৯ ই এপ্রিল, ২০২০ পর্যন্ত নিউইয়র্ক রাজ্যের কোভিড -১৯ আক্রান্তদের মধ্যে ৬০% এর বেশি ছিলেন পুরুষ। এদিকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত, উত্তর ইতালির লম্বার্ডিতে আইসিইউতে ভর্তি হওয়া ৮২% রোগী ছিলেন পুরুষ। কিন্তু কেনো? যদিও এই প্রশ্নের একটি সুনির্দিষ্ট উত্তর এখনও নেই, তাই বেশ কয়েকটি তত্ত্বের সমন্বয়ের ফলাফল কারণটি ব্যাখ্যা করার একটি উপায় হতে পারে।
একটি যুক্তি হলো, পুরুষদের তুলনায় নারীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন, এটি হতে পারে। কারণ,মহিলাদের দুটি X ক্রোমোজোম রয়েছে, আর X ক্রোমোসোমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কিত বেশিরভাগ জিন থাকে। এর ফলে এটির অর্থ এই হতে পারে যে, মহিলাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়াগুলির একটি বিস্তৃত বৈচিত্র্য রয়েছে এবং দেহে ভাইরাল সংক্রমণের মতো অবস্থা সৃষ্টি হলে হলে শীঘ্রই প্রতিরোধব্যবস্থা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।
আরেকটি কারণ এর সাথে যুক্ত হতে পারে যে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের উচ্চ স্তরের এস্ট্রোজেন রয়েছে। কোভিড -১৯ এর মতোই, ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকালে মহিলাদের চেয়ে বেশি পুরুষ ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। এটি কেন হতে পারে তা বোঝার জন্য গবেষকরা একটি গবেষণা চালিয়েছিলেন। যেখানে তারা দেখতে পান যে পুরুষ ইঁদুরের সার্সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে মহিলা ইঁদুরের তুলনায়।
যাইহোক, যখন তারা মহিলা ইঁদুরের এস্ট্রোজেনের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ নিষ্ক্রিয় করেন, তখন তারা দেখতে পান যে মহিলা ইঁদুরের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে গিয়েছে। আচরণগত কারণগুলিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ধূমপান COVID-19 থেকে সৃষ্ট গুরুতর লক্ষণগুলি বিস্তারের দিকে একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ। বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই পুরুষরা নারীদের চেয়ে বেশি ধূমপান করেন।
চীনে,যেখানে ৫৪% পুরুষ তামাক পান করেন, সেখানে কেবল ২.৬% মহিলা তামাক পান করেন। যদিও আমেরিকা ও স্পেনের মতো অন্যান্য দেশে এই পার্থক্যটি ততটা সূক্ষ্ম নাও হতে পারে, তবুও বৈষম্য বিদ্যমান এবং তাই মৃত্যুর হারের পার্থক্যের কিছুটা ব্যাখ্যাও করা যেতে পারে এই হার থেকে।
কোভিড -১৯ পুরুষ এবং মহিলাদের কীভাবে আলাদাভাবে প্রভাবিত করে, বিভিন্ন দেশ থেকে মৃত্যুর পরিসংখ্যান সম্পর্কে আরও তথ্য না জানা পর্যন্ত ভাইরাসটি কেন নারীদের চেয়ে বেশি পুরুষদের আক্রান্ত করছে, সে সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হবে।
তবে এই তথ্যটি জানা হয়ে গেলে, গবেষকরা আশা করছেন যে এটি পৃথক রোগীদের তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ভ্যাকসিন তৈরিতে সহায়তা করতে ব্যবহৃত হতে পারে।
আসফারুর রহমান / নিজস্ব প্রতিবেদক