কৃমি শব্দটার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। বাচ্চাদের নানা শারীরিক সমস্যা থেকে শুরু করে বড়ো হয়েও আমাদের অনেক সময় নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় কৃমির কারণে। এই জীবগুলো আমাদের শরীরে অবস্থান করে পুষ্টি শোষণ করে আমাদের ক্ষতি করে। তেমনই এক কৃমির প্রজাতির নাম রক্তকৃমি বা Bloodworms. তবে এটা বাকি কৃমিদের মত আমাদের দেহে বসবাস করে না। এটি এক ধরনের খন্ডিত কীট যা অগভীর উপকূলীয় স্থানে কাদায় জন্মায়। নোনতা পানির কাদাতেই এদের বেশি পাওয়া যায়। প্রতিরক্ষা ও খাদ্যের জন্য বিভিন্ন প্রাণির শরীর থেকে রক্ত চুষে ফেলতে পারে ব্লাডওয়ার্ম। এই কাজে সাহায্য করে চোয়ালে দাঁতের মত একটি অংশ। এবং কৃমির এই চোয়াল-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি কপার দ্বারা গঠিত!
কপার চোয়ালের রহস্য:
প্রাণিজগতের অন্যতম শক্তিশালী চোয়াল ধরা হয় এই কৃমির চোয়ালকে। প্রতিরক্ষার কাজে এটি তাদের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী হাতিয়ার। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, সান্তা বারবারার একজন গবেষক হার্বার্ট ওয়েট ব্যাখ্যা করেছেন, “চোয়ালের মত এই অংশটি আমাদের দাঁতের মতই কাজ করে, কিন্তু আমাদের মত জীবন্ত টিস্যু দিয়ে এটা গঠিত হয়না। বরং সেটি জীবন্ত টিস্যু এবং সামুদ্রিক লবণাক্ত পানির মাঝামাঝি কিছু উপাদান দিয়ে সৃষ্টি হয়।” এই থেকে আমরা সহজেই ধারণা করতে পারি এই চোয়ালের ব্যতিক্রমধর্মী গঠন নিয়ে। গবেষণার মাধ্যমে জানা গিয়েছে, এটির প্রধান উপাদান কপার। কপার বাদেও এতে প্রোটিন, মেলানিন, অন্যান্য খনিজের উপস্থিতি রয়েছে।
হার্বার্ট ও তাঁর দল এই চোয়ালের মধ্যে উপস্থিত প্রোটিনের আচরণ ও বৈশিষ্ট্য পরীক্ষার উদ্দেশ্যে ল্যাব-নির্মিত প্রোটিন ব্যবহার করেছিলেন। প্রোটিনটি মাল্টিটাস্কিং করতে সক্ষম। অর্থ্যৎ একটি প্রোটিন দিয়েই অনেকগুলো কাজ করা সক্ষম। এই বৈশিষ্ট্যের জন্য হার্বার্ট ও তাঁর দল এর নাম দেন, এমটিপি (মাল্টিটাস্কিং প্রোটিন)। হ্যারিংটন নামের অপর এক বিজ্ঞানী বলেন, “জীববিজ্ঞানে এই এমটিপির ধারণা সাধারণ নয়। এটি সাধারণ প্রোটিন সিকুয়েন্সের চেয়ে আলাদা।”
ল্যাবরেটরি পরীক্ষা থেকে দেখা গিয়েছে, এই দাঁত গঠনের সময় প্রোটিন কপারকে আবদ্ধ করে একটা জটিল গঠন তৈরি করে, যেভাবে পানি ও তেলের মিশ্রণে পানি ও তেল একে অন্যকে আবৃত করে। প্রোটিন-কপার যৌগ এক ধরণের মেলানিনের রূপান্তরের মাধ্যমে একটি অ্যামিনো এসিড উৎপন্ন করে যাকে 3,4-ডাইহাইড্রোক্সিফেনিল্যালানিন বা DOPA বলা হয়। শেষ পর্যন্ত এই অ্যামিনো এসিড, কপার, মেলানিন একত্রিত হয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া শেষে একটি ফাইবারে রুপান্তরিত হয়। এই ফাইবারটিই সৃষ্টি করে প্রাণিজগতের অন্যতম শক্তিশালী চোয়াল।
হার্বার্ট বলেছেন, এই সব গবেষণার একটিও প্রাণি দেহে করা হয়নি। তাই প্রকৃত রহস্য উদ্ধারের জন্য, প্রোটিনগুলো কীভাবে কাজ করে সেটি জানার জন্য পরীক্ষাগুলো পরবর্তীতে রিকম্বনেট প্রোটিনের মধ্যে করা হয়েছিল।
ব্লাডওয়ার্মের এই বৈশিষ্ট্য নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে; হয়তো ভবিষ্যতে নতুন কোনো চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসবে। তবে, কপারের তৈরি এই দাঁতগুলো যে প্রকৃতির এক বিস্ময়, তা বলাই যায়।
তানভীর আহমেদ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: অ্যাডভান্স সায়েন্স নিউজ