আজ বিশ্ব ব্লাড ক্যান্সার দিবস। বিশ্ব ব্লাড ক্যান্সার দিবস হলো ব্লাড ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টির দিবস। প্রতিবছর ২৮শে মে সবাই ব্যক্তি, পরিবার, বন্ধু, সম্প্রদায় নির্বিশেষে আন্তর্জাতিক সংস্থা ডব্লিউ বি সি ডি( WBCD) এর আনুষ্ঠানিক চিহ্ন ব্যবহার করে এই বিশেষ দিবসটি পালন করে থাকে।
ব্লাড ক্যান্সারের প্রকারভেদঃ
ব্লাড ক্যান্সার মূলত তিন ধরনের হয়ে থাকে।
১. শ্বেত কণিকা থেকে সৃষ্ট ব্লাড ক্যান্সার কে লিউকোমিয়া ব্লাড ক্যান্সার বলে।
২. লসিকা গ্রন্থি থেকে সৃষ্ট ব্লাড ক্যান্সারকে বলা হয় লিম্ফোমা।
৩. প্লাজমা সেল বা কোষ থেকে সৃষ্ট ব্লাড ক্যান্সার কে মাইলোমা বা প্লাজমা সেল লিউকোমিয়া বলা হয়।
ব্লাড ক্যান্সারের কারনঃ
ব্লাড ক্যান্সারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে কেমিক্যাল, ভাইরাস, পরিবেশ, রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তা অন্যতম।
আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্যের সম্মুখীন হচ্ছি। খাদ্যদ্রব্য, শাকসবজি, ফলমূল, রূপচর্চার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন কসমেটিকস্, পেট্রোলিয়াম, রং করার উপাদান ইত্যাদি সবকিছুতেই বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয় যা মানবদেহে ব্লাড ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে।
খুব কম ক্ষেত্রেই রোগটি বংশগত; পারিবারিক ইতিহাসে কারো এই রোগ বা রক্তকণিকা উৎপাদন সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কারো ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া প্রতিনিয়ত বেশিরভাগ সময়ে সূর্যের নিচে থাকলে বিশেষত যারা সমুদ্রে কাজ করে, এক্স-রে, রেডিওথেরাপি তে সুরক্ষার জন্য ডিভাইস না ব্যবহার করলে রেডিয়েশন জনিত কারণে ব্লাড ক্যান্সার হতে পারে।
ব্লাড ক্যান্সারের সাধারণ কিছু লক্ষণ হচ্ছেঃ
১. অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমে যাওয়া
২. অনেক দুর্বল অনুভব করা
৩. সহজেই রক্তপাত হওয়া
৪. লিম্ফ নোড বড় হয়ে যাওয়া
৫. ঘাম দিয়ে জ্বর আসা
৬. হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা অনুভব করা
৭ অরুচি, বমি বমি ভাব
৮ রক্তের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়া, যেমনঃ অক্সিজেন পরিবহণে সমস্যা হওয়া।
CBC (Counting Blood Cell) টেস্ট, ইলেকট্রফোরেসিস,অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন, টিউমার মার্কার টেস্ট ইত্যাদি এর মাধ্যমে ব্লাড ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়।
ব্লাড ক্যান্সারের কমন কিছু ট্রিটমেন্ট হচ্ছে কেমোথেরাপি,রেডিওথেরাপি এবং কিছু ক্ষেত্রে অস্থিমজ্জা ট্রান্সপ্লান্ট অথবা স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়।
কেমোথেরাপিতে ক্যান্সার কোষের সাথে লড়াই করার জন্য অ্যান্টি-ক্যান্সার ড্রাগ ব্যবহার করা হয়। রেডিয়েশন থেরাপিতে ক্যান্সার কোষ কে মেরে ফেলার জন্য বিকিরণের উচ্চ শক্তি ব্যবহার করা হয়। এটা ক্যান্সার কোষকে লক্ষ্য করে করে দেয়া হয় যা ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলে অথবা সংকুচিত করে ফেলে। স্টেমসেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট বর্তমানে বেশ সফল ও জনপ্রিয় একটি প্রক্রিয়া। এ পদ্ধতিতে আক্রান্ত স্টেমসেল গুলোকে সুস্থ ও ভালো স্টেমসেল দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।
কিভাবে আপনি ব্লাড ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারবেন?
১. নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন চর্চা করা
২. নিয়মমাফিক ও স্বাস্থ্যসম্মত লাইফ স্টাইল মেনে চলা
৩. কীটনাশক এবং উদ্ভিদনাশক থেকে দূরে থাকা
৪. তেজস্ক্রিয়তা থেকে দূরে থাকা
৫. স্বাস্থ্যসম্মত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা
৬. শারীরিক সমস্যা হলে নিজে নিজে চিকিৎসা বা ওষুধ গ্রহণ না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া
৭. তামাক জাতীয় দ্রব্য পরিহার করা।
প্রতি ৩৫ সেকেন্ডে বিশ্বে একজন লিম্ফোমো বা লিউকোমিয়ার মত ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।
অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন বর্তমানে ব্লাড ক্যান্সার নিরাময়ে অন্যতম আশার আলো দেখাচ্ছে। কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপিতে অনেক পার্শপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টসহ অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। অন্যদিকে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনকে সবাই নিরাপদ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। অস্থিমজ্জার ডোনারের সাথে রোগীর লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন অথবা HLA টিস্যুর সাথে মিলে গেলে খুব সহজেই প্রতিস্থাপন করা যায়।
বর্তমানে আশার ব্যাপার এই যে, পৃথিবীতে প্রচুর অস্থিমজ্জার ডোনার স্ব-ইচ্ছায় অস্থিমজ্জা প্রদান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। একজন ব্যক্তি ১৮-৫৫ বছরের মধ্যে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হলে সহজেই ডোনার হিসেবে নিজের নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। আপনার এই অস্থিমজ্জা একজন ব্যক্তিকে দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে জীবন ধারণ করতে সুযোগ করে দিবে।
আপনি আন্তর্জাতিক অস্থিমজ্জা দাতা রেজিস্ট্রিতে নিজের নাম নিবন্ধিত করতে পারেন ডোনার হিসেবে। অনেক সময় রোগীর সাথে টিস্যু ম্যাচ না হওয়াতে দাতা খুঁজে পাওয়া অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই আমাদের উচিত নিজ উদ্যোগে ক্যান্সার রোগীদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া।
রাদিয়া আহমেদ লুবনা/ নিজস্ব প্রতিবেদক