আমাদের আশেপাশে এমন কিছু মানুষ দেখবেন, তাদের আমরা প্রচুর পরিমাণে খেতে দেখি কিন্তু তাও মোটা হয় না। তখন তাদের দেখে মনে একটাই প্রশ্ন আসে ওদের খাবারগুলো যায় কই?
অনেকসময় তারা নিজের অজান্তেইও এমন কিছু করে যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এর পেছনে রয়েছে কিছু রহস্য। তবে রহস্যগুলো জানার পর আপনি হয়তো অবাকও হতে পারেন। চলুন রহস্যগুলো জেনে নিই। মোটা হওয়ার সহজ উপায় কি ?
★ধীরেসুস্থে খাওয়াঃ
এটি ফিট এবং পাতলা মানুষের মূল মন্ত্র। বেশি চিবিয়ে ধীর গতিতে খায়, এমন লোকের খুব বেশি ওজন বাড়ার প্রবণতা থাকে না। কারণ মস্তিষ্ক তাদের শরীরকে অল্পতেই তৃপ্ত হয়ে যাওয়ার সংকেত দেয়, ফলে আপনি কম খেয়েও পূর্ণতা অনুভব করবেন। এতে আপনার বেশি খাওয়ার ইচ্ছে থাকবে না আর ওজনও বাড়বে না।
★পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমঃ
কর্টিসল হরমোন যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরের জন্য কার্বস এবং ফ্যাট বিপাকে বাঁধা দেয়। ঘুমের অভাবে এই হরমোনগুলো উৎপন্ন হয়, যা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ফিট থাকার জন্য আপনার পর্যাপ্ত ঘুমানো দরকার।
★NEAT
NEAT হচ্ছে অ-অনুশীলন ক্রিয়াকলাপ থার্মোজেনেসিসের (Thermogenesis) একটি সংক্ষিপ্ত রূপ। এটা দিয়ে দেহের কিছু গতিবিধি বুঝায়, যা প্রচলিত ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমনঃ ফোনে কথা বলার সময় চারপাশে হাঁটা, বসে থাকলে আঙুলগুলো ঘোরানো, রান্না করা, স্ট্যান্ডিং ডেস্ক ব্যবহার করা, সিঁড়ি বেয়ে উঠা ইত্যাদি। আমেরিকান কাউন্সিল অফ এক্সারসাইজ অনুসারে, NEAT আপনার বিপাক ক্ষমতাকে ৫০% পর্যন্ত বাড়িয়ে তুলতে পারে! এটি সত্যিই বিশাল শতাংশ!
জেনেটিক্স শরীরের ওজন পরিচালনায় প্রধান ভূমিকা পালন করে, যেহেতু এটি বিপাকীয় হার এবং হরমোন সংবেদনশীলতাকে প্রভাবিত করে। কিছু মানুষের অন্যদের তুলনায় বিপকীয় হার বেশি থাকে। তাই বেশি পরিমাণ খাবার খেলেও তাদের ওজন বাড়ে না।
★হরমোনের ভূমিকা
লেপটিন হরমোন যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। উচ্চতর লেপটিন সংবেদনশীলতাযুক্ত লোকেরা খাওয়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। লেপটিন এর অনুপস্থিতি অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার জন্য দায়ী এবং ওজন বাড়াতে পারে।তাই লেপটিনের ঘাটতিজনিত লোক মোটা হতে পারে।
লেপটিন যা অনাহার হরমোন হিসাবে পরিচিত। এটি এমন একটি প্রোটিন যা মস্তিষ্ককে বলে দেয় যখন শরীরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, প্রয়োজনীয় বিপাকীয় প্রক্রিয়াগুলি চালানোর জন্য ফ্যাট কোষগুলিতে পর্যাপ্ত শক্তি সঞ্চয় থাকে।
যখন লেপটিনের মাত্রা একটি নির্দিষ্ট প্রান্তের এর উপরে থাকে, তখন শরীর স্বাভাবিক হারে শক্তি পোড়ায়, কিন্তু যখন এটি নিচে নেমে যায়, তখন দেহ শক্তি সংরক্ষণ করে এবং ক্ষুধার্ত যন্ত্রণাকে উদ্দীপিত করে। এর ফলে অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া হয় না। পাতলা ব্যক্তিদের মধ্যে উচ্চতর লেপটিন সংবেদনশীলতা বা উৎপাদন বেশি থাকতে পারে, তাই তাদের পক্ষে ওজন হ্রাস করা এবং খাওয়ার লোভ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
বেসাল মেটাবলিক রেট হল বিশ্রামের সময় প্রতি ইউনিট সময়ে দেহের ন্যূনতম যে পরিমাণ ক্যালরি বার্ন হয়। এই শক্তি স্বাভাবিক বিপাকীয় প্রক্রিয়া যেমন শ্বাস নেওয়া, হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং এবং মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপে ব্যয় করা হয়। তাই উচ্চ বেসাল মেটাবলিক রেট বিশিষ্ট লোকেরা বিশ্রামে বেশি ক্যালোরি ব্যয় করতে পারে। ফলে, তারা সহজে মোটা হয় না বা ওজন বাড়ে না। একজনের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রেটটি হ্রাস পায়, তবে পেশী ভরগুলিতে স্পাইক থাকলে রেটটি বেড়ে যায়।
এমজিএটি-২(monoacylglycerol acyltransferase-2)হজমকারী একটি এনজাইম যা দেহে ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ করে। যাদের দেহে এই এনজাইম অনুপস্থিত থাকে,তাদের শরীর চর্বি ব্যবহার করতে অক্ষম । ফলে এটি তাদের পাতলা রাখতে সহায়তা করে। সান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখতে পান যে, যেসব ইঁদুরের দেহে MGAT-2 নেই, তারা যা ইচ্ছে খেতে পারে, এবং চর্বিও বাড়ে না। ফলাফলে আরও দেখান যে, এনজাইমটি ক্ষুদ্রান্ত্রে লিপিড বিপাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
★খাবার নির্বাচনঃ
আপনার ওজন বাড়ার জন্য আপনার গ্রহণকৃত খাদ্যের মান এবং পরিমাণের উপর অনেকটা নির্ভর করে। আপনি যদি প্রচুর পরিমাণে খাবার খান যা পুষ্টিকর এবং কম ক্যালোরিযুক্ত, তবে আপনার ওজন বাড়বে না। উচ্চ চিনি এবং অত্যন্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারে ক্যালোরির উদ্বেগজনক মাত্রা থাকে, যা একজন ব্যক্তির ওজন বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। তাই সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবারই মূল মন্ত্র ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার।
কী ভাবছেন?? যদিও ওজন নিয়ন্ত্রণ করা পুরোপুরি আমাদের হাতে নেই, হরমোন, জেনেটিক্সের এসবের ভুমিকাও আছে। তবে আমরা উপরে উল্লেখিত সহজ উপায়গুলো যেমন ধীরে খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুমানো, সঠিক খাবার নির্বাচন, NEAT ইত্যাদি অনুসরণ করে ওজন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি।
তবে বেশি ওজনের মতো কম ওজনও আপনার শরীরের সুস্থতার লক্ষণ না, এ বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে। আর হ্যাঁ, কমেন্টে আপনার সেই বন্ধুকে মেনশন দিতে ভুলবেন না, যে বেশি খেয়েও মোটা হয় না।