করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার শিকার হয়েছে পুরো বিশ্ব এবং ইতিমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে কোটিতে পৌঁছেছে। এই ভয়াবহ দুর্যোগে যারা দিনরাত এক করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা হলেন ডাক্তার ও নার্স।
চিকিৎসা সরঞ্জাম এর ঘাটতি মোকাবেলায় ডাক্তার ও নার্সরা হাতের নাগালে যা পাচ্ছেন তা দিয়েই নিজেদের পিপিই (PPE– Personal Protective Equipment) তৈরী করে নিচ্ছেন। খেলায় ব্যবহৃত গগলসকে ব্যবহার করছেন মুখের ঢাল হিসেবে, প্লাস্টিকের ময়লার ব্যাগকে পরছেন গাউন হিসেবে এমনকি তারা নিজেদের হুমকির মুখে রেখেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন আক্রান্তদের জন্য।
কিন্তু নিজেদের কাজের শিফট শেষ করে তারা শান্তিতে ঘরে ফিরে যেতে পারছেন না। এই ভয়াবহ দুর্যোগ ডাক্তার ও নার্সদের ব্যক্তিগত জীবনকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। বহু ডাক্তার ও নার্স দিনের পর দিন ঘরে ফিরছেন না এই আশঙ্কায় যে তারা হয়ত করোনা ভাইরাসের বাহক হয়ে ঘরে অবস্থিত সদস্যদের আক্রান্ত করতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া শহরের এক হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি সম্প্রতি তার মা-বাবার ঘর ছেড়ে দিয়েছেন তার মাধ্যমে যেন তার মা-বাবার করোনা না ছড়ায়।
সান ডিয়াগোতে এক হাসপাতালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত এক নার্স বলেন, তাকে প্রতিটি শিফটের পর বাড়িতে প্রবেশের আগে নিজের পোশাকের সাথে অন্তর্বাসও পরিবর্তন করতে হয়। তিনি ব্যবহৃত জামাকাপড়গুলো ধুয়ে নিজে গোসল সেরে নিজের ফোন, দরজার হাতল, চাবি এবং ঘরে ঢোকার পর তিনি যা যা স্পর্শ করেছেন সবকিছু জীবাণুমুক্ত করেন। ঘরে ঢোকা ও বের হওয়াতে তার আগের চেয়ে এখন দ্বিগুণ সময় ব্যয় হয়।
ডাক্তার ও নার্সদের মধ্যে যারা ঘরে ফিরছেন তাদেরও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা এতটাই বেড়ে গেছে যে ডাক্তার ও নার্সরা আক্রান্তদের সেবা করতে গিয়ে অনেক সময় নিজেরাও আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এর জন্য অনেক চিকিসৎক উইল এবং পাওয়ার অফ এটর্নি করে রাখছেন।
কোভিড-১৯ এর প্রভাবে অনেক ডাক্তার ও নার্স স্বাভাবিক জীবন থেকে সরে পড়েছেন। দিনের পর দিন নিজেদের আপনজন , বন্ধুবান্ধব থেকে দূরে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। কষ্টের ব্যাপার তারা কেউই জানেন না যে এভাবে কতদিন চলবে। বাংলাদেশে খুলনা মেডিকেল কলেজে করোনার রোগীর মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর আশংকা থাকায় সার্জারি ওয়ার্ড এর স্যার এবং সহকারীরা আইসোলেটেড হয়েছেন।
একজন চিকিৎসক, যিনি কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা করছেন, তিনি জানালেন, কেউই এখন তার আশেপাশে থাকতে চায় না। তার যদি বাজারেও যাওয়ার দরকার হয় তবুও তিনি যথাসম্ভব না যাওয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি রাস্তায় চলাফেরার সময়ও বেশ দূরত্ব বজায় রাখেন যেন তার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে। এত কষ্ট ও ত্যাগ শিকার করেও ডাক্তার ও নার্সরা রোগীদের সুস্থ করে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
এদিকে এদের সেবা দিয়ে যাওয়া ডাক্তার ও নার্সরাও অনেকেই নিজেদের পরিবারের থেকে দূরে। সুতরাং ডাক্তাররা প্রায়ই রোগীদের একাকীত্ব দূর করতে নানা রকম কথাবার্তা ও হাসিঠাট্টার মাধ্যমে সময় কাটান। এতে করে ডাক্তার ও রোগী দুজনই মন প্রফুল্ল রাখতে পারেন। অনেক হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে।
এদিকে আমাদের দেশে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আরো ৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৮২ জনে। আর গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ৩০ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৩৬ জন।
করোনা যুদ্ধে মৃত প্রথম স্বাস্থ্যকর্মী সেলিম আকন্দ। তিনি গতকাল রাত ২টায় মৃত্যুবরণ করেছেন। জানা গিয়েছে গত মাসের ২৪তারিখ পর্যন্ত ১০দিন নারায়ণগঞ্জ জেনারেলে হসপিটালে প্রবাস ফেরতদের জন্য যে করোনা ইউনিট করা হয়েছিল সেই করোনা ইউনিট ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন সেলিম আকন্দ।
বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকসহ ২৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসকদের মঞ্চ বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন (বিডিএফ)। তাঁদের মধ্যে তিন চিকিৎসক কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
এছাড়াও বিভিন্ন হাসপাতাল ও করোনা চিকিৎসাকেন্দ্র গুলোতে অনেক ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে আছেন।
- রক্তের গ্রুপ ‘A’ হলে করোনা ঝুঁকি বেশি, ‘O’ হলে সবচেয়ে কম – বলছে চীনা গবেষণা
- লবণ মেশানো গরম পানি কি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করে ?-না
- করোনা যেভাবে আপনার শরীরের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে !(ইন্টারেক্টিভ ডিজাইনসহ)
- ফ্যাক্ট চেক: (মিথ্যা) এক টুকরা লেবুতেই ধ্বংস হবে করোনাভাইরাস
- আমেরিকা বা চীনের ষড়যন্ত্র নয়।করোনাভাইরাস এসেছে প্রকৃতি থেকেই-গবেষণা
- করোনাভাইরাস স্মার্টফোনে প্রায় ৯ দিন জীবিত থাকতে পারে – গবেষণা
- করোনা ভ্যাকসিন বাজারজাত করতে বছর সময় লেগে যেতে পারে
- করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা
- হোম কোয়ারেন্টাইনঃ যা যা করতে হবে