ধরুন কোন একটা কারনে আপনি হাসপাতালে গেছেন। সেখানে আপনি হাসিতে ভরা ১০-১১ বছরের একটি বাচ্চাকে দেখলেন। জানতে পারলেন কোন একটি জটিল অপারেশনের জন্য বাচ্চাটির ভাই হাসপাতালে ভর্তি। তার মায়ের দাবি ভাইয়ের জন্য বাচ্চাটির মন খুব খারাপ। কিন্তু আপনি দেখছেন যে সে তার হাসি থামাতেই পারছেনা। ব্যাপারটি একটু অবাক করা নয় কি? তার মায়ের সাথে কথা বলে আপনি জানতে পারলেন, বাচ্চাটি কোনো কারণ ছাড়াই হাসি ও কান্না করে।
অবাক করা হলেও একটি রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায়। সে রোগের নাম সুডোবলবার এফেক্ট (pseudobulbar affect) বা পিবিএ। এটি একটি নিউরোলজিকাল ডিজঅর্ডার, যাতে আক্রান্ত রোগীরা অকস্মাৎ অনিয়ন্ত্রিত হাসি বা কান্নায় ফেটে পড়ে। শুনে কোন মানসিক রোগের কথা মনে হলেও এটা আসলে সেগুলোর থেকে ভিন্ন, একটি স্নায়বিক রোগ। বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। বলাই বাহুল্য, রোগীদের প্রায়সময়ই একারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
পিবিএ-তে মানুষ কীভাবে আক্রান্ত হয়? মস্তিষ্ক যখন আবেগীয় প্রতিক্রিয়ার উপর অনেকাংশে বা একেবারেই নিয়ন্ত্রণ হারায়, তাকে আমরা পিবিএ বলি। সেরেবেলাম (cerebellum) নামের মস্তিষ্কের একটি অংশ বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে আমাদের কেমন আচরণ করা উচিত তা নিয়ন্ত্রণ করে। এই অঞ্চলে স্নায়ুপথে বিঘ্ন ঘটলে এ সমস্যার দেখা দেয়। আবার সেরোটনিন, নরএপিনেফ্রিন, ডোপামিন আর গ্লুটামেটসহ বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটারও অনেকসময় পিবিএ-র জন্য দায়ী।
পিবিএ রোগীদের মূল উপসর্গ হচ্ছে হাসি বা কান্না। এই হাসি ও কান্না কোনো কারণ ছাড়াই হতে পারে, অর্থাৎ প্রেক্ষাপট অনুযায়ী হতে বা নাও হতে পারে। অধিকাংশ সময়ই তাদের প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক হারে বেশি থাকে, মনের ভেতরে আসলে সে অনুভূতিগুলো অনুভব না করলেও তাদের হাসি বা কান্না যেন থামতেই চায় না। এছাড়া তাদের রাগ বা হতাশার প্রকাশও বেশ তীব্র হতে পারে।
দুঃখজনকভাবে, এ রোগের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা মেলা ভার। সাধারণত বিভিন্ন ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসকেরা রোগীদের প্রতিক্রিয়াগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন।
অনেক রোগীর ক্ষেত্রে পিবিএ সনাক্ত করা ছাড়াই থেকে যায়, অথবা বাইপোলার, ডিপ্রেশনসহ অন্যান্য মানসিক রোগ ভেবে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। পিবিএ রোগীদেরও মানসিক রোগ থাকতে পারে, তবে সেটির পিবিএ-র সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
আশা করি আমরা এ রোগ নিয়ে আরো সচেতন হব, এবং সচেতনতা ছড়াব, যাতে পিবিএ রোগীদের আর ভুল বোঝাবুঝির সম্মুখীন না হতে হয়।
হাসিনাত রিফা/ নিজস্ব প্রতিবেদক