাকে সেখানের বাজার ধরার জন্য।
তবে এর সিক্রেট উপাদান নেই?
কোকাকোলার মূল উপাদান গোপন নয়। কারণ এর উৎপাদনের সময় থেকে একই উপাদান ব্যবহার করে আসছে। বরং এর প্রস্তুতপ্রণালীতে বিশেষ পদ্ধতির ব্যবহার করাই মূল। আর গুজব বিষয়টিকে আরও জনপ্রিয় বানিয়েছে। মূলত চিনি জাতীয় পদার্থের/আখের চিনি জন্য এটি বেশ মুখরোচক হয়!
এতে শুকরের মাংস ব্যবহার করা হয় কী?
কোকাকোলার বেশির ভাগ প্রোডাক্টে ভেজ ব্যবহার করা না। আবার যেগুলোতে হয় সেগুলোতে পশুর অংশ ব্যবহার করা হয় না। কিছু প্রোডাক্টে দুধ, মাছের অংশ ব্যবহার করা হয় যা রেসিপিতে বিস্তারিত আছে। ১৯৯৩ সালে মার্ক নামের এক ব্যক্তি আসল উপাদানগুলো নিয়ে বই প্রকাশ করেন। তাছাড়া ১৯৭৯ সালে পাওয়া একটি ডায়েরীর অংশে উপাদানগুলোকে পাওয়া যায়।
রওনক শাহরিয়ার/ নিজস্ব প্রতিবেদক
সোর্সঃ
কোকাকোলার রেসিপিঃ
https://www.google.com/amp/s/amp.theguardian.com/business/2011/feb/16/coca-cola-secret-recipe-discovered
ফ্যাক্ট চেকঃ
http://www.hoaxorfact.com/history/only-two-coca-cola-executives-know-coke-s-secret-recipe-formulation.html
http://www.todayifoundout.com/index.php/2014/10/formula-coca-cola-know-two-people/
https://www.snopes.com/fact-check/coca-cola-fomula/
আরব ও মুসলিম দেশগুলোতে প্রসারঃ
https://www.nytimes.com/1978/03/29/archives/cocacola-is-pressing-efforts-to-uncork-arab-markets-cocacola.html
https://www.gulfoodmanufacturing.com/news–trends/rise-of-premium-and-halal-carbonated-soft-drinks-in-mea