পৃথিবীর বুকে যেকোনো আজব ও অদ্ভুত ঘটনার কথা শুনলেই সবার প্রথমে যে দেশের কথা আমাদের মাথায় আসে তা হলো চীন। চীন যে শুধুই অদ্ভুত ও আজব সব ঘটনা জন্মস্থান ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই সেরকম নয়। চীনারা বরাবরই টেকনোলজিতে এগিয়ে। নামীদামী ব্র্যান্ডের সব পণ্যের স্বল্পমূল্যের রেপ্লিকা বানানো যেন তাদের বা হাতের খেলা। চীন এবার মহাকাশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার একক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চলে আসা স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে নিজেদের অস্তিত্বকে আরো জোরেশোরে জানান দিতে চাইছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষণাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে চলতি বছরেই চীনা বিজ্ঞানীরা চাঁদের ন্যায় অনুরূপ ভৌগোলিক পরিবেশ বিশিষ্ট একটি পরিবেশ তৈরি করেছে যেটাকে তারা “কৃত্রিম চাঁদ” বলে দাবি করছে।
২-ফুট-ব্যাস (৬০ সেন্টিমিটার) বিশিষ্ট এ ভ্যাকুয়াম চেম্বারে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা মাধ্যাকর্ষণকে সুবিধা অনুসারে নিয়ন্ত্রণ করে লো-গ্রাভিটি পরিবেশ তৈরী করা সম্ভব হবে। গবেষকদের মতে, চেম্বারটি তৈরির অনুপ্রেরণা এসেছে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পদার্থবিদ আন্দ্রে গেইমের (satirical Ig Nobel Prize in 2000 winner) একটি পরীক্ষা থেকে যেখানে তিনি চুম্বকক্ষেত্র ব্যবহার করে কিভাবে একটি ব্যাঙকে শূণ্যে ভাসিয়ে রাখা যায় দেখিয়েছেন।
চায়না ইউনিভার্সিটি অফ মাইনিং অ্যান্ড টেকনোলজির জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার লি রুইলিন সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন যে, চেম্বারটি চন্দ্র পৃষ্ঠের ন্যায় পাথর এবং ধুলো দিয়ে ভর্তি এবং যতক্ষণ আপনি চান ততক্ষণ এই ধরনের কম-মাধ্যাকর্ষণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম ৷
এখন থেকে বিজ্ঞানীরা চাঁদে বিভিন্ন অভিযান চালানোর পূর্বে এই নিম্ন-মাধ্যাকর্ষণ পরিবেশে প্রযুক্তি পরীক্ষা করার সুবিধাটি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছেন। এটি তাদের যে কোনও ব্যয়বহুল প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলিকে সহজে খুঁজে বের করতে ও সমাধান করতে, সেইসাথে চাঁদের পৃষ্ঠে নির্দিষ্ট কোনো কাঠামো টিকে থাকবে কিনা এবং সেখানে মানব বসতি স্থাপনের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে সাহায্য করবে।
আন্দ্রে গেইমের ব্যবহৃত লেভিটেশন কৌশল এবং কৃত্রিম-চাঁদ উভয়ক্ষেত্রেই ডায়ম্যাগনেটিক লেভিটেশন এর প্রভাবকে কাজে লাগানো হয়েছে। ব্যাপারটা একটু সহজে বুঝিয়ে বললে, প্রতিটি পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে যেমন ঘুরতে থাকে তেমনি লাটিমের মতো নিজ অক্ষের উপর ঘুরতে থাকে। আমরা জানি চার্জযুক্ত কণার গতির কারণে পরমাণুর মধ্যে প্রত্যেক ইলেকট্রন স্বতন্ত্র চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। কোন পরমাণুতে যদি সমান সংখ্যক ইলেকট্রন বিপরীত অভিমুখে ঘূর্ণায়মান থাকে,তাহলে একটা ইলেকট্রন দ্বারা উৎপন্ন চৌম্বক ক্ষেত্র বিপরীত অভিমুখে ঘূর্ণায়মান অপর ইলেকট্রনের চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা নাকচ হয়ে যায়। অর্থাৎ ঐ পরমাণুতে লব্ধি চৌম্বক ক্ষেত্র থাকেনা। এসকল পদার্থকে খুব শক্তিশালী কোন চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে স্থাপন করলে চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে ইলেকট্রন এর ঘূর্ণন সামান্য প্রভাবিত হয়ে খুবই ক্ষীণ চৌম্বকত্ব প্রদর্শন করে যাকে ডায়াচৌম্বকত্ব বলে।
এছাড়াও মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠানোর পাশাপাশি চীন নিজেদের স্পেস স্টেশন (Tiangong Space Station, যেটা আকারে International Space Station এর ৫ গুণ) তৈরির পরিকল্পনায় রয়েছে। ২০২৪ সাল নাগাদ পৃথিবীর কক্ষপথে একটি বিশাল বিশাল স্পেস টেলিস্কোপ (The Chinese Space Station Telescope) পাঠানো এবং 2029 সালের মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে একটি চন্দ্র গবেষণা কেন্দ্রও স্থাপন করবে তারা। এক কথায়, এই আসছে দশকে চীন মহাকাশেও নিজেদের দাপট দেখতে পিছ পা হবে নাহ।
মোঃ গালীব হাসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স, ফোর্বস, রাডবাউড ইউনিভার্সিটি